Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » গোল || Sanjib Chattopadhyay

গোল || Sanjib Chattopadhyay

গোল

আমাদের স্কুল টিমের সঙ্গে যোগেশ্বরী বিদ্যামন্দির টিমের ফাইনাল খেলা। হেডমাস্টার মশাই টিফিনের সময় আমাদের ডাকলেন। আমাদের টিমের ক্যাপটেন সুশান্ত। সুশান্তর ধারণা, সে একদিন পেলে হবে। হবেই হবে। ডান পায়ে বাঁ পায়ে বল নাচানাচি করে। মাথার বল পায়ে। নামায়, পায়ের বল মাথায় তোলে। অসীম ক্ষমতা। আমাদের তাক লেগে যায়।

হেডমাস্টারমশাই বললেন, ‘শোনো, সুশান্ত। আমাদের স্কুলের পরীক্ষার রেজাল্ট খুবই ভালো। সবক’টা ফার্স্ট ডিভিশান। একটা সেকেন্ড। সেটাও ফার্স্ট হত যদি না পক্স হত। এইবার আমি চাই, ডিসট্রিক্ট ট্রফিটাও যেন আমাদের হাতে আসে। প্লে নয় পেলে হতে হবে! ট্রফিটা পেলে তোমাকে আমি পেলের সম্মান দেব। কি পারবে?’

সুশান্ত বুক ফুলিয়ে, ‘পারব স্যার। গুনে গুনে তিনটে গোল দোবো। থ্রি নিল। প্রকাশকে সেন্টার ফরোয়ার্ডে রাখব। ওর টেরিফিক শটের জোর। গোলকিপার সমেত বল জালে জড়িয়ে দোব। আপনি ধরে রাখুন ট্রফি আমাদের।’

সুশান্ত বীরের মতো হাসল।

হেডমাস্টারমশাই বললেন, ‘এই তো চাই! আমাদের দেশে এইরকম ছেলেরই প্রয়োজন। এদের নামই তো ইতিহাসে লেখা থাকবে। কলকাতার পার্কে মূর্তি হয়ে বসবে। যাও, তোমরা আর দেরি কোরো না। প্র্যাকটিসে চলে যাও।’

স্কুলের মাঠে বল পড়ল। প্র্যাকটিস! সুশান্ত এক জায়গায় আমাদের জড়ো করে বলল, ‘খেলার। দুটো ধরন, একটা ল্যাটিন আমেরিকান, আর একটা ইউরোপিয়ান। আমি একটা নতুন ধরন বের করতে চাই।’

আমরা সবাই উত্তেজিত হয়ে বললুম, ‘কী সেটা?’

‘সেভাবে কেউ কখনও খেলেনি। একেবারে নতুন স্টাইল। ঘুরতে ঘুরতে উপরে ওঠা। যাকে বলে

চরকি স্টাইল। বল নিয়ে গোল হয়ে ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে যাব বিপক্ষের গোলের দিকে। ‘সেটা কী ভাবে হবে!’

‘হওয়াতে হবে। শিখতে হবে। প্রকাশকে সেইটাই আমি আজ শেখাব। খেলার জগতে আমি একটা বিপ্লব এনে দোব। এই টেকনিকটার নাম হবে সুশান্ত টেকনিক। মারাদোনা আমার গলায় মালা পরাবেন। পেলে এসে হ্যান্ডশেক করবেন। ফিফা আমাকে ডেকে পাঠাবে।’

শুরু হল প্র্যাকটিস। সুশান্ত পাঁই পাঁই করে বল নিয়ে ঘুরছে। গোল করে ঘুরতে ঘুরতে গোল দেবে। শুরুর আগেই বলে দিয়েছে, ‘গোল কথাটার মধ্যেই গোল আছে। এটা কেউ এতদিন বোঝেনি। গোল গোল করেই গোল।’

প্রকাশ গোলের দিক থেকে গোল করে চক্কর মারতে মারতে কোনওরকমে মাঝমাঠ অবধি এসেই মাথা ঘুরে উলটে পড়ে গেল। তোল তোল, টেনে তোল। সুশান্ত গবেষণায় বসল। মাথা ঘোরার কী হবে। ঠিক আছে, বল ছাড়া তোরা সবাই মাঝমাঠে গোল হয়ে বনবন করে ঘোর। মাথা ঘুরে গেলেই ঘাসের ওপর শুয়ে পড়। সে বেশ মজা। গোলকিপার সঞ্জয় ছাড়া আমরা সবাই চরকিপাক।

