মেয়েটার বয়েস বছর চোদ্দ-পনেরো
মেয়েটার বয়েস বছর চোদ্দ-পনেরোর কম নয়, কিন্তু স্কার্ট আর আঁটো জ্যাকেটের কারসাজিতে অধিকারী তাকে দশে নামিয়েছে।
তবু যেটুকু সন্দেহ আসতে পারত, সেটুকুও মেরে নেওয়া হয়েছে কোমরে ওই চওড়া জরির কোমরবন্ধটাকে কষে বেঁধে দিয়ে। ওটার জন্যেই বিশেষ করে বালিকা বালিকা লাগে। তা ছাড়া ভঙ্গিটাও লিলির নিতান্তই বালিকাসুলভ। যেন মনটাকেও সে ওই খাটো স্কার্ট, আঁটো জ্যাকেট আর চওড়া কোমরবন্ধের দেওয়ালের মধ্যে আটকে রেখেছে। পুরনো কালের চীনের মেয়েদের লোহার জুতোয় পা আটকে রাখার মতো।
অধিকারীকে সবাই অধিকারীমশাই বললেও ভবানী অপেরার অধিকারী কুঞ্জলাল দাস সেই সম্বোধনটাকে খুব না-পছন্দ করে। বলে, মিস্টার দাস বললে কি হয়? কি হয়?
হাঁ, মিস্টার শব্দটা বিশেষ পছন্দ কুঞ্জলালের। কারণ নিজেকে সে প্রোপ্ৰাইটার বলে থাকে। তা বলবার অধিকার তার নেই তা নয়।
প্রোপ্ৰাইটার দাসের ভবানী অপেরা শুধু মফস্বর শহরেই নাম কিনে বেড়ায় না, কলকাতার যাত্ৰা প্ৰতিযোগিতার উৎসবে এসেও নাটক দেখিয়ে মেডেল নিয়ে যায়।
পৌরাণিক পালার দিকে মন নেই কুঞ্জর, সামাজিক নাটক নামায় সে। সমাজের সর্ববিধ অনাচার কদাচারকে লোকের সামনে তুলে ধরে তার ওপর চাবুক মেরে দেখাতে চায় কুঞ্জ, কোথায় তলিয়ে যাচ্ছে সমাজ, কী পরিমাণ দুর্নীতিতে ড়ুবে যাচ্ছে দেশ?
তাই কুঞ্জর পালাগুলির নাম সাধারণত এই ধরনের হয়—ভণ্ডামীর মুখোস, একেই কি বলে দেশসেবা? দুঃখীর রক্ত, নিরন্নের কান্না, চাবুক, কষাঘাত ইত্যাদি।
কুঞ্জ অধিকারী যে কতবড়ো বুকের-পাটাওয়ালা লোক একথা টের পাওয়া যায়। ওই সব পালা দেখলে। রাজা-উজির থেকে শুরু করে, দারোগা, দেশ নেতা, কালোবাজারী বা অসতী নারী, সব্বাইকে এক তরোয়ালে কাটে কুঞ্জ, এক চাবুকে দাগে। কাউকে রেয়াত করে না।
শোনা যায় কোথায় নাকি কোন বারোয়ারি পুজের মণ্ডপে একখানা পালা নামিয়েছিল কুঞ্জ, যার নাম ছিল দুঃশাসন এবং যার নায়ক ছিল এক পুলিশ ইনস্পেক্টর। সাদা বাংলায় দারোগাবাবু।
বলা বাহুল্য সে নাটকে দারোগাবাবুদের প্রীত হবার মতো উপকরণ ছিল না। আর ভাগ্যের খেলায় সেখানে দর্শকের আসনে এক দারোগাবাবু উপস্থিত ছিলেন। খুব সম্ভব তিনি ওই উদ্যোক্তাদের কোনো মাননীয় আত্মীয়, আমন্ত্রিত হয়ে এসেছেন।
