বাজী বর্জন সত্যিই কি এতটাই জরুরী?
পরিবেশ সচেতনতা বিষয়টি কয়েকবছর ধরেই সারা বিশ্বে নড়ে চড়ে বসেছে। ঠিক বর্তমানে পরিবেশ দূষণে ত পৃথিবী আজ জর্জরিত বিপন্ন— “পুণ্যো গন্ধঃ পৃথিব্যাঞ্চ তেজশ্চাস্মি বিভাবসৌ জীবণঃ সর্বভূতেষু তপশ্চাস্মী তপস্বিষু।” অর্থাত ঈশ্বর পুণ্যো গন্ধে, অগ্নির দীপ্তিতে, সর্বপ্রাণীর আয়ুতে, এবং তপস্বীগণের তপঃশক্তিরূপে বিরাজ করেন। ঈশ্বর সৃষ্টিকাল থেকেই প্রাণীদের বিশুদ্ধ সুস্বাদু জল দিয়েছেন, বিশুদ্ধ বাতাস দিয়েছেন সেবনের জন্য, ভেজালবিহীন সুস্বাদু খাদ্য দিয়েছেন আমাদের বেঁচে থাকবার নিমিত্ত।
কে বা কারা আজ সে পবিত্র জল দূষিত করেছে? উত্তর মানুষ । কে বা কারা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বিষাক্ত করে তুলেছে? মানুষ। কে বা কারা ঈশ্বর সৃষ্ট ফলমূল গাছপালা বনসম্পদ ধ্বংস করে চলেছেন? মানুষ। পূর্ব কালে কি এতো সাফসুতরো করে জল খাবার প্রয়োজন ছিল? না। প্রকৃতির কোনকিছুই কি এতো বিশুদ্ধ করবার দরকার পড়তো? না। বায়ুদূষণ তথা ওজন হোল, গ্রীন হাউস এফেক্ট দূষিত প্রভাব কার্বন মনোঅক্সাইড বা ডাইঅক্সাইড, দূষিত হাইড্রোকার্বন, সালফার ডাইঅক্সাইড, জল দূষণ, শব্দদূষণ ইত্যাদির প্রভাব এসব কি আগে এতো ছিল? না। কেন হলো? মানুষের লোভ, যার পোষাকি নাম “প্রগতি”। এতই যখন জানা, তাহলে দুদিন বা বছরে কয়েকদিনের জন্য বাজী পোড়ানোই বা বন্ধ হবে কেন? এতো এক আনন্দ, অপরিসীম— বিশেষ শিশু ও কিশোর- কিশোরিদের কাছে।
এই বাজী তৈরির সাথে কত লোকের না জীবন ধারণের প্রশ্ন , তাদের রুজি রোজগারের পথ । এও ত এক শিল্প, এর পেছনে কতো মেধা কত কেমিস্ট্রি কত কৃষ্টি কত অধ্যবসায় না জড়িত, এক বিজ্ঞান অভিযান। এই শিল্প বন্ধ হলে পুরো বিশ্বে অর্থ নীতিও কি কিছু ব্যহত হবে না। সারা পৃথিবীতে বাজি শিল্প দিন দিন নূতনতর নানা চমকে ভরপুর হয়ে উঠছে। ৪ঠা জুলাই বাজির সমারোহ দেখবার সৌভাগ্য হয়েছিল একবার আমার সাগর ওপারের দেশে। সব দেশে বিশেষ বিশেষ দিনে এ বাজি খেলা শিশু থেকে বয়স্ক সকলের এক মনোরঞ্জনের বস্তু। একদিনে যে পরিমান পরিবেশ দূষণ হবে তা কি একদিন অন্য কিছু (গাড়ি…. কলকারখানা) বন্ধ রেখে বা বিকল্প কিছু ভেবে প্রতিকারের ব্যবস্থা না হয় চিন্তা করার অবকাশ ত আছে। এ উন্নত শিল্পবানিজ্য প্রসার বন্ধ কি এতই জরুরী।
মানুষও পরিবেশের এক অঙ্গ, আনন্দ দেওয়া ও আনন্দ পাওয়া ত সুস্থ পরিবেশের অনুকূল। আলো বাজি যা অমানিশা আকাশে রঙিন রোশনাইয়ে কল্পনার পাখা মেলিয়ে — যে অপার্থিব দৃশ্যের সঞ্চার করে , সেও ত প্রকারান্তরে এক নন্দিত মনের পরিবেশ অনুকূল বন্ধু। (বিশ্বজুড়ে নানা আলো বাজির রোশনাই এর অসামান্য কিছু ছবি নীচে দেওয়া হলো , যদিও প্রত্যক্ষদর্শীর নয়নযুগলে যা ধরা পড়ে, তার সিকিভাগও ছবি বহন করে না।) এ একান্তই নিজস্ব এক ভাবনাচিন্তা, আপনাদের সকলের কাছে এ দীপাবলী দিনে তা তুলে ধরলাম। আর এটাও ঠিক পৃথিবীতে যতদিন মানুষ টিকে থাকবে এ বাজিশিল্পের বাজিমজা কোনদিন মুছে যাবে না।