Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রেটটা একটু কমান || Tarapada Roy

রেটটা একটু কমান || Tarapada Roy

রেটটা একটু কমান

শ্ৰীযুক্ত হরিমোহন চক্রবর্তী একজন ছাপোষা মানুষ। কলকাতায় একটি সরকারি চাকরি করে কোনওরকমে কষ্টেসৃষ্টে সংসার চালান।

হরিমোহনবাবু নিজেকে খুব বুদ্ধিমান লোক বলে কখনওই মনে করেন না। এবং সত্যিই তিনি হয়তো বাজার-চালু চৌকশ লোক যেমন সচরাচর দেখা যায় তার মধ্যে পড়েন না। মোটামুটি ধুতি পাঞ্জাবি পরা উত্তর কলকাতার দুঘরের ফ্ল্যাট বাড়িতে বসবাস করা নিজের হাতে প্রতিদিন শাক কাঁচালঙ্কা তরকারি ছোট মাছ বাজার করা নিতান্ত আটপৌরে মানুষ হরিমোহনবাবু।

এই ক্ষুদ্র কথিকায় আমরা হরিমোহনবাবুর দেশকাল, অফিস-পরিবার, ভূত-ভবিষ্যৎ ইত্যাদির মধ্যে মাথা গলাব না। সেটুকু কাল্পনিক দায়িত্ব পাঠক-পাঠিকার উপরে ন্যস্ত করলাম। তবে আসল গল্পে প্রবেশ করবার আগে খুব বেশি চালাক বা বুদ্ধিমান না হওয়ার জন্যে হরিমোহনবাবুর যে কোনও ক্ষতি হয়নি তার একটা উদাহরণ দেব।

জুন মাসের পর থেকে কলকাতার ময়দানের ফুটবল দর্শকদের ভিড়ে ও অত্যাচারে অফিস ছুটির পর নিয়মিত অফিস যাত্রীদের ট্রামে-বাসে চড়ে ঘরে ফেরা অসম্ভব হয়ে ওঠে। হরিমোহনবাবু মোটেই ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি করে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন না। এদিকে ছুটির পর অফিসে বসে থাকাও তাঁর মোটেই পছন্দ নয়। তিনি একটা বুদ্ধি বার করেছেন–রেড রোড আর মেয়ো রোডের মোড়ে যেখানে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তিটা বর্তমানে আছে, সেই মূর্তির পাদদেশে একটা রেলিংয়ে হেলান দিয়ে বিশ্রাম করেন, কখনও পঞ্চাশ পয়সার বাদাম বা ঝালমুড়ি কিনে খান।

সেদিনও ওই রেলিংয়ে হেলান দিয়ে বসেছিলেন। দুপুরে অফিসে খুব ঝকমারি গেছে, খুব ক্লান্ত ছিলেন, ময়দানের স্নিগ্ধ বাতাসে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, ঘুম ভাঙল হঠাৎ একটা লোকের ঝাঁকুনিতে।

ধড়মড় করে উঠে হরিমোহনবাবু দেখেন যে তাঁর সামনে উঁচু হয়ে বসে একটা লোক। লোকটার পরণে লাল প্যান্ট, সবুজ গেঞ্জি, গলায় হলুদ রুমাল গিট দিয়ে বাঁধা, হাতে একটা পিস্তল, মুখে হিন্দি না উর্দু কী একটা ভাষা।

ভাষার দরকার ছিল না। অন্য যে কোনও ব্যক্তি এক মুহূর্তে ধরতে পারবে এই পিস্তলধারী একজন ডাকাত, চলতি ভাষায় ছিনতাইকারী। সে হরিমোহনবাবুকে ঘড়ি আংটি পকেটের মানিব্যাগ– ইত্যাদি দিয়ে দেবার জন্যে ভয় দেখাচ্ছে।

বলা বাহুল্য, হরিমোহনবাবু ভিন্ন অন্য যে কোনও ব্যক্তি হলে প্রাণভয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘড়ি আংটি, টাকা লোকটির হাতে তুলে দিয়ে বড় রাস্তার দিকে চোঁ চোঁ দৌড় দিত।

কিন্তু আমরা আগেই বলেছি, হরিমোহনবাবু তেমন বুদ্ধিমান লোক নন। ঘুম-চোখে তার মনে হল, লোকটির চেষ্টা বোধহয় তার কাছে রিভলভারটি বিক্রি করার, তাই চোখের সামনে ওই অস্ত্রটা নাচাচ্ছে। হরিমোহনবাবুর ঘুণাক্ষরেও মনে এল না যে, লোকটা ভয় দেখিয়ে ছিনতাই করার জন্যে রিভলভারটা তাক করেছে।

