সমাজ জীবনে নারীর দায়িত্ব
সমাজ জীবনে পুরুষের ভূমিকা যতই প্রত্যক্ষ এবং প্রবল হোক, মেয়েদের ভূমিকার গুরুত্ব যে অনেক বেশি একথা অস্বীকার করা যায় না।
সমাজে নারী যতক্ষণ স্থির অবিচল সতর্ক, ততক্ষণ সমাজে ভাঙন ধরার ভয় থাকে না, তা সে পুরুষ যতই উত্তাল অশান্ত উদ্ধৃঙ্খল বা বিভ্রান্ত হোক। বিপরীতটি ঘটলেই সর্বনাশ।
বিগত যুগের সমাজ-জীবনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই এই সত্যটি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। সমাজে যখনই মেয়েদের মধ্যে চিন্তায় কর্মে ধ্যান ধারণায় বিভ্রান্তি এসেছে, তখনি দেশে বিপত্তি ঘটেছে। যুগে-যুগে ইতিহাস এই শিক্ষাই দিয়ে চলেছে। প্রকৃতপক্ষে কী সমাজ জীবনে, কী পারিবারিক জীবনে, নারীই মেরুদণ্ড স্বরূপ। কারণ মেয়েদের মন স্বভাবতই রক্ষণশীল, মেয়েরাই পুরনো সংস্কার পুরনো বিশ্বাস, পুরনো মূল্যবোধগুলিকে সযত্নে লালন করে, সে ধারা বহন করে নিয়ে চলে পরবর্তী কালের দরবারে।
আর যুগের প্রয়োজনে যে অনিবার্য পরিবর্তন ঘটে সেও আসে মেয়েদেরই জীবনচর্যার পরিপ্রেক্ষিতে। সমাজ ব্যবস্থার ভারসাম্য রক্ষার্থে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে, সেও তো নারীর উপর দিয়েই। দেশে জনসংখ্যার নিরিখে কখনও তাকে শত পুত্রের জননী হবার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়। কখনও বা এক সন্তানের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই পরীক্ষা নিরীক্ষা পুরুষের উপর এমন প্রত্যক্ষগোচর নয়।
কারণ ওই একটিই।..নারীই সমাজের, তথা পরিবারের মূল কাঠামো। নারী যেমন পরিবারের পরিচালিকা, তেমনি পরিচারিকাও। সে যেমন সংসারের সেবায়, কল্যাণ চিন্তায়, উৎকর্ষ সাধনায়, মধুর কোমল অনলস, তেমনি আবার সেই সংসারের শুচিতা সভ্যতা শৃঙ্খলা রক্ষার নিয়ম নীতিতে কঠোর কঠিন। নারীর আর এক নাম শ্রী।
নারীর এই ভূমিকাটিই আসল।
ব্যক্তিগত জীবনেও আমরা তার অনেক উদাহরণ দেখতে পাই। একটি গৃহিণীহীন গৃহ শত ঐশ্বর্যশালী হলেও, তার চেহারা শ্রীহীন সৌন্দর্যহীন লক্ষীছাড়া। অপরপক্ষে নিতান্ত দরিদ্রের সংসারও একটি সুগৃহিণীর করস্পর্শে লক্ষ্মীশ্রীমতি শান্ত উজ্জ্বল।
কিন্তু বর্তমান যুগে মেয়েদের জীবনে এসে গেছে বহু জটিল সমস্যা। কেবলমাত্র গৃহকেন্দ্রে অবিচল একটি সুগৃহিণী মাত্র হয়ে থাকলেই তার চলছে না, যুগের পরিবেশে তাকে গৃহগণ্ডীর বাইরে গিয়ে বিশ্বকর্মযজ্ঞের চাকায় পেষাই হতে হচ্ছে। সে চাকার এমন কোনো খাঁজ আর আজ বাকি নেই, যেখানে মেয়েদের দেখা যাচ্ছে না।…আর বিস্ময়ের বিষয় এতখানি বিস্তৃতি আর বিস্তার মাত্র একটি প্রজন্মেই সম্ভব হয়েছে।