ফাইনাল খেলার দিন এসে গেল। হেডমাস্টারমশাই নিজের পয়সায় দশ প্যাকেট চিউইংগাম কিনে এনেছেন। প্রথমে আমাদের একটা করে দিলেন। গোলকিপার সঞ্জয়কে বললেন, ‘তোমার

মন্ত্র, ডু অর ডাই। গোলে বল ঢুকতে দেবে না। করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে। মরে যাবে সেও ভালো, সে ও ভালো তবু গোল খাবে না।’

সুশান্তকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘মাই বয়! আজকের দিন তোমার দিন। সারা দেশ তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বিজয়মাল্য যেন তোমার গলায় দোলে। সব ঠিক আছে তো!’

সুশান্ত বলল, ‘স্যার চরকিপাক খাইয়ে দোব। সব তালগোল পাকিয়ে দোব স্যার। আজ এই মাঠে ইতিহাস তৈরি হবে।’

গেম টিচার অধীরবাবু বললেন, ‘আমরা ইতিহাস চাই না, ভূগোল চাই। গোল, গোল।’

সুশান্তর দাপট দেখে বিপক্ষের দল মাঠে জড়সড়। মনে হচ্ছে, এখেলার আগেই সুশান্ত গেমটা জিতে নিয়েছে। ক্যাপটেন এইরকম হওয়া উচিত। মাঠের চারপাশ লোকে লোকারণ্য। আমগাছের ডালেও কিছু ছেলে ঝুলছে। চিৎকার চেঁচামেচি। এমন সময় ফুরুর করে বাঁশি বাজল। খেলা শুরু। বলে শট মারার ঢিস শব্দ।

আমাদের গোলের কাছে ঝটাপটি। কোনওক্রমে বিপদ কেটে গেল। সুশান্ত গোলকিপার সঞ্জয়কে। শিখিয়েছিল, গোলের কাছে জটলা দেখলেই তিড়িং-বিড়িং করে লাফাবি যাতে বিপক্ষ বিভ্রান্ত হয়ে গোলের বাইরে বল মেরে দেয়। তাই হল। গোল কিক। বল মাঝমাঠে।

এইবার প্রকাশের নয়া টেকনিক। লাটুর মতো পায়ে বল নিয়ে চরকিপাক। ঘুরছে কিন্তু ওপর দিকে উঠতে পারছে না। একই জায়গায় বাঁই বাঁই ঘুরছে। দর্শকদের মহা উল্লাস। এমন খেলা তারা জীবনে দেখেনি।

সুশান্ত চিৎকার করে বলল, ‘স্ট্রাইক। দুর্গ ভেদ করো।’

সারা মাঠে আমাদের সমর্থকদের চিৎকার, ‘স্ট্রাইক, স্ট্রাইক, প্রকাশ, প্রকাশ স্ট্রাইক স্ট্রাইক।’

প্রকাশ যেন পাগলা ষাঁড়। একপাক ঘুরেই ডান পায়ে বেদম এক শট। গোলার মতো বল ঢুকে। গেল আমাদেরই গোলে। ওয়ার্ল্ড কাপের খেলোয়াড়দের মতো দুহাত মাথার ওপর তুলে। নানারকম অঙ্গভঙ্গি করতে করতে প্রকাশ বিপক্ষ দলের ঘাড়ে গিয়ে তাদের ক্যাপটেনকে জড়িয়ে ধরে কোলে উঠে পড়ল।

কোনও হুঁশ নেই। গোল একটা দিয়েছে বটে, কিন্তু সেটা সেমসাইড। বিপক্ষের ক্যাপটেন অঞ্জনের কোলে উঠে হুশ হল, এ তো সুশান্ত নয়! এটা তো বিপক্ষের দিক।

হেডমাস্টারমশাই আর গেমটিচার দুজনেই মাঠে নেমে এলেন। একজন ধরলেন ডান কান আর একজন বাঁ কান। টানতে টানতে মাঠের বাইরে।

আমাদের গোলে আমরাই পরাজিত হয়ে যোগেশ্বরীর হাতে ট্রফিটা তুলে দিলাম।

মাঠের বাইরে এসে প্রকাশ কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘কী করব স্যার, গোল হয়ে ঘুরলে দিক বোঝা যায়? গোলের তো কোনও দিক নেই।’ অঙ্কের স্যার বললেন, ‘গণিত তো সেই কথাই বলে। গোল ইজ এ গোল।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *