১. সোমবার, ধরা যাক আদিকাণ্ড
ভূমিকা
দেশাচারে খুব দোষ আছয়ে এখন ।
দেশীয় বিদ্যার কেহ করে না যতন ।।
বাঙ্গালা জানিনে বলে বাঙ্গালি হইয়ে ।
মনে-মনে ভাবি কারে কিছু না বলিয়ে ।।
আবকারি, অসভ্যতা, বেশ্যা, অত্যাচার ।
যদেচ্ছা আহার, আর অন্যায় বিচার ।।
অপব্যয় উচুচাল অন্য প্রতি দ্বেষ ।
বোসেচে উচ্ছন্ন দিতে এই বঙ্গদেশ ।।
দেখেও দেখে না যাঁরা আছেন অন্তরে ।
অন্তরে আছে কি বোলে রবেন অন্তরে ।।
রহিবে কি বঙ্গদেশ মন্দাচারে ভরা ।
সবার উচিত ইহা সংশোধন করা ।।
ঐক্য অর্থ পরিশ্রম এই তিন বলে ।
কতকাণ্ড হইতেছে দেখ কত স্হলে ।।
চেষ্টার নিকটে ইহা সামান্য বিষয় ।
অসাধ্য কি আছে বল চেষ্টা যদি হয় ।।
( ‘আপনার মুখ আপুনি দেখ’ । লেখক ভোলানাথ মুখোপাধ্যায়, ১৮৬৩ )
১. সোমবার, ধরা যাক আদিকাণ্ড
হরিবোল, তাও অনুচ্চ, বলতে গেলে জনা দশেকের ফিসফিসে গলায়, শুনে ঘুম ভাঙতে, টর্চ জ্বেলে দেখি, রাত্তির আড়াইটে । প্রতিরাতে আজকাল অসময়ে ঘুম ভাঙছে । সলিলা যথারীতি আগে টের পেয়ে, রাস্তার দিকের গোল বারান্দার জানালায়, আলো জ্বালেনি । বলল, ‘ওপরের ফ্ল্যাটের সাধন চৌধুরীকে নিয়ে যেতে মীরা সৎকার সমিতির গাড়ি এসেছে ।’ গ্রিলের বাইরে মুণ্ডু বের করে দেখলুম, শুকিয়ে চার ফিটের টেকো চশমা-পরা শব হয়ে গেছেন সাধনবাবু, এক কালের ফ্লপ সিনেমার উত্তম-ছাঁট প্রযোজক । উনি আর ওনার পুত্রবধু মিলে আমাদের চাটগাঁ-সিলেটি গালাগাল বিতরণ করতেন । সেটা ভাগ্যক্রমে ঘটিদের কানে অশ্লীল শোনালেও দুর্বোধ্য । ক’দিন ধরেই ঝি-চাকরদের ওনারা ফ্ল্যাটের মধ্যে যেতে দিচ্ছিলেন না । দিনকতক আগেই মারা গেছেন সম্ভবত, চিলবক্সে সংরক্ষিত ছিলেন । ছেলে ছিল জাপানে ট্যুরে, আজকে এগারোটায় ফিরেছে । ক্লাবের সবজান্তা ছেলেরা পৌঁছে গেছে । সব কিছু লুকোছাপা গোপন । সকলেই নিচু গলায় বাঙাল বুলিতে কথা বলছিল ।
ঘুম আসছিল না । শ্রীধর মুখোপাধ্যায়কে যে গল্পটা দেবো, পড়ে দেখলুম আরেকবার । যেসব কমরেডদের নিয়ে ও গোমর করে, তাদের নিয়েই গল্পটা । ঘুম আসছিল না । টিভি খুলে বসলুম । স্টার মুভিজে হরর গপপো । চ্যানেল ভি দেখতে-দেখতে ঘুম এল ! চারটে । সাতটায় ঘুম ভাঙল । ওপরতলায় সৌজন্য ভিজিট দিতে গেলে সদ্য বিধবা জানালেন, ‘মড়া বাসি হতে দিলাম না, তাই রাতে-রাতেই ।’ সত্যি, এই বঙ্গসংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের পরিচয় ছিল না । মন খারাপ হয়ে যায় এমন দেখেশুনে ।
ঘুম হয়নি । ফিজিওথেরাপি করতে ইচ্ছে হল না । হাতের লেখার ব্যায়ামও নয় । দেয়ালে স্লেট টাঙিয়ে অ আ ক খ এ বি সি ডি ।
চে খেতে-খেতে সানডে টাইমসটা ওলটালুম । এটা পড়ার সময়ে মুম্বাইতে চলে যাই । একটা ওয়ানরুম ফ্ল্যাট ওখানে কিনে রাখলে মাঝে-মাঝে গিয়ে থাকা যেত । ওখানকার দ্রুতির জন্যে মনকেমন করে ।
আজকে অফিস ডিসপেনসারিতে গিয়ে চেকআপ করানো আর ওষুধ নেবার দিন । চান করে বেরোলুম । রিকশায় নাকতলা । অটোতে টালিগঞ্জ । মেট্রোয় পার্কস্ট্রিট । রবীন্দ্র সরোবরে উঠলেন ধপদোরস্ত আমলা মঞ্জুষ দাশগুপ্ত, সঙ্গে মহিলা, অফিস যাত্রার অতিগাম্ভীর্য । মেট্রোয় কেউ কথা বলে না । বোঝার উপায় সম্ভবত, যে, অকুস্হলে ক্যানসার পুষছেন ।
ডিসপেনসারিতে আমরা পৌঁছোবার পর ভিড় বাড়ল । অবসর নেবার পর বিশেষ পাত্তা পাই না বলে আগেভাগে গিয়ে বসে-বসে হাই তুলি । হাই তোলার মজা নিই । আমাদের দুজনেরই ব্লাডপ্রেশার বেড়েছে । ওষুধের মাত্রা বাড়ল । নিচে দোতলায় যেতে মুরলিধরণ বলল, সমবায়ের সেমিনার হচ্ছে, আমায় যেতে হবে । অবসর নেবার পর নিজের অফিসটাই অচেনা হয়ে গেছে । শেষ দু’বছর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলুম । অজয় মালহোত্রা হাসি ঠোঁটে বলল, ‘লখনউতে মমতা অবস্হি আত্মহত্যা করেছেন ।’ শুনে কী প্রতিক্রিয়া হল ? কিচ্ছু হল না, আশ্চর্য, কিচ্ছু হল না । ট্যুরে যাবার সময়ে একদিন বাসস্ট্যাণ্ডে আমার জন্যে অপেক্ষা করেছিলেন । পৌঁছোতেই বললেন, ‘চলুন দুজনে পালাই ।’ কী ভয়ানক । কাঠমাণ্ডুতে ভূবনমোহিনী রাণার আত্মহত্যার সংবাদ পেয়েও কোনো প্রতিক্রিয়া ঘটতে দেখিনি নিজের মধ্যে । অতীত নিজের সঙ্গে নিজেকে নিয়ে উধাও ।
একতলায় নেমে, আইওবিতে টাকা তুলতে আর চেক বই নিতে ভেতরে গেল সলিলা । আরথ্রাইটিসের কারণে আমার সই মেলে না বলে প্রতিবার তিরস্কার জোটে । কবি সুভাষ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখতে পেলুম না ওর সিটে । নির্ঘাত ইউনিয়ানবাজি করতে বেরিয়েছে ; মানে কোনো ইউনিয়ান স্যাঙাতদের আড্ডায় ঠ্যাং ছড়িয়ে ধোঁয়ার উড়াল । এসিতে সোফায় বসে রইলুম । সকালের মৃত্যু আর দুপুরের মৃত্যু সংবাদ দুটোর মধ্যে কত তফাত । একটা সংবাদ গোপন ক্ষতের মুখ খুলে দেবে টিম টিম টিম টিম । আরেকটা গুড রিডেন্স অব ব্যাড রাবিশ ।