দুঃশাসন নামটি শুনেই তিনি মহাভারতের পৃষ্ঠায় পৌঁছে গিয়েছিলেন, এবং কুরুক্ষেত্ৰ যুদ্ধ ও ভয়ঙ্কর একটি রক্তপান উৎসব-এর অপেক্ষায় স্পন্দিত হচ্ছিলেন। কিন্তু অভিনয় শুরু হতেই কেমন যেন চাঞ্চল্য অনুভব করতে থাকেন দারোগাবাবু, তারপর মাঝপথে হঠাৎ রে রে করে তেড়ে ওঠেন। আর সেই রে রে করার প্রতিক্রিয়ায় কুরুক্ষেত্র কাণ্ডের অভাব প্রায় পূর্ণ হয়।
দারোগাবাবুর চিৎকার, সমবেত জনগণের প্রবল প্রতিবাদ, আর শিশুকুলের কান্না, সব মিলিয়ে সে একেবারে কেলেঙ্কারি চরম। দারোগাবাবু দাপিয়ে বেড়ান—আমি ওই অধিকারী শা-কে অ্যারেস্ট করব, ওকে আমি ঘানি টানাব, ওকে ওর বাবার বিয়ে দেখাব, ওর যাত্রাপালা করে বেড়ানো জন্মের শোধ ঘোচাবা, ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ একজন ক্ষমতামদমত্ত ব্যক্তির আগুন-জ্বলে-ওঠা মাথায় যা যা বলা সম্ভব সবই বলে চলেন। ওদিকে নাটক পণ্ড হওয়ায় অগণিত অসহিষ্ণু দর্শক হই-চই করতে থাকে।
কিন্তু সহসা এক নাটকীয় আবির্ভাব ঘটে।
বুক ভর্তি মেডেলে সুসজ্জিত গৰ্বদৃপ্ত প্রোপ্রাইটার কুঞ্জ দাস এসে কথার ভণিতায় একেবারে ঠাণ্ডা করে দেয়।–
কুঞ্জ দাস এসে দাঁড়ায়, তার বুকের উপরকার মেডেলগুলো আলোয় ঝকমকিয়ে ওঠে, আর পিছন থেকে একটা লোক সেই আদ্যিকালের গ্রামোফোনের চোঙ একটা বাড়িয়ে ধরে কুঞ্জর মুখের কাছে।
কুঞ্জ তার ভিতর থেকে আবেদন জানায়, গরিবের মা-বাপ দারোগাসাহেব, অ্যারেস্টই করুন, আর ফাঁসিই দিন, কোনো আপত্তি নেই, দয়া করে শুধু আপনার সামনে একখানা প্রশ্ন নিবেদন করতে দিন।?
হঠাৎ এই বাজখাঁই নিবেদনে গোলমালটা উদ্দামত হারায়, কৌতূহলী জনতা কান খাড়া করে সেই প্রশ্নখানি-র আশায়। দারোগাবাবুও হঠাৎ একটু থিতিয়ে যান। আর হিজ মাস্টারস ভয়েস-এর চোঙ বলে চলে, অপরাধটা আমার কোথায় বলতে পারেন আজ্ঞে? মানছি। আমার নাটকে একজন পাজী বদমাস ঘুষখোর দারোগার চরিত্র-চিত্রণ করা হয়েছে। যে লোকটা হাতে-পাওয়া ক্ষমতাবলে যত পারছে বেআইনী কাজের সাহায্য করে তার বিনিময়ে মোটা মোটা টাকা উৎকোচ নিচ্ছে। আছে আমার নাটকে এমন চরিত্র। কিন্তু বাবুমশায়, বলুন। একবার, সেই লোক কি আপনি? আপনার চরিত্র কি এত নীচ? বলুন? বলুন, আমার দুঃশাসনকে দেখে কি আপনার নিজের প্রতিবিম্ব বলে মনে হচ্ছে? তা যদি হয়, আমাকে এখুনি গুলি করুন, মানীলোকের মানের ক্ষতি করেছি, এই ভেবে কান মূলতে মূলতে মরব।
কিন্তু বাবুমশায়, আমার প্রশ্নখানার জবাব দিয়ে তবে গুলি করতে হবে। বলুন নাটকের এই চরিত্র আপনকার প্রতিবিম্ব বলে মনে হচ্ছে?
বক্তব্য এবং বক্তব্যের ভাষায় দর্শকদের মধ্যে থেকে একটা চাপা হাসির গুঞ্জন ওঠে। আর দারোগাবাবুর মুখ লাল হয়ে ওঠে?
কিন্তু হঠাৎ পরিস্থিতির পরিবর্তনে ডাকহাঁকটা সামলাতে হয় তাঁকে। ক্রুদ্ধ কণ্ঠে গাভীর্য এনে বলেন তিনি, আমার কথা হচ্ছে না, কিন্তু এভাবে একজন পুলিশ ইনস্পেক্টরের গায়ে কালি ছিটানো মানেই পুলিশ জাতটাকে অপমান করা। স্বজাতি প্রেমবিগলিত দারোগাবাবু কণ্ঠস্বর উচ্চগ্রামে তোলেন। বলেন, সেই অবমাননার অপরাধে তোমার নামে চার্জ আনব আমি।
তথাপি কুঞ্জ দাস ভয়ে ভীত হয় না।
কুঞ্জ দাস আবার চোঙের পিছনে মুখ রাখে, আর চোঙের মুখে খানখনে গলায় বলে চলে, চার্জ আপনি আমার নামে একটা কেন, একশোটা আনতে পারেন। বাবুমশায়, আপনিই যখন ইনচার্জ, চার্জের ভঁড়ারটাই তো আপনকার হাতে। কিন্তু তাহলেও আবার একখানা প্রশ্ন রাখতে হয়। বাবুমশায়। প্রশ্নখানা হচ্ছে, অধম কুঞ্জ দাসকে চার্জে ফেলার আগে এ প্রমাণটা দিতে পারবেন কি সমগগ্রে পুলিশ বিভাগে কোথাও ঘুষ নেওয়া নেই, চোর বদমাসদের সাহায্য করা নেই, গাঁটকােটা, পকেটমারদের সহায়তা করা নেই?…জবাবটা স্যর দিতেই হবে।.তারপর আমি আছি, আপনি আছেন, আর আপনার চার্জ আছে।
দারোগাবাবুর মাথার মধ্যে সমুদ্র-রোল। দারোগাবাবুর কানের মধ্যে হাসির কল-কল্লোল। এই ভণিতা, এই বাকচাতুরী, এর সঙ্গে লড়তে পারবেন। তিনি? পারতেন, শুধু দুজনে মুখোমুখি হলে, মাথার ঘিলু বার করে দিতেন অধিকারীর। কিন্তু এখানে সহস্ৰ লোক। আর অন্তরলোকে অনুভব করতে পারেন, সেই সহস্রের ঊনসহস্রই অধিকারীর পক্ষে।
কিন্তু তাই বলে তো চুপ করে থাকা চলে না? দারোগাবাবু তাই যথাসম্ভব গলা চড়িয়ে বলে ওঠেন, এক-আধটা বেচাল লোক সর্বত্রই থাকে অধিকারী, কাজেই তামা-তুলসী নিয়ে শপথ করতে পারিনে। তথাপি আমি নিশ্চয়ই আপত্তি তুলব, এভাবে যাত্ৰা-থিয়েটারের মধ্যে সেই একজনকে টেনে এনে ইয়ে করা। কথা জোগায় না বলেই ইয়ে দিয়ে সারেন দারোগাবাবু। তারপর চেঁচিয়ে বলেন, থানায় তোমায় যেতেই হবে।
হিজ মাস্টারস ভয়েস-এর চোঙ। আবার খনখনিয়ে ওঠে, সে তো বুঝতেই পারছি। সার! আপনকার যখন হুকুম। তবে এটাই বুঝছি না। স্যার, আমার এই নাটকে এই যে একটা অতি কুচরিত্র মেয়েছেলের পার্ট রয়েছে, যে নাকি নিজের স্বামীকে বিষ প্রয়োগের চেষ্টা করছে, কই তাকে দেখে তো। এখানের এই শত শত মা-লক্ষ্মীদের মধ্যে কেউ আপনার মতো ক্ষেপে উঠলেন না? কই বলে উঠলেন না তো—যেহেতু ও মেয়েছেলে, সেই হেতু আমাদের গায়ে অপমানের কালি এসে লেগেছে! তবে সাধ্যমতো বলি-বলবেন কেন? ওনারা—আমাদের সতীসাধ্বী মা-জননীরা জানেন, নাটক-নবেলের কাজই এই! মন্দকে চোখে ধরিয়ে দেওয়া। পাপকে উচ্ছেদের চেষ্টা করা! ওনারা ওই বদ মেয়েছেলেটাকে মোটেই স্ব-জাতি বলে মনে করছেন না। তাই ওনারা নীরবে নাট্যদৃশ্য দেখছেন! তা সে যাক—এখন বলুন বাবুমশায়, নাটক বন্ধ করে এই দণ্ডে আপনকার সঙ্গে থানায় যেতে হবে, না নাটকটা আজ্ঞে শেষ করে যাব? তবে পালিয়ে আমি যাব না। বলুন, এখন আপনার কী আদেশ?
দৰ্শককুল এতক্ষণ যাত্রাপালার বদলে তর্জর লড়াইয়ের আস্বাদ অনুভব করে চুপ করে ছিল। এবার তুমুল হট্টগোল ওঠে, নাটক হোক! পালা চলুক।
দারোগাবাবু এই উন্মত্ত গণদেবতার দিকে তাকান, তারপর আচ্ছা ঠিক আছে— বলে গট গট করে বেরিয়ে যান।
তুমুল হর্ষোচ্ছাসের মধ্যে আবার ভাঙা-পালা জোড়া লাগে। দর্শকরা হাততালি দিয়ে দিয়ে হাতে ব্যথা ধরিয়ে ফেলে।
বলাবাহুল্য পরে দারোগাবাবু তাকে দেখে নেবার চেষ্টাই আর করেননি।
