কী এক আত্মা-কাঁপানো ভয়ের কামড় হামেশা
খেয়েই চলেছি। বুঝি না কোন্ অপরাধে ছুঁচো, ইঁদুর, এমনকী
লাল পিঁপড়েও অস্তিত্বে দিচ্ছে হানা, যেন খেল-তামাশা
পেয়ে গেছে নিখরচায়। পাঁচ মিনিটও শান্তি দোলায় না হাতপাখা,
স্বস্তি ভুলেও রাখে না অধর ওষ্ঠে আমার। কেউ কি
আমাকে বলে দেবে কোন মোড়লের বাড়া ভাতে
ছিটিয়েছি ছাই? কোনও গেরস্তের ভিটায়
ঘুঘু চরাবার কল্পনাও তো ঘেঁষেনি মনের কোণে।
যদি নারী, শিশুর হাসি, ইয়ার বন্ধু, শান্তিপ্রিয়
মানবসমাজকে ভালোবাসা অপরাধ হয়,
যদি দুপুরের চকচকে ধারালো রোদ্দুর, চরাচর স্নিগ্ধ-করা জ্যোৎস্না,
শ্রাবণের মেঘ, জলধারা, মুক্তাঙ্গনের পুষ্পবিকাশ, পাখির উড়াল
আমাকে পুলকিত করে, আমার হবে কসুর গুনাহ্?-
হাজার বছরের সভ্যতার কাছে এই সওয়াল আমার।
তবে কেন আমাকে কাফকার নায়কের মতোই।
কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে যখন তখন,
লুকিয়ে বেড়াতে হবে দিগ্ধিদিক? কেন হিংস্র আঙুলগুলো
দহলিজে বসে ফরমান রটিয়ে
টিপে মারতে চাইবে আমার পরান-ভোমরাকে?
আমার স্বপ্ন, সাধ, কলম কেড়ে নিতে চাইবে এক ঝটকায়?
সূর্যোদয়, গোধূলিময় আকাশ, নদী আর নক্ষত্রসমাজকে
ব্যাকুল প্রশ্ন করি, আর কত রাত নির্ঘুম
কাটাব লাল চোখ নিয়ে? কখন বইবে অপরূপ
নহর খরা-পীড়িত জমিনে? কখন আসবে সেই প্রহর;
যখন অশুভের হুঙ্কার স্তব্ধতায় হবে লীন,
যুদ্ধবাজদের হাতে রাইফেলের বদলে থাকবে
সুরভিময় ফুলের তোড়া? মিলনের বাঁশি? অভ্যাসবশত স্বপ্নে
ভেসে বেড়াই আবছা ময়ূরপঙ্খি ভেলায়।
স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস দীর্ঘ অতিশয়, তবুও
মহাপুরুষদের বাণী থেকে শান্তির আভা বিচ্ছুরিত হয়, হতে
থাকবে চিরকাল। দেখি, অবাধ প্রান্তরে প্রশান্ত আলোয়
বালক বালিকারা হরিণ হরিণীর গলায় লগ্ন, মগ্ন খেলায়।
এটাই সত্য হলে, তবে কেন ঢিল খাব, ক্রুশবিদ্ধ হব?
হাজার বছরের সভ্যতার কাছে এই সওয়াল আমার।