পার্ক স্ট্রিটের মোড়ে হট কাটি রোল থেকে দুটো চিকেন-রোল কিনে খেতে-খেতে বাসে উঠে পড়েছিলুম । প্রাইভেট বাসে সবাইকে দেখিয়ে-দেখিয়ে বুড়ো-বুড়ির চকেন-রোল খাবার আহ্লাদটাই আলাদা । রাসবেহারির মোড়ে নামতে হল, বাসটা সোজা যাবে না । বইয়ের স্টলটায় চোখ বুলিয়ে প্রথম আলো, কবিতা পাক্ষিক, দাহপত্র, বিতর্ক, নাট্যচিন্তা, কোরক, এবং জলার্ক, শীলিন্ধ্র কিনলুম, লখনউ-দিল্লিতে পড়ার সময় পাব বলে । সলিলা লেক মার্কেট থেকে সজনেফুল আর লিকলিকে ডাঁটা কিনে আনল । আর রোলের অ্যান্টিডোট ডাইজিন । রোল আর ডাইজিন দুটোই ডাক্তারের বারণ ।
বাড়ি ফিরে, রোদ লাগায়, ঘুমিয়ে পড়লুম । চাষার রোদঘুম ।
ঘুম থেকে উঠে কেদার ভাদুড়ির আস্তানায় গেলুম । মনে ছিল না । আজকে ওনার হেভি টিউশানির দিন । কচি মেয়েরা থাকায় ফিরতে হল । কেদারের নিজের সম্পর্কে অতিকথাগুলো থ্রিলিং । ওনার একটা সাক্ষাৎকার নেব, অন্যরকম সাক্ষাৎকার । চালু ডেফিনিশানে কেদারের কবিতা কোথাও ফিট হয় না । কলকাতার কাব্যজগতে অপাঙক্তেয় । প্রাক্তন উদ্বাস্তু হওয়া সত্ত্বেও উনি অপাঙক্তেয় ।
Note : ১) দি ন্যারেটার হ্যাজ টু অ্যামিউজ, অ্যাসটনিশ, প্রুভ । ২) হিজ গিফ্টস হ্যাভ অ্যাডোলেসেন্স । ৩) দি ক্যারেক্টার্স আর আনএবল টু ওভারকাম দ্য এবসেন্স অব দি অথর । ৪০ দি প্রলেতারিয়েত পোয়েট সাফার্স ফ্রম পেনিস এনভি । ৫) লাইক অল হিসটরিকাল ক্যারেক্টার্স, দি পোয়েট ইজ অলওয়েজ অপরচুনিস্ট । হি উড মেক হিজ মার্ক, ইফ নট ইন দিস ট্রি, দেন অন দ্যাট ওয়াল ; ইফ নট উইথ ক্লজ অর টিথ, দেন উইথ পেন-নাইফ অর রেজর অন ফ্লেশ । ৬) শুড দি সুইওসাইড অব ভূবনমোহিনি রাণা বি রিগার্ডেড অ্যাজ দি লাস্ট স্টেজ অব এ সিরিজ অব স্মল অ্যাক্টস এগেইনস্ট সেলফ ? ৭) সুইসাইড অব মমতা অবস্হি ইজ এ রিভেঞ্জ শি ডিড নট লিভ টু এনজয় । ৮) সাম কলকাতা কফিহাউস রাইটার্স সিম্পলি থিংক অব ডেথ অ্যাজ দিন এবসেন্স অব দি প্রেজেন্ট । ৯) ড্রিমি ফ্রিকোয়েন্সিজ । ১০) ক্যালকাটা সিমস লাইক এ হসপিটাল অব কনটেজিয়াস ডিজিজেস । ওয়ান সিজ ওনলি হররস : লাইফ লাইক স্পিটল অন এ ওয়াল, ফিয়ার অ্যাজ জেনারাল অ্যাজন এয়ার — ইন ফেসেস হুইচ ফেল অ্যাওয়ে ইনটু দি হ্যাণ্ডস হুইচ হেল্ড অ্যান্ড হিড দেম, ইন দি ইউরিনেটিং নার্ভাসনেস অব ডগস ( জীবনানন্দ বলেছেন শেয়াল, শকুন, শুয়োর ), ইন সাইলেন্সেস হুইচ ব্রোক দি নয়েজ অব এভরিডে লাইক মিররস ইন দি স্পুনেবল এম্পটিনেস অব আফটার-মিডনাইট নাকতলা, ইন লিটল শপস হুইচ সিমড সিরিন অ্যাণ্ড সেফ অ্যাজ গ্রেভস ।
‘মেধার বাতানুকূল ঘুঙুর’ আমার কাছে এক কপিও নেই । খুঁজে পেলুম না । শুদ্ধ চেতনার রহস্য, বিজ্ঞানসম্মত কীর্তি, দালাল, বাজারিণি, পরবর্তী সর্বনাশ, উৎপাদন পদ্ধতি, ধনতন্ত্রের ক্রমবিকাশ, কাঠামোতত্ত্ব, কবিতাগুলো কি সফল হল সত্যিই আত্মহত্যা করিয়ে ? পনেরো বছর পর, মমতা ?
বাকার্ডি নেয়ে বসলুম, সমীর বসুর ‘প্রবাসী’ সংখ্যার জন্যে সিরাজুল ইসলামের ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ( ১৭০৪ – ১৯৭১ ) বইটার প্রথম খণ্ড থেকে কিছু পাব ভেবে । সিরাজুল বোধহয় দাড়িঝোলা তবলিগি । ঢাকার এসট্যাবলিশমেন্ট পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে অনেক বেশি পচেছে । ঢাকা-চাটগাঁ যাইনি আজও । গেলে কি স্বপ্নভঙ্গ হবে, জীবনানন্দ ? সম্ভবত । নিজে যা ভেবেছি, যা অভিজ্ঞতা, তাই দিয়েই শেষ করলুম । পদ্মিনী মোঙ্গিয়ার বইটা অনেক কাজে দিল ।
পাশের বাড়িতে অঞ্জলিদি শাস্ত্রীয় গান গাইছেন, হারমোনিয়াম বাজিয়ে, সম্ভবত সাধন চৌধুরীর মৃত্যুর আনন্দে । লোকটা মরায়, আর দ্বিতীয় মৃত্যুর খবরে, কেমন রিলিফ অনুভব করছি । এই ফ্ল্যাটে এসে ওব্দি বৃদ্ধা রোগা কালো স্কুল শিক্ষিকা অঞ্জলিদির গান শুনছি । ওঁর বাড়িতে চুরি হয়েছে যেদিন, সেদিনও গেয়েছেন । অত বড় বাড়িতে একা । পক্ষাঘাতে পঙ্গু ওনার মাকে ঘুম পাড়াবার জন্যে মাঝরাতে চাপড়াতেন, মনে হত থাবড়ে রাগ আর অসহায়তা প্রশমিত করছেন । মা মারা যেতে, সৎকার সমিতির গাড়ি ডেকে, একাই নিয়ে চলে গেলেন । সাইকেল চালিয়ে বাঁশদ্রোণী বাজারে মাছ আর সবজি কিনতে যান । ওনার বাগানে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেখতে পেয়ে, আমাদের নিচের ফ্ল্যাটের বউটিকে বকুনি দিতে, বউটি অঞ্জলিদিকে বলেছিল, ‘ওটা আমার নয়, আমি ট্যামপুন নিই, আর আমার কাজের বউরা কানি বাঁধে ।’ অঞ্জলিদি বোধহয় ট্যাম্পুনের কথা প্রথম শুনলেন, মুখ দেখে তেমনই মনে হয়েছিল ।
বাড়ি দশ লাখ টাকায় বেচে দিয়ে অঞ্জলিদি চলে যাচ্ছেন শুনেছি । বলেন, রিফিউজিদের পাড়ায় থাকা যায় না । এ পাড়ায় সবাই জবরদখলওয়ালা পরিবার, প্যালেসটাইনে ইজরায়েলাইটস । উনি বলেন, ‘যারা অন্যের জমি দখল করে নিয়েছিল, তারা এখন দায়বদ্ধতার কথা বলে ! তোরা আবার কিসের দায়বদ্ধ রে ? দিব্বি তো প্রোমোটারদের প্যাঁচ মেরে টাকা আর ফ্ল্যাট নিচ্ছিস । যাদের জমিজমা দখল করে নিয়েছিলিস তারা আজ কোথায় মুখ থুবড়ে পড়ে৪ছে তা দেখেছিস ?’
আজকাল অঞ্জলিদির রাগ বেড়েছে । দশ লাখ টাকা থেকে দু’লাখ প্রফুল্ল চক্রবর্তীর ‘মার্জিনাল মেন’ বইয়ের নায়কদের দিতে হবে । নয়তো বেচতে পারবেন না । পশ্চিমবঙ্গের খাঁজে-খাঁজে ঢুকে গেছে এইসব নায়কেরা । পশ্চিমবঙ্গের এথনিসিটি তো নষ্ট হয়েই গেছে । সুতরাং পশ্চিমবঙ্গের নাম পালটাতে অসুবিধা কোথায় ! অঞ্জলিদি নিশ্চই বুঝে গেছেন যে সারাটা পশ্চিমবঙ্গ দখল হয়ে গেছে । জবরদখল ।
‘মার্জিনাল মেন’ বইতে প্রফুল্ল চক্রবর্তী আসল প্রান্তিকদের কথা লিখতে ভুলে গেছেন একেবারে । যাদের দণ্ডকারণ্যের মালকানগিরি, গডচিরোলি, ছত্রপুর আর হিমালয়ের তরাই, আন্দামান, মোতোহারি, বেতিয়া কোথায়-কোথায় আদিবাসিদের মধ্যে পুঁতে হাত ধুয়ে ফেলেছিলেন জওহরলাল ।
কোথাও কেক তৈরি হচ্ছে । ভ্যানিলার গন্ধ আসছে । ইউরোপ ঢুকে গেছে বাঙালির জিনসে । রাজাভাতখাওয়ার বাঙাল আর পুরিলিয়ার মাহাতও সনেট, লিরিক, এপিটাফের জেলগারদে । আর সেসব নিয়ে কতই না অধ্যাপকীয় হম্বিতম্বি ।
কেবলে ‘শেক্সপিয়ার ইন লাভ’ দেখলুম । আমার মগজের মধ্যেকার শেক্সপিয়ার ভেদ করে প্রেমের গল্পে পৌঁছোতে অসুবিধে হল । কিন্তু কমপ্লেক্সটা ভাঙা কত জরুরি ছিল । উপনিবেশ ? নেশা করলে মগজটা বেশ ঝরঝরে হয়ে যায় । শরৎচন্দ্র ?
ছবিসূত্র-শব্দসূত্র : পাক খুলে যারা বেরোতে পারেনি । প্রশ্নবোধক শীত । ঝিনুক-সাপের চামড়া । নৃত্যপটিয়সী বাদুড় । শিক্ষকরা প্রতিবাদী ছাত্রকে বেঞ্চে দাঁড় করায় । উৎকন্ঠা অর্জনের শ্রম । পাইলট মাছ । তোরা সব কোন আঠায় জোড়া । হাড়ের দেশের নাগরিক । আজকে ওনার পা দুটো কেটে বাদ দেয়া হবে । থুতনি নেড়েছিল আরশোলা । হাতের রেখার অন্ধকার টানেল । মাকড়সার ওৎপাতা একাকীত্ব । পুরুষ হাঙরের গান । দুঃখি পদচিহ্ণ । সদিচ্ছার নিশিডাক ।
লিট্যানি : এ পোয়েম সলেম ইন ক্যারেক্টার, বেসড অন চার্চ প্রেয়ার, বিল্ডস ইটস এফেক্ট স্টভানজা বাই স্ট্যানজা । সো প্রোনাইন্সড ইজ দি মুড দ্যাট ইট ইজ লাইকলি টু রিমেইন ইন মেমরি লং আফটার দি ইমপ্যাক্ট অব ইনডিভিজুয়াল ইমেজেস ফেড ।
টোন : অ) টোন ইন এ পোয়েম ইজ অ্যান আসপেক্ট অব স্পিকিং ভয়েস, এসপেশিয়ালি দি ইনফ্লেকশান্স অব দি ভয়েস ফ্রম হুইচ উই ইনফার দি অ্যাটিচুড অব দি স্পিকার । উই মে সেন্স দ্যাট এ স্পিকার্স টোন ইজ গে, ন্যাস্টি, মেলাংকলি, সুদিং, বিটার, সোম্বার, অ্যাংরি, অর মোটিভেটিভ, অ্যাজ দি কেস মে বি, অ্যানহদ দি মোর অ্যাটেনটিভ উই আর টু দি প্রিসাইজ ইনটোনেশান, দি ক্লোজ উই সিম টু কাম টু অ্যান এগজ্যাক্ট নোশান অব দি স্পিকার্স অ্যাটিচুড টোয়ার্ডস দি সাবজেক্ট । আ) টোন ইন এ পোয়েম ইজ এ প্রোডাক্ট অব মেনি ফ্যাক্টরস — চয়েস অব ওয়র্ডস অ্যাণ্ড ডিটেইলস ; অ্যাসোশিয়েশান অব ইমেজারি, রিদমস অ্যাণ্ড সাউন্ড এফেক্টস, স্পিকার অ্যাণ্ড সিচুয়েশান । ই ) টোন ইজ মোর দ্যান অ্যান ইনফ্লেকশান অব দি স্পিকিং ভয়েস ; ইট ইজ মুড অর কোয়ালিটি অব ফিলিং দ্যাট ইনফর্মস দি পোয়েম অ্যাজ এ হোল ।
অভিধানে টোনের বাংলা দেয়া আছে স্বরভঙ্গি, স্বন, স্বরগ্রাম । শ্যামাপদ চক্রবর্তীর ‘অলঙ্কার চন্দ্রিকা’, অশোক মুখোপাধ্যায়ের ‘ব্যাকরণ অভিধান’-এ পেলুম না । প্রাগাধুনিক বাঙালির সঙ্গে ইউরোপীয় আধুনিক প্রতিস্বর ফারাক খোঁজা যেতে পারে এখানে ।
সুব্রত রুদ্র এক কপি ‘অ’ চেয়েছেন । কুচবিহার থেকে । সলিলাকে বলেছি প্যাক করে দিতে । পার্ক স্ট্রিট পোস্ট অফিস থেকে সাধারণ ডাকে পাঠালে মারা যায় না ।
শর্মী পাণ্ডের নরম টেলিফোন । দীপঙ্কর দত্তর যেমন ইনটেনসিভ সাক্ষাৎকার নিয়েছি, তেমন অরূপরতন বসু, শুভঙ্কর দাশ, ওদের ইনটারভিউ নেবার প্রস্তাব । নেয়া যায় । দীপঙ্করের মতন নৈকট্য দরকার । শর্ঞীর সাক্ষাৎকার বরে আই ওপনার হবে ।
চোখে আই ড্রপ দিলুম । মশারি টাঙালুম । টেলিফোনের হ্যাণ্ডসেটটা রেখে দিলুম সলিলার বালিশের পাশে । কাল সকালে উঠে সবচে আগে পায়খানার কমোডটা পরিষ্কার করতে হবে ।
‘মল্লার’ পত্রিকার জন্যে একটা গল্প চেয়েছে অলোক গোস্বামী । শ্রীধরকে দেবার জন্যে যে গল্পটা লিখেছি, তার সঙ্গে অর্গানিক লিংক রেখে এই গদ্যটার খসড়া ভাবতে লাগলুম ।