এই। এই বুকের পটা আর বাকচাতুরীর জোরেই কুঞ্জ দাস দলের লোকগুলোকে মুঠোয় পুরে রেখেছে। নচেৎ—জগতের যত শাসন-শোষণ-নিপীড়ন-এর দৃশ্য তুলে তুলে সমাজের চৈতন্য করিয়ে দিতে আসে বলেই যে কুঞ্জ নিজে ওই দোষগুলির বাইরে, তা নয়। দলের লোকদের উপর কুঞ্জর ব্যবহার দারোগার বাবা-সদৃশ। তবে মারধর করে না সে।—কাউকেই না।
ওই লিলিটা তো সেই তিন চার বছর বয়েস থেকে অধিকারীর কবলে, বলুক দিকি মার কোনোদিন খেয়েছে? অধিকারীর শাসননীতি অন্য ধরনের। সে হাতে মারে না, ভাতে মারে। খেতে না দেওয়া হচ্ছে তার প্রধান শাসন। তাছাড়া—খাটানো। সেও এক রকম শাসন। যে যেদিন অপরাধী সাব্যস্ত হয়, তার ওপর দলের সমস্ত লোকের রান্নার ভার পড়ে, কাঠ কাটা, জল তোলা, বাসন মাজার ভার পড়ে। বামুনের ছেলে হলেও রেয়াত নেই।
ব্ৰাহ্মণত্বের গৌরবে কেউ প্রতিবাদ তুললে, কি গোজ হয়ে থাকলে, অধিকারী তার মিষ্টমধুর বচন ঝাড়ে।—
বামুনের ছেলে? অর্থ্যা, কী বললি? বামুনের ছেলে? ওরে বাপধন, সেই দৈব ঘটনাটা এখনও মনে রেখেছিস? ভুলে যা বাপ ভুলে যা! মনে রাখলে শুধু যন্তান্না। ওরে তুই যে একদা বামুনের ঘরে। জন্মেছিলি, সেটা সেরেফ দৈবাতের ঘটনা। মানুষের পেটে কখনও কখনও যেমন তোপয়ে জীব জন্মায়, একটা মাথা দুটা ধড়, আজব প্রাণী জন্মায়, তেমনি!… বামুনের ছেলে! বাসন মাজব না— শুনে হাসিতে যে পেট গুলিয়ে উঠছে রে! বলি-জাত তোর এখনও আছে? বামুনের ছেলের যা যা কত্ত্যব্য করিসি সব? ত্ৰিসন্ধে গায়ত্রী? স্বপাক হব্বিষ্যি? বল? বল বাপা!
আশ্চর্য! তথাপি রাগ করে চলে যাওয়ার ঘটনা প্রোপ্ৰাইটার কুঞ্জ দাসের দলে বিরল ঘটনা! ওই বাক্য সুধা পানের পর অপরাধী ব্রাহ্মণ তার ব্রাহ্মণত্ব বিসর্জন দিয়ে অধিকারীর নির্দেশিত কাজই করে। টিকেও যায়।
তবে শান্তিস্বরূপ দৈবাৎ ভাত বন্ধ করলেও এমনিতে কুঞ্জর এখানে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা দস্তুর মতো ভালো! আর সে খাওয়ায় পক্ষপাতিত্ব নেই। অধিকারী নিজে যা খায়, শতরঞ্জি গুটোবার চাকর কেষ্ট বাগদীও তাই খায়।
ওই যে লিলি, যাকে না কি সবাই ব্যঙ্গ করে বলে থাকে, অধিকারীর পুষ্যপুত্তুর, তারও ওই একই বরাদ্দ। ভালো আয়োজন হল তো ভালো, আর সুবিধে অসুবিধেয় আয়োজন খারাপ হলে খারাপ।
আদুরে খুঁকি লিলি কোনো কোনো দিন আদুরে গলায় বলে, চচ্চড়ি আমি খাব না। ডাল ভাত আমার বিচ্ছিরী লাগে, আমি, শুধু মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাব।
অধিকারী তার জোড়া বেণীর একটাকে টেনে তাকে কাছে নিয়ে এসে বলে, বুঝলাম, খাবে। ডালভাত তোমার রোচে না, তাই শুধু মাছের ঝোল ভাত খাবে। কিন্তু বলতে যাদু, কেন তা খাবে? কিসের দাবিতো? সবাই যা করছে, তুমি তাই করছ! মাঝে মাঝে পার্ট করছ, আর কি? আর কিছু নয়। তবে? ভাবিছ যে অধিকারীর আব্দুরী। আমি, আমার জোর বেশি, কেমন? ভুল! ভুল মাইডিয়ার, একেবারে ভুল! এই প্রোপ্ৰাইটার কুঞ্জ দাসের কাছে একচোখোমি পাবে না, সব সমান! তুমি এখনও পর্যন্ত চুল গুটিয়ে ছেলে সাজছ, তোমার দক্ষিণে কম। যখন চুল এলিয়ে হিরোয়িন সাজবে, তখন দক্ষিণে বাড়বে। ব্যস!
তবে মন ভালো থাকলে আর সময় থাকলে যখন পাকা চুল তুলতে ডাকে লিলিকে, তখন একটু প্রশ্রয় দেয়। চোখ বুজে বুজেই বলে, এবারে পুজোয় কি নিবি বল? আনারসী শাড়ি? ঘুণ্টিদার জুতো? লাল রিবন? আচ্ছা আচ্ছা, হবে।
আবার কোনো সময় গল্পও করে কুঞ্জ লিলির সঙ্গে। কেষ্ট হতভাগা কতবড়ো হতভাগা জনিস? সেদিন নাকি শতরঞ্জির ওপর কোন বাবু ভাইয়ের একখানা মানিব্যাগ পড়ে ছিল, ছোঁড়া নাকি সেটা বিপিন সরকারের কাছে জমা দিয়ে দিয়েছে! দেখ। তবে কতবড়ো মুখু আর হতভাগা! নিয়ে নিতিস, কে দেখত শুনি?
লিলি ঠিকরে উঠে বলে, ভগবান দেখত।
ভগবান! ও বাবা! সে লোকটা আবার দেখতে পায় নাকি? সে তো বোবা কালা অন্ধ রে!
ককখনো না, ভগবান সব দেখো! এই যে তুমি সবাইকে এত কষ্ট দাও, ভগবান নিশ্চয় দেখতে পায়।…আহাদী! আহাদী বলেই এতটা বলতে সাহস পায়।
তা এ রকম সময় কুঞ্জ দাস বিশেষ শাসন করে না। হয়তো শুধু বলে, পায়? দেখতে পায়? তবে তো তোকে কাল উপোস করিয়ে ঘরে বন্ধ করে রেখে দিতে হয়।
লিলি উত্তেজিত গলায় বলে, কেন? কেন শুনি? আমার সঙ্গে কি?
অধিকারী মোলায়েম গলায় বলে, ভগবান তো দেখবে? দেখে আমার কি শাস্তি করে, সেটাই দেখতে চাই।
লিলি রেগে বলে, শাস্তি কি আর এ জন্মে হয়? পরের জন্মে হবে শাস্তি।
পরের জন্মে? অধিকারী হা হা করে হেসে উঠে বলে, তবে নির্ভয় রইলাম। পরের জন্মে তো গরু গাধা ঘোড়া ছাগল এই রকমই একটা কিছু হবই, মনিবে পিটুনি দিয়ে দিয়ে খাঁটিয়ে নেবে, এ তো পড়েই আছে।
লিলি গভীরভাবে বলে, ভালো কাজ করলে আসছে জন্মে। বামুন হতে পারতে তুমি।
বামুন? ওরে সর্বনাশী। কুঞ্জ দাস কনে হাত দেয়, তা হলে তো কাজের ছায়া মাড়ানো বন্ধ করতে হয়।
বামুনের ওপর তোমার অ্যান্তো রাগ কেন বল তো? অধিকারীর পাকা চুল তোলার শেষে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে, লিলি আদুরে গলায় বলে, সবাই বলে তুমি নাকি বামুন বেছে বেছে দলে নাও, আর তাদের ওপর অত্যাচার কর!
বলে বুঝি? কুঞ্জ এবার গলা ছেড়ে হাসে। বলেছে তোর কাছে? বামুন ব্যাটাগুলো আচ্ছা! ধূর্ত তো! ধরে ফলেছে সব!
ওদিকে নিমাই, জগবন্ধু, সনাতন, বিপিন, ব্ৰজ, সবাই চোখ টেপাটেপি করে, কর্তার মেজাজ খুব শরিফ দেখছি! পুষ্যপুত্তর বুঝি পাকাচুল তুলতে গেছে?
এখনও খুঁকি করে রেখে দিয়েছে। ব্যাপার কি বল দিকি? ইচ্ছে করলেই তো একটা মেন পার্ট দিতে পারে?
দেবে না। মতলব আছে। ভেতরে ভেতরে।
কী মতলব বল দিকি?
ব্ৰজ সবজান্তার ভঙ্গিতে বলে, বিয়ে দেবে। কন্যে দানের পুণ্য কুড়োবে! এখন খুকি। সেজে, বেড়াচ্ছে, নয়তো নাটকে বালক সাজছে, লোকের চোখে পড়ছে না। শাড়ি পরে নাটকে অবতরণ করলেই তো হয়ে গেল! সবাই চিনে ফেলবে। বিয়ের বারোটা বেজে যাবে।
বিয়ে দেবো? নিমাই হি হি করে হাসে, দেবে তো আমার সঙ্গেই দিক না বাবা? দিব্যি সুন্দরী, ঢং ঢাংও জানে খুব।
তুই তো বামুন?
বামুন! হঠাৎ নিমাই বলে, বিষ হারিয়ে টোড়া। দেয় তো লুফে নিই।
দেবে না। সনাতন, বিচারকের রায়ের মতো অমোঘ ভঙ্গিতে বলে, তুই বামুন বলেই দেবে। না।
আচ্ছা, কেন বল দিকি? বামুনের ওপর ওর এত জাতক্ৰোধ কেন?
জনিসনে বুঝি?? বিপিন ওরই মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ, আর বিপিন সবচেয়ে পুরনো। তাই বিপিন জ্ঞান দেয় ওদের, ওরপরিবার যে ওঁদের দেশের এক বড়লোক বামুনের ছেলের সঙ্গে হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। বলিনি তোদের এ কথা?
হ্যাঁ হাঁ, বলেছিলে বটে একদিন। কিন্তু সেটা কি সত্যি?
অসত্যির কী আছে? জগতের কোথাও কারুর বিয়ে-করা বৌ পরী-পুরুষের সঙ্গে কুলের বার হয় না?
তা বলছি না! তবে—
বিপিন বলে, আমাদের পাশের গায়ের লোক তো! ওর বিত্তান্ত আমিই বেশি জানি। বৌ পালিয়ে গেল, বছর পাঁচেকের একটা মা-মরা ভাগ্নে ছিল সেটা মরে গেল। ও তাই ঘটিবাটি তুলে গ্রাম ছেড়ে একটা যাত্রার দলে ঢুকল। মাধব অধিকারীর যাত্রার নাম শুনেছিস? না, নামকরা খুব নয়, তবে ছিল তখন। সেইখানে ওর হাতেখড়ি। তা ও নাকি নিজে একখানা পালা লিখে নিয়ে গিয়েছিল—নারী না নাগিনী?। বলেছিল, সেইটা আসরে নামাতে। অধিকারী বলত, দেখব দেখব, দেখতে গা করত না। একদিন বলল, দেখেছি, অখাদ্য! ব্যস হঠাৎ আমাদের কর্তা চটেমটে খুব বাচসা লাগিয়ে দিল, রাগের মাথায় খাতাটা ছিনিয়ে নিয়ে কুচিকুচি করে ছিঁড়ে, অধিকারীর মুখের ওপর ছুঁড়ে দিয়ে বেরিয়ে এসে নিজে দল খোলবার তাল করে বেড়াতে লাগল। তারপর তো এই দেখছিস?
তা পালা তো আর লেখে না কই নিজে?
না! বোধহয় বুঝেছে অখাদ্যই হয়েছিল।
নিমাই মিটি-মিটি হেসে বলে, নারী না নাগিনী? নিজের সেই লক্ষ্মীছাড়া বেঁটার কাহিনি নয় তো?
হতে পারে। বিপিন বলে, আমারও সে সন্দেহ ছিল। তবে বলিনি কোনোদিন কিছু। কি জানি মুখে মুখে ছড়িয়ে যদি দুর্বাশার কানে যায়। আমি যে ওর ইতিহাস জানি, ওর পাশের গায়ের লোক, কিছুই বলিনি কোনোদিন। বললে কোপে পড়ে যাব। কিনা কে জানে। …এই আজ হঠাৎ তোদের কাছে বলে ফেললাম, দেখিস যেন পাঁচ কান না হয়।
ওরা সবাই একযোগে হেসে ওঠে। বলে, পাঁচ কান? সে তো হয়েই বসে আছে। নিমাই, জগবন্ধু, সনাতন, ব্ৰজ আর বিপিনদা তুমি নিজে, পাঁচ দুগুণে দশ কান!
আরে বাবা, অধিকারীর কানে না গেলেই হল— বিপিন বলে, রাগলে দুর্বাসা—
এই রকম আলোচনার ক্ষেত্রে হঠাৎ লিলি এসে দাঁড়ায়। বেল্ট বাধা কোমরে একটা হাত দিয়ে মহারানীর ভঙ্গিতে বলে, কী হচ্ছে কি তোমাদের? কাজকর্ম নেই?
বিপিন বিরক্ত গলায় বলে, আছে কি নেই তাতে তোর দরকার কিরে ছুড়ি? তুই নিজের চরকায় তেল দিগে না।
আমার চরকা? লিলি হি হি করে হাসে। আমার চরকায় তো তেল দিয়ে এলাম এতক্ষণ ধরে? একশো তিনটে পাকা চুল তুলেছি।
আর, তুললি না কেন? মাথা বেল করে দিগে না? বিপিন রেগে রেগে বলে।
লিলি কিন্তু রাগে না। সে ঘাগরা ঘুরিয়ে একটা পাক খেয়ে বলে, বলে দেব প্রোপ্ৰাইটারকে।
দিগে যা, লাগানি-ভাঙানী-খোসামুদী!
লিলি এবার রেগে ওঠে। বলে, দেখ বিপিনদা, ভালো হবে না বলছি! তোমরা এখানে আড্ডা দিচ্ছ, তোমাদের হাসিতে প্রোপ্ৰাইটার মশাইয়ের ঘরের ছাত ফাটছে। তাই আমাকে বলে দিল, যা তো লিলি, দেখে আয় তো বাছাধনেদের এত ফুর্তি কিসের? কাজকর্ম নেই? উচ্চ হাসির বান ডাকিয়েছেন একেবারে!
ব্ৰজ এই পুষ্যপুত্তুরটিকে একেবারে দেখতে পারে না। তাই রুক্ষগলায় বলে, কেন? তোর প্রোপ্ৰাইটারের অধীনে যারা আছে, তাদের কি হাসতেও মানা?
