পরিযায়ী শ্রমিকের ফেরা
সংক্রমণ রুখতে ফের লকডাউনের পথে হাঁটতে পারে দেশ। খবর মাধ্যমে তারই ইঙ্গিত পেয়ে কর্মরত বিপুল সংখ্যায় পরিয়ায়ী শ্রমিকদের থরহরি কম্প অবস্থা। তাঁদের স্মৃতিতে ফিরছে এক বছরের আগের দুর্বিসহ যন্ত্রণাকর পরিস্থিতির কথা।
গতবছর ২৪ মার্ত রাত থেকে দেশজুড়ে প্রথমে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল।এরপর থেকে সময় যত এগিয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থা ততই শোচনীয় হয়েছিল। রোজগার বন্ধ, অর্থের সংস্থান না হওয়ায় নাওয়া খাওয়া লাটে উঠেছিল। ভাড়া গুনতে না পেরে ঘরছাড়া হয়ে রাস্তায় দিনের পর দিন কাটাতে হয়েছে পরিযায়ীদের।
উভয় সরকার পরিযায়ীদের পাশে থাকার কথা বললেও বাস্তবে তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় কিঞ্চিৎকর মাত্র। শেষ পর্যন্ত অবিশ্রান্ত শ্রমিকরা কেউ চড়া ভাড়ায় দেশে ফিরেছেন, কেউবা আবার পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিয়েছেন হাজার হাজার কিলোমিটার পথ। ঘটেছে প্রাণহানিও। ক্লান্ত পরিয়ায়ীরা হাঁটতে হাঁটতে রেল লাইনের ট্র্যাকে ঘুমিয়ে পড়ায় ট্রেনের চাকায় পিষ্ট হয়েও নিহত হন বেশ কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিক। সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। এরপরও বিতর্ক থামেনি।
অতিমারি এলাকায় বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এক পরিযায়ী শ্রমিকের কথায়, ‘ গতবারের যন্ত্রণা আমরা কেউ পেতে চাই না। রোজগার পুরোপুরি বন্ধ ছিল, তাও কোনও মতে জমানো টাকা খরচ করে বাড়ি ফিরেছিলাম ট্রাকের মাথায় চড়ে।’
রেলের টিকিট বুকিংয়ের চাহিদা তুঙ্গে। জানা যায় বাড়ি থেকে ফেরার জন্য কোনও বার্থ ফাঁকা নেই। আসলে গত বছরের পরিস্থিতির কথা ভেবে বাড়ি ফিরতে চাইছে ওই পরিযায়ী। কিন্তু সেগুড়ে বালি। গতবার লকডাউনে কোনও মতে বাড়ি ফিরলেও পেটের তাগিদে ফের ফিরেছিলেন সুদূরে কাজে। তবে, চাহিদা কম থাকায় পুরো বেতন পায় না।
লেবারদের কথায়, ‘চার-পাঁচ মাস আগে কাজের জায়গায় ফিরেছি। গত বছর বেশিরভাগই ঋণ করে বাড়ি ফিরেছিলাম। ঘরে অর্থ নেই। তাই পেটের টানেই ফের কাজে এসেছি। আশা করবো লকডাউন হলে এবার অন্তত পরিযায়ীদের ফেরাতে সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপের ব্যবস্থা করবে। যদি দু’দিন আগে অন্তত লকডাউন জারির কথা ঘোষণা করে বলা হয়, তবে তারা যেকোনও উপায়ে বাড়ির পথে রাওনা দিতে পারবে।
হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণার ফলে বিভিন্ন রাজ্যে লাখ লাখ শ্রমিক আটকে পড়বে এই গরিব মানুষগুলিকে সরকার বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দেওয়া খাবার ও আশ্রয়ের ওপর ভরসা করে বাঁচতে হবে। সকলেই যে এই সুযোগ পাবে এমন নয়। কাজ নেই বলে তাঁদের হাতে টাকাও নেই। এই শ্রমিকেরাও ঘরে ফেরার জন্য মরিয়া। অনেকে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে জীবন হারিয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই তাঁদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করছিল না সরকার, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা না হলে। সিদ্ধান্ত হয় যাঁদের করোনার কোনও লক্ষণ নেই, তাঁদের বাড়ি ফিরতে দেওয়া হবে। তাঁরা বাসে করে বাড়ি ফিরবেন। বাসগুলিকে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যেতে দেওয়া হবে। তবে প্রতিটি সফরের আগে বাসগুলি জীবাণুশূন্য করতে হবে। প্রতিটি রাজ্যকে এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু কর্মী নিয়োগ করতে হবে।