সেই যুগটি তো বেশিদিন বিগত হয়নি, যখন বলা হত, মেয়েমানুষের আবার বেশি বেশি লেখা পড়া শিখে কী হবে? অফিসে চাকরী করতে যাবে? না জজ ম্যাজিস্ট্রেট হবে? ধোবা গয়লার হিসেবটা রাখতে শিখলেই যথেষ্ট।
একদা এ ধরনের কথা যাঁরা অবলীলায় উচ্চারণ করেছেন, তাঁদের কেউ কেউ অথবা অনেকেই এখনও জীবিত, কাজেই নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে, মাত্র একটি প্রজন্মেই আদরের মেয়েরা তাদের ব্যঙ্গাত্মক প্রশ্নগুলিকে ব্যঙ্গ করে সাহসী জবাব দিয়ে চলেছে।… কিন্তু মুশকিল এই, এতদ্রুত এতখানি পরিবর্তনে ভারসাম্য কিছু ব্যাহত হচ্ছে। এই ভারসাম্য হারানো চেহারা দেখা যাচ্ছে সমাজজীবনে, পারিবারিক জীবনে, তথা ব্যক্তি জীবনে।
যুগযুগ সঞ্চিত, নিভৃত অন্তঃপুরের অভ্যস্ত জীবনচর্চার ধারার উপর আঘাত হানছে নতুন জীবনের জ্ঞানধারা। জানলা খোলা পেয়ে শুধু মুক্ত বাতাসই আসছে না, আসছে ধূলোবালি খড়কুটো।..আলোর সঙ্গে সঙ্গে এসে পড়ছে গৃহদাহকারী অগ্নিকণা।…অনেক দিগন্তের ইসারা আজ মেয়েদেরকে করে তুলেছে কিছুটা দিশাহারা।
বড় গোলমেলে সময়।
এহেন পরিস্থিতিতে ভ্রান্তি আর বিভ্রান্তি এসে পড়া অস্বাভাবিক নয়। সেই এসে পড়াটাই হচ্ছে জটিল সমস্যা।…ভারতবর্ষের মাটিতে দিশাহারাদের জন্য দিশারির অভাব নেই। যুগে যুগে কালে কালে মহামানবরা আসেন পথের নির্দেশ দিতে, আসেন সাধক মহাসাধকরা সে পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে, আসেন সমাজকল্যাণী, চিন্তাবিদ শুদ্ধ আত্মা জ্ঞানীপুরুষরা টালমাটাল নৌকোর হাল ধরতে। তাই বহু আঘাত জর্জরিত, এবং বহু মতবাদে খণ্ডিত ভারতবর্ষ আজও তার অধ্যাত্ম শক্তিকে হারিয়ে বসে নি। তার অবিনশ্বর সত্তাটি আছে অক্ষুণ্ণ।
সাময়িক যে বিভ্রান্তি, সে হচ্ছে পাশ্চাত্য শিক্ষা, আর পাশ্চাত্য ভাবাদর্শের অনুপ্রেরণা, প্রগতির মোহ, এবং তথাকথিত ফ্যাসানের দায়। সেকালের আদর্শটি ভাল লাগলেও, অনেকে সেকেলে বলে অবজ্ঞেয় হবার ভয়ে ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদীক্ষা চালচলন, আচার আচরণের ক্ষেত্রে নিজের রুচির বিপরীতেই কাজ করেন।
এই সেদিন একটি কম বয়সী মহিলাকে আক্ষেপ করতে শুনেছি, আমরা কেমন ছেলেবেলায় ভোরবেলা উঠে শিবপূজো পুন্যিপুকুর করেছি, খুকুকে সে সব ধরাবার সুবিধেই পেলাম না। অথচ কী ভালই যে লাগতো সেই বৈশাখের ভোরের চমৎকার আলো হাওয়ার মধ্যে ফুল চন্দন গঙ্গাজল বেলপাতা নিয়ে ধূপটুপ জ্বেলে বসতে। নিজেকে কেমন পবিত্র পবিত্র আর আস্ত একটা মানুষ বলে মনে হত।…খুকুকে ওসবের স্বাদ তো দূরের কথা মানেই বোঝানো যাবে না। ওর বাবা কাকা পিসি হৈ চৈ করে হেসে আমায় গাঁইয়া প্রতিপন্ন করে ছাড়বে।
গাঁইয়া হবার ভয় সেকেলে হবার ভয় তো কম ভয় নয়।
অথচ ওই শৈশবের ছোটখাটো ব্রত গুলিকে মূল্যহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কবির কথায়–
কুলদেবতার, গৃহদেবতার, গ্রাম দেবতার
বাহিয়া সিঁড়ি জগৎ সবিতা বিশ্বপিতার
চরণে পরাণ যায় যে ভিড়ি।
বর্তমান যুগে জ্ঞান বিজ্ঞানের পথে যতই উন্নতি আসুক, সেই ধ্যান ধারণার লক্ষ্যটি তো স্থির। রাখতে হবে। কাজেই সিঁড়ির প্রয়োজনীয়তাকে উড়িয়ে দেওয়া চলে না। শৈশবকালই তো হচ্ছে। সেই সিঁড়ির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাল।
তবে একথাও অস্বীকার করা চলে না, মেয়েদের জীবনে শিক্ষার উৎকর্ষ ও স্বাবলম্বনের আদর্শে লক্ষ্য স্থির রাখতে হলে আমাদের পারিবারিক জীবনের পুরনো ছাঁচটি যথাযথ বজায় রাখা সম্ভব নয়। অথচ সেই ভাঙা ছাঁচের টুকরোগুলিকে কুড়িয়ে নিয়েই জোড়াতালি দিয়ে গুছিয়ে সংসার করতে হচ্ছে এ যুগের গৃহিণীদের।
এ যুগে বোধহয় সব থেকে বিপদগ্রস্ত অবস্থা হচ্ছে গৃহিণীদের।
এঁদের মাথার উপর কুটিল সমালোচকের দৃষ্টি নিয়ে এখনও বিরাজ করছে রাজ্য হারানো সদ্য বিগত কালটি। প্রতিপদেই সে পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হবার চেষ্টামাত্র না করে আপন কালের সঙ্গে একালের তুলনামূলক সমালোচনায় তৎপর।…বৃদ্ধারা আপন বধূজীবনের দুঃখদশার সঙ্গে এ যুগের বধূজীবনের সুখদশার তুলনা করে শ্লেষাত্মক নিশ্বাস ফেলছেন, আর ওদিকে অনাগত কালের ধ্বজাবাহী সন্তান সন্ততিকুল সংসারকে তীব্র বেগে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে আরও ভাঙনের দিকে। অবস্থাটা বিপদজনক বইকি!
এ বিপদ আমাদের মা ঠাকুমাদের ছিল না।
বহির্বিশ্বের খবরমাত্র না জানা নিতান্ত নিরক্ষর সেই কর্ত্রীরা কী প্রবল দাপটেই কর্তৃত্ব করে গেছেন তা এখনো অনেকের স্মৃতির মধ্যেই জীবন্ত আছে। তাদের নিষেধ অলঙ্ঘ্য। তাদের রায় বিধাতার রায়। …তাদের ইচ্ছেই শেষ কথা। সে কথা অকাট্য, তর্কাতীত।
অধস্তনদের সাধ্য কি যে বাদ প্রতিবাদ করবে।
এ মহিমা আজকের গৃহিণীদের কোথায়?
তাদের তো অহরহই বাদ প্রতিবাদের সঙ্গে লড়াই করতে করতে কাজ চালিয়ে যাওয়া।
আজকাল তো আবার ভয় টয় দেখিয়েও কাউকে আয়ত্তে রাখা যায় না, ঠেকানো যায় না কোনো অন্যায় অপ্রিয় ব্যাপারকে। লোকভয়, নিন্দাভয়, সমাজ ভয়, শাস্ত্ৰভয় পাপপুণ্যের ভয়, এসবের আর দাঁত নেই, কাজেই পরিবার পরিচালিকার হাত অস্ত্রশূন্য।
অতএব তার ভূমিকা নিষ্প্রভ।
তিনি জানেন, তার কথাই শেষ কথা নয়। তার নিষেধ অলঙ্ঘ্য নয়। তার রায় বিধাতার রায় নয়।
এর কারণ এ যুগের সংসারের নতুন ছাঁচ।
মেয়েদের স্বাবলম্বনের পরিপ্রেক্ষিতেই এই ছাঁচ।
গৃহিণী যেখানে সংসারের কেন্দ্রস্থলে অচলা সেখানে পারিবারিক শৃঙ্খলাটি থাকে দৃঢ়বদ্ধ। সংসারের সদস্যদের পরস্পরের মধ্যে একটি যোগসূত্র থাকে।
গৃহিণীর সদা সতর্ক দৃষ্টি যেমন সকলের সকল প্রকার অভিযোগ অসন্তোষের নিরাকরণ করে তেমনি কিছু পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে অধস্তনদের অবিনয়, অবাধ্যতা, কর্তব্যচ্যুতি, ব্যবহারিক ত্রুটি, স্বার্থপরতা দায়িত্বহীনতা, ইত্যাদি অসৎ গুণগুলিকে।
কিন্তু গৃহিণী যেখানে সচলা? বাইরের কর্মজীবনের দায়ে দিনের অধিকাংশ সময়ই সংসারে অনুপস্থিত? সেখানে যথোপযুক্ত নিয়ন্ত্রণের আশা কোথায়?…এই অনুপস্থিতির বিনিময়ে অর্থ উপার্জন হলেও–পরিবারের পরিজনবর্গ তাদের প্রাপ্য সেবা যত্ন থেকে বঞ্চিত হয়, এবং ভৃত্য পুত্র ও কন্যারা যথেচ্ছাচারের সুযোগ পায়।
এই সব থেকেই তো অসন্তোষ অভিযোগ আর ঔদ্ধত্যের জন্ম।
কর্ত্রীর কর্তব্যে ঘাটতি ঘটলেই কর্তৃত্বের আসন টলমল করে, শাসনের অধিকার নিরঙ্কুশ থাকে না।
আধুনিক সংসারে গৃহিণীদের সমস্যাসঙ্কুল জীবনে বোধকরি এইটাই সব থেকে বড় সমস্যা শাসনের অধিকার হারানো।
জীবনের বহিক্ষেত্রে অনেক অধিকার অর্জন করলেও এই অন্তরের অন্তঃপুরক্ষেত্রে অধিকার হারানো মেয়েদের অবস্থা আজ সত্যিই শোচনীয়।
গৃহিণীর দায়িত্ব রয়েছে, গৃহিণীর মর্যাদা নেই, পরিচালনার পরিশ্রম আছে, পরিচালনার স্বীকৃতি নেই। অভিভাবিকার ভূমিকা আছে, অভিভাবিকার গৌরব নেই। এ অবস্থা দুঃখের বইকি!
আর চারিদিকে একই অবস্থা, কে কার উদাহরণ দিয়ে সামাল দেবে?
গৃহকর্তাদের অবস্থাও অবশ্য তদ্রূপ, কিন্তু তাদের জ্বালাটা কম। তারা আর বর্তমানের এই বানচাল সংসার তরণীর হালটি ধরতে রাজী নয়। হাতের হাল বৈঠা দাঁড় হাত থেকে নামিয়ে রেখে দর্শকের আসনটি বেছে নিয়েছেন। যেন মেয়েদের অবরোধ মোচনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের দায়িত্বমোচন হয়ে গেছে।
ফলশ্রুতি?
ফলশ্রুতিতে দেখা যাচ্ছে নির্লিপ্ত স্বামী, উদ্ধত সন্তান, দুর্বিনীত ভৃত্য, অবাধ্য শিশু, সহানুভূতিশূন্য আত্মীয়, উদাসীন প্রতিবেশী আর নিত্য বর্ধমান বাজারদর, এই হচ্ছে এ যুগের গৃহিণীদের সংসারের উপকরণ।
এর মধ্যে অবিচল থাকা শক্ত-বইকি।
তাছাড়া এ যুগের প্রতিটি মানুষই যেন অপরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন, আত্মকেন্দ্রিক। কাজেই অন্যের সুখ দুঃখ সুবিধা অসুবিধার প্রতি উদাসীন, পরমত সম্পর্কে অসহিষ্ণু। অথচ পারিবারিক জীবনের আসল মূলধনই তো হচ্ছে পরমত সহিষ্ণুতা, অন্যের সুখ দুঃখ সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে সচেতনতা।
কাজেই একথা বললে ভুল বলা হবে না–যুগের খাজনা যোগাতে যোগাতে আমাদের পারিবারিক জীবনের মূলধন আজ শূন্যের অঙ্কে ঠেকেছে।
সমাজ-জীবনে পুরুষের অপেক্ষা মেয়েদের ভূমিকার গুরুত্ব চিরকালই বেশি। এ যুগে তারতম্যটা আরও বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে চিরকালীন আদর্শগুলি দাঁড়াতে পাচ্ছে কোথায়?
কিন্তু দাঁড় করাতে তো হবেই।
আদর্শহীন সমাজ, বিগ্রহহীন মন্দিরের সমতুল্য। মন্দিরে বিগ্রহ স্থাপনের দরকার। দরকার– শুচিতার জন্য, পবিত্রতার জন্য, শান্তির জন্য।
সমাজ জীবনের মেরুদণ্ড যদি নারী, তো মানব জীবনের মেরুদণ্ড ঈশ্বর বিশ্বাস। ঈশ্বর বিশ্বাসহীন সমস্ত শিক্ষা সমস্ত প্রগতিই নিষ্ফলা। এই ঈশ্বর বিশ্বাসের বীজ আমাদের সন্তানদের মধ্যে যেন শৈশব থেকেই রোপন করতে সচেষ্ট থাকি আমরা।
দুঃখের বিষয়, আজ দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষাধারার মধ্যে থেকে ধর্মকেই নির্বাসন দেওয়া হচ্ছে। অথচ সকল বোধ সকল বিশ্বাসের উন্মেষ ঘটে এই শৈশব কাল থেকেই।
এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না বলে ডিগ্রী সরবরাহের কারখানা বললেই ভাল হয়। …তবে আশার কথা, সব শিক্ষামন্দিরগুলিই এমন নয়। …তথাপি একথাও ঠিক, জীবনের যথার্থ শিক্ষার ক্ষেত্র মাতৃক্রোড়।
অস্ফুটবা শিশুও মায়ের দেখাদেখি হাতজোড় করে বলতে শেখে নমো নো। অতএব ঘুরে ফিরে সেই কথাই এসে পড়ে, পুরুষের অপেক্ষা মেয়েদের দায়িত্বের গুরুত্বের কথা। মেয়েদের হাতে কেবলমাত্র নিজের জীবনটিই নয়, সমগ্র জাতির জীবনও তার হাতে। তাই শুধু নিজেকে নিখুঁত করে গড়ে তুলতে পারলেই কর্তব্য শেষ হল না, মেয়েদের কর্তব্যের সীমা আরও ব্যাপক গভীর। তার হাতেই ভবিষ্যৎ জাতি। অথবা জাতির ভবিষ্যৎ।