তা আমি কি জানি? লিলি তার একটা গোড়ালির উপর দেহের সব ভারটা চাপিয়ে আবার এক পাক ঘুরে নিয়ে বলে, জানি না বাবা! প্রোপ্ৰাইটার আমায় পাঠাল তোমাদের শাসন করতে, তাই এলাম।
নিমাই চড়া গলায় বলে, তা হয়েছে তো শাসন করা? এবার যা আমাদের নামে লাগাতে-ভাঙাতে।
ভালো হবে না বলছি, নিমাইদা! লিলি নিতাইয়ের লম্বা লম্বা চুলের মুঠিটা একবার ধরে নাড়া। দিয়ে বলে, সব সময় তুমি আমার সঙ্গে লাগতে এসো না।
ব্রজ একটা ছ্যাবলা মার্ক হাসি হেসে বলে, নিমাইবাবুর তো সেই তাল। সব সময় যাতে তোর সঙ্গে লেগে থাকতে পারে, সেই আশায়-
বালিকা লিলি চেঁচিয়ে ওঠে, কেন? কেন সব সময় আমার সঙ্গে লাগতে আসবে? বলে দিচ্ছি। গিয়ে—
লিলি চলে গেলে এরা বলে, খুকিপনা আর গেল না!
যাবে কোথা থেকে? কৰ্তামশাইয়ের পুষ্যিপুত্তুর যে!
হুঁ তারপর দেখিস, খুকিটি হঠাৎ কোনোদিন কার সঙ্গে ভোগে পড়ে। সেই জ্যোচ্ছেনাবালার কথা মনে আছে তো? সে তো আর কর্তার পুষ্যিকন্যা ছিল না। কর্তা তাকে খাইয়ে পরিয়ে বড়োটি করেছিল অলক্ষ্যে ভোগে লাগাবে বলে, ব্যস চোদ্দ না পার হতেই নীল পাখি পালক গজিয়ে ফুড়ুৎ!
এই জগবন্ধু, ওকথা বলছিস কেন? কৰ্তার আর যাই দোষ থাক, ও দোষ নেই।
নেই, তোকে বলেছে। জ্যোচ্ছেনাকে কী রকম আগলাত মনে নেই? কারুর সঙ্গে একটু হেসে কথা কয়েছে কি মার-মার কাঁটু-কটু! ওটি কি শুধু শুধু হয় বাবা! স্বাৰ্থ চিন্তা থাকলেই তবে হয়।
ওটা কর্তার স্বভাব! মেয়েছেলেকে একচুল বিশ্বাস করে না! ছেদও করে না। নববালা, বাসমতী, এদের কী রকম তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে দেখেছিস তো? নেহাত কারে পড়ে দলে রাখতে হয় তাই, নচেৎ সেই আদ্যিকালের মতোন ব্যাটাছেলেগুলোকে গোঁফ কামিয়ে মেয়ে সাজাতে পারলেই বোধহয় বাচিত ও।
তা কথাটা ওদের মিথ্যে নয়, অধিকারীর মনোভাবটা প্রায় সেই রকমই। বলেও যখন তখন— দলের মধ্যে পাঁচটা মেয়েছেলে পোষা কি কম ঝকমারি? একশোটা ব্যাটাছেলের যা না ঝঞাট, একটা মেয়েছেলের জন্যে তা ঝঞাট। কী করব, কালের গতিকে না রাখলেই নয়। এখন যে সব বায়োস্কোপদেখা চোখ হয়েছে বাবু বিবিদের! গোঁফ কামানো মুখ নিয়ে শাড়ি পরা দেখলেই হাসির হররা উঠে যাবে।
দেখতে পারে না কুঞ্জ। একটা মেয়েকেও দেখতে পারে না। কাজেই তার সম্পর্কে স্বভাব দোষের কথাটা নেহাতই গায়ের জ্বালা থেকে উদ্ভূত।
জ্যোৎস্না নামের মেয়েটাকে যে আগলে বেড়াত, সে শুধু সন্দেহ বাতিকে, আর শাসনেচ্ছ হয়ে। তবু রক্ষা করতে পারল না জ্যোৎস্নাকে, সে একটা তবলচীর সঙ্গে পলাল।
কুঞ্জ দাস যখন টের পেল, তখন কিন্তু লাফালাফিও করল না, মার-মারও করল না। শুধু বলল, যে যার উপর্যুক্ত কাজই করেছে। কাঁঠালে মাছি কি আর কঁঠালী চাপায় বলতে যাবে? পচা কাঁঠালেই বসেছে।
তবু আবারও মেয়ে নিতে হয়েছে প্রোপ্রাইটার মিস্টার দাসকে। এখনকার নায়িকা হচ্ছে চারুহাসিনী। নববালা আর বাসমতী গিন্নিদের পার্ট প্লে করে। তাদের নিতে কারো মাখা ব্যথা নেই, শুধু কুঞ্জ দাসের আছে কড়া শাসন। খাও দাও কাজ করো, ব্যস! আড্ডা, গল্প, ভালোবাসাবাসি, এসব চাও তো কেটে পড়ে।
শুধু এই আদূরী মেয়েটা? লিলি! তার প্রতি যে অধিকারীর কী ভাব বোঝা শক্ত। কখনও মনে হয় বেজায় প্রশ্রয় দিচ্ছে, কখনও মনে হয়, নাঃ ওসব কিছু নেই, সকলের প্রতিই সমান অপক্ষপাত অধিকারীর।
তবে লিলির জীবনটা একটু অদ্ভুত বইকি! সে জানে না কখন তাকে মাথায় তোলা হবে, আবার কখন তাকে পায়ে ছেঁচা হবে। হয়তো সেই জন্যেই লিলি বালিকা থাকাটাকেই নিরাপদ মনে করে। তাতে মান অপমানের প্রশ্নটা কম থাকে। কখনও দলের মেয়েদের সঙ্গে হি হি করে, ছাচি পান চেয়ে খায়, ঝাল ঘুগনী এনে দেবার জন্যে বায়না করে, কখনও অধিকারীর তরফ হয়ে পাকাচোখা বুলিতে শাসন করে।
তা ওই দলের লোকেরা লিলিকে মুখে যতই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ভাব দেখাক, মনে মনে না মেনে পারে না। কারণ অধিকারীর পুয্যি কন্যে। সময় অসময় তাই তোেয়াজও করতে হয় তাকে।
তোয়াজ করে না শুধু বরুণ। ওই ব্ৰজ বিপিনের দল থেকে সে সম্পূর্ণ পৃথক। আর থাকেও সে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে। বরুণ পার্ট প্লে করে না, বরুণ পালা লেখে। বরুণের তাই কুঞ্জ দাসের কাছে বিশেষ খাতির। একমাত্র বরুণকেই কুঞ্জ কখনও উঁচু কথাটি বলে না, কখনও তুমি ছেড়ে তুই করে না।
বরুণের প্রতি কুঞ্জর যেন গুরুপুত্রের ভাব। কারণটা হয়তো ক্ষমতাবানের প্রতি অক্ষমের মুগ্ধতা। যে ক্ষমতা নিজের মধ্যে থাকবার ইচ্ছে কুঞ্জর, সে ক্ষমতা নেই তার। অথচ সেটা বিরুণের কাছে।
কুঞ্জর ভিতরে ভাবের জোয়ার, অথচ সে ভোব প্রকাশের ক্ষমতা নেই তার। বিপিনের কথা যদি সত্যি হয় তো কুঞ্জ অধিকারীর প্রথম এবং শেষ রচনা নারী না নাগিনী?
কিন্তু বরুণের কলম হচ্ছে সাধা কলম। ধরলেই সফল। যাই ধরুক। কুঞ্জ বরুণের এই অপূর্ব শক্তিতে অভিভূত! তাই কুঞ্জ তার ভাব আর ইচ্ছে ব্যক্ত করে, আর অনুরোধ জানায়, লিখে ফেলো লেখক, এটা নিয়ে লিখে ফেলো। খুব জ্বলন্ত ভাষায়। সমাজের এই দুর্নীতি, বজ্জাতি, ওর ওপর দুঘা চাবুক বসানো দরকার। ব্যস শুরু হয়ে যায় লেখা।
কুঞ্জ দেখে সে যা চেয়েছিল ঠিক তাই। অথচ বুঝিয়ে বলতে কতটুকুই বা পেরেছিল সে? শুধু ইচ্ছে প্রকাশ করা! বরুণ যেন মনের ভিতরের কথা টেনে বার করে সুন্দর আর সহজ করে স্বচ্ছন্দে লিখে দেয়। কুঞ্জ আশ্চর্য হয়ে ভাবে, কই আমি তো এত সব গুছিয়ে বলিনি? অথচ যত শুনি ততই মনে হয় ঠিক, ঠিক এইটাই বলতে চাইছিলাম। নিজের মনের কথা লোকে না হয় লিখতে পারে, কিন্তু অপরের? অপরের মনের কথা লেখে কেমন করে? তা ছাড়া বিরুণের ভাষার জোর কতা! বিরুণের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের তীক্ষ্মতা কতা! আগাগোড়া পালাটাই যেন হীরে চুনী পান্না! মুহুর্মুহু হাততালি পড়ে কি আর সাধে? ভবানী অপেরার যাবতীয় মহিমার মূলে বরুণ। সেই বরুণকে পুজ্যি করবে না। ভবানী অপেরার প্রোপ্ৰাইটার? তবে নাটকের নামকরণের ভারটি কুঞ্জর নিজের হাতে। এইটি তার নিজের এলাকা। মনে মনে আর একটি সংকল্প আছে কুঞ্জর, সেটা আজ পর্যন্ত ব্যক্ত করোনি কারও কাছে।