ছিনতাইকারী যত রিভলভার নাচায় হরিমোহনবাবু তত বলেন, হাম গভরমেন্ট সারভেন্ট হ্যায়। বে-আইনি আগ্নেয়াস্ত্র হামকো নেহি লাগে গা।

পিস্তলধারীর রিভলভার নাচাতে নাচাতে হাতে ব্যথা হয়ে গেল, কিন্তু হরিমোহনবাবু যে ভাবে তাঁর হরি ঘোষ স্ট্রিটের একতলার ফ্ল্যাটের জানলা দিয়ে হাত নেড়ে দৈনিক অসংখ্য ফেরিওলাকে বিদায় করেন নেহি লাগে গা, নেহি লাগে গা বলে, ঠিক সেই একই ভঙ্গিতে উদ্যত পিস্তলের ছয় ইঞ্চি দূরে হাত তুলে মানা করতে লাগলেন, নেহি লাগে গাবলে। মিনিট দশেক পরে হতভম্ব, ক্লান্ত পিস্তলধারী দূর শালা বলে রণে ভঙ্গ দিল, হরিমোহনবাবু ধীরেসুস্থে উঠে শ্যামবাজারের ট্রামের দিকে এগোলেন, একবার শুধু ভাবলেন, কী দিনকাল পড়েছে রে বাবা! জিনিস না কিনলে শালা বলে গালাগাল দিচ্ছে।

হরিমোহন চক্রবর্তী মশায়কে নিয়ে আমাদের গল্প, সে কিন্তু এখানে নয়, এর থেকে আরেকটু পরে–ঠিকঠাক বলা উচিত চার মাস পরে।

চক্রবর্তী মশায়ের ছোট বোন থাকেন রাঁচিতে। পাগলা গারদে নয়, সেখানে তাঁর বিয়ে হয়েছে। কয়লা কোম্পানির এক এঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে। হরিমোহনবাবুই বোনটির বিয়ে দিয়েছেন, তার ছেলের অন্নপ্রাশন। মামা হিসেবে হরিমোহনবাবুর উপস্থিতি আবশ্যক, কারণ মুখেভাত তাঁকেই করাতে হবে।

কলকাতা-রাঁচির দূরপাল্লার সরকারি বাসে একটা টিকিট কেটে হরিমোহনবাবু অন্নপ্রাশনের ঠিক দুদিন আগে উঠে বসলেন। চমৎকার যাচ্ছিল বাসটা। হরিমোহনবাবু সামনের দিকে সিট পেয়েছিলেন, বিশেষ ঝাঁকুনি লাগছিল না। সিটে গা এলিয়ে দিয়ে চমৎকার আরামেই যাচ্ছিলেন তিনি।

তখন অনেক রাত। বাংলা-বিহার সীমান্ত এলাকা প্রায় আধ ঘন্টা আগে পেরিয়ে গেছে বাস। আধা জংলি এলাকা দিয়ে দ্রুতগতি ছুটে চলেছে সরকারি দূরপাল্লা। আধো-জাগরণ, আধো-তন্দ্রার মধ্যে কিছুটা চেনা স্বপ্নের মতো কী যেন মনে হল হরিমোহনবাবুর।

সেই লাল প্যান্ট, সবুজ গেঞ্জি, হলুদ রুমাল, হাতে পিস্তল–চার মাস আগে ময়দানে দেখা। লোকটির বাসের মধ্যখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে, আর এদিকে ওদিকে সিটে পাঁচ-সাতজন ব্যক্তি উঠে এসেছে, তাদের হাতেও পিস্তল অথবা ছোরা। এতক্ষণ এরা যাত্রী সেজে সকলের সঙ্গে বসেছিল।

এবার অবশ্য অন্য সকলের সঙ্গে হরিমোহনবাবুও বুঝতে পারলেন, এরা সব ডাকাত। তবু তিনি একটু ভরসা পেলেন ময়দানের সেই চেনা ছিনতাইকারীকে দেখে।

ইতিমধ্যে বাসের ভিতরে পুরোদস্তুর ছিনতাই শুরু হয়ে গেছে। সবুজ গেঞ্জি, লাল প্যান্ট ময়দানি গুণ্ডা, সেই দলের নেতা, সে সামনাসামনি হরিমোহনবাবুর সিটের পাশে এসে দাঁড়াল। সে-ই এখন নির্দেশ দিচ্ছে।

একজন ডাকাত পিছনের সিট থেকে শুরু করেছে, আরেকজন সামনের সিট থেকে। তাদের লক্ষ হল শুধু ঘড়ি টাকা আর সোনা। এ ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে ভার বাড়াতে কে চায়?

