Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কারো একলার নয় || Shamsur Rahman

কারো একলার নয় || Shamsur Rahman

অকস্মাৎ লেখার টিবিল থেকে যদি