কিন্তু দূরপাল্লার বাসে সোনা অতি মহার্ঘ। কেউ, এমনকী নতুন বউ পর্যন্ত সোনা গায়ে এসব ডাকাতির বাসে ওঠে না।

হরিমোহনবাবুর স্ত্রীও আসার সময়ে বুদ্ধি করে বাঁ হাতের মধ্যমা থেকে বিয়ের আংটি খুলে রেখেছেন। হরিমোহনবাবুর সঙ্গে একটি পুরনো ঘড়ি, পকেটে সাতাশি টাকা আর ভাগ্নের জন্যে নো রুপোর থালা-চামচ। সব বাসের ছাদে সুটকেসের মধ্যে রয়েছে।

ইতিমধ্যে যে ঘটনাবলি বাসের মধ্যে শুরু হয়েছে সে শুধু রোমহর্ষক নয়, চিন্তা উদ্দীপক। সামনের এবং পিছনের সিটের দিক থেকে দুই ডাকাত ছিনতাই করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে। আর সেই ময়দানি পিস্তলধারী, যে দলের সর্দার, সে প্রকৃতই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দুই ভাবে। এক, ঘড়ির দিক দিয়ে দুই টাকার দিক দিয়ে।

টাকা আর ঘড়ির কথাটা একসঙ্গেই বলি। সিট নম্বর ধরে ধরে সামনের এবং পিছনের দিক থেকে ছিনতাইকারীরা একেকজন যাত্রীর কাছে যাচ্ছে এবং যাত্রীদের হাতে ঘড়ি থাকলে সময় কত জানতে চাইছে। সময়টা মোটা দাগে বললে চলবে না, দুটো কিংবা সোয়া দুটো এরকম বললে সঙ্গে সঙ্গে ছোরার বাঁট দিয়ে মাথায় ঠুকে দিচ্ছে হতভাগ্য যাত্রীর, চাপা গলায় হিস হিস করে উঠছে, কী টাইম বলো। ঠিক ঠাইম মানে দুটো তেরো মিনিট বারো সেকেণ্ড অথবা দুটো সাত মিনিট পঞ্চাশ সেকেণ্ড–সে যাই হোক, একেবারে কাঁটায় কাঁটায় বলতে হবে।

সময় জানার সঙ্গে সঙ্গে ছিনতাইকারীটি রিলে করে দিচ্ছে ঠিক সময়টা সেই ময়দানি সর্দারের কাছে, যে খাতা পেনসিল নিয়ে হরিমোহনবাবুর সিটের পাশে বাসের রড়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার পরে কত টাকা পাওয়া গেল যাত্রীটির কাছ থেকে সেটাও জানানো হচ্ছে তাকে।

ব্যাপারটা এই রকম, সাত নম্বর সিট, দুটো বেজে চৌদ্দ মিনিট তিরিশ সেকেন্ড, সাতাশ টাকা, সোনা নেই। সিটের পাশের ডাকাত চেঁচিয়ে জানাল, সর্দার নিজের হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা প্রথমে দেখল। তারপর বলল, ঘড়ি নেহি লাগেগা। কিন্তু টাকার ব্যাপারে কিছু না বলে টাকার অঙ্কটা সিট নম্বরের পাশে নোট করে নিল।

হরিমোহনবাবু একটু অবাক হয়ে গেলেন ঘড়ির ব্যাপারটা দেখে। টাইম দেখে সর্দার কোনও কোনও ঘড়ি ছেড়ে দিচ্ছে, আবার কোনও ঘড়ি নিয়ে নিতে বলছে।

সরল প্রকৃতির হরিমোহনবাবু স্থান-কাল-পাত্র বিস্মৃত হয়ে নিতান্ত কৌতূহলবশত ছিনতাই সর্দারকে জিজ্ঞাসা করিলেন, সব ঘড়ি আপ কেন নেহি লেগা?

লাল প্যান্ট সবুজ গেঞ্জি হলুদ রুমাল সর্দার একবার হিমশীতল দৃষ্টিতে হরিমোহনবাবুর দিকে তাকাল, তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কী ভেবে বুঝিয়ে বলল যে পুরনো ঘড়ি ভাল না হলে আজকাল কেউ কিনতে চায় না। নতুন ইলেকট্রনিক ঘড়ি পঁচিশ-ত্রিশ টাকাতেই পাওয়া যাচ্ছে। তাই খুব ভাল না হলে পুরনো ঘড়ি নিয়ে বোঝা বাড়িয়ে লাভ নেই, এর খদ্দের পাওয়া যাবে না। টাইম মিলিয়ে যো ঘড়ি রাইট টাইম দেতা হ্যায় শুধু সেই ঘড়িগুলিই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।

হরিমোহনবাবু দ্রুত সর্দারের হাতের ঘড়ির সঙ্গে নিজের ঘড়ি মিলিয়ে দেখলেন, প্রায় কাঁটায় কাঁটায় মিল রয়েছে। সর্বনাশ! কিন্তু ঘড়িটা তো একটু সাহস করলেই রক্ষা করা যায়। একটু সাহস করলেন হরিমোহনবাবু। সর্দারটি যেই অন্য এক যাত্রীর অর্থের পরিমাণ নোট করছে, হরিমোহনবাবু ঘড়ির চাবি তুলে ঘড়িটাকে আধ ঘন্টা ফাস্ট করে দিলেন। বুকটা একটু দুরু দুরু করেছিল, কিন্তু সর্দার কিংবা অন্য ডাকাতেরা কেউ দেখতে পায়নি।

ফলে সামনের দিকের লুট আহরণকারীটি যখন হরিমোহনবাবুর সিটে এসে পৌঁছল তখন শুধু সাতাশি টাকার উপর দিয়ে গেল। রাঁচিতে বোনের কাছ থেকে ফেরার ভাড়াটা নিতে হবে এই একটু অস্বস্তি হলেও, তিনি অল্পের উপর দিয়ে হল এই ভেবে মনে মনে ভগবানকে ধন্যবাদ জানালেন।

কিন্তু এর পরে আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হরিমোহনবাবু এবং বাসের অন্যান্য যাত্রীদের জন্যে অপেক্ষা করছিল।

টাকাপয়সা ঘড়ি সব সংগ্রহ হয়ে গেলে সর্দার খুব অভিনিবেশ সহকারে একটি লম্বা যোগ করল, সাতাশশো তেত্রিশ টাকা আর সঠিক টাইমওলা ঘড়ি মিলেছে মাত্র দুটি।

হরিমোহনবাবু দেখালেন সেই ঘড়ি দুটির পাশে টু-ইনটু ফিফটি অর্থাৎ একশো টাকা হিসেব ধরা হল। একেবারে পাকা হিসেব 2×50=100 এইভাবে লেখা। সুতরাং যোগ দিয়ে মোট আটাশশো তেত্রিশ। টাকার পরিমাণ দেখে প্রচুর ভ্রুকুঞ্চন এবং জিব দিয়ে চুক চুক করল সর্দার এবং তার সাকরেদরা। তারপর কিছুক্ষণ থম মেরে থেকে সর্দার তার সাকরেদদের বলল, টাকা, ঘড়ি যার যার তাদের ফেরত দিয়ে দাও।

ঘটনার এই বিবর্তনে হরিমোহনবাবু সমেত সবাই অবাক। সর্দার চেঁচিয়ে বলল, সামনের পুলিশ ফাঁড়িতে বাসে দারোগা উঠবে। তাকে সাঁচ বাত (সত্যি কথা) বলবেন, বলবেন ডাকাতি হয়নি।

একটু দূরে রাস্তার পাশে একটা ছোট শহরের রাস্তায় আলো জ্বলছে, পাশেই পুলিশ ফাঁড়ি। ডাকাতেরা ফাঁড়ি আসার অল্প আগে বাস থামিয়ে নেমে গেল।

নামার আগে হরিমোহনবাবু সেই লাল প্যান্ট সর্দারকে জিজ্ঞাসা করে জানতে চেয়েছিলেন তাদের এত বদান্যতার বা উদারতার কারণ কী।

লাল প্যান্ট, সবুজ গেঞ্জি, হলুদ রুমাল ডাকাত সর্দার বাস থেকে নামতে নামতে যা বলল তার সারমর্ম হল এই যে, প্রত্যেক বাস ডাকাতিতে দারোগাবাবুকে দিতে হয় তিনহাজার টাকা। সুতরাং আটাশশো তেত্রিশ টাকা নিয়ে তিন হাজার টাকা দিলে একশো সাতষট্টি টাকা ক্ষতি। লস করার চেয়ে ডাকাতি ক্যানসেল করলে লাভ, তাই এ ডাকাতিটা ক্যানসেল করে দিল।

ঠিক ফাঁড়ির সামনে বাসটা দাঁড়াল। স্থূলোদর, শ্লথগতি দারোগাবাবু বাসে উঠলেন, তিনি কিছু প্রশ্ন করার আগেই তাঁকে হরিমোহনবাবু জানিয়ে দিলেন, হা ডাকাত পড়েছিল বাসে, ডাকাতি হয়েছিল কিন্তু আপনার বরাদ্দ তিন হাজার টাকা জোগাড় হয়নি–ফলে ডাকাতেরা ডাকাতি ক্যানসেল করে সবার টাকা ফেরত দিয়ে নেমে গেছে।

এই সংবাদ শুনে বিরস বদনে দারোগা সাহেব নেমে গেলেন। কখনও তত-বুদ্ধিমান-নন শ্রীযুক্ত হরিমোহন চক্রবর্তী সদ্য চলন্ত বাসের জানলা দিয়ে দারোগাবাবুর দিকে তাকিয়ে পরামর্শ দিলেন, দিনকাল ভাল যাচ্ছে না, রেটটা একটু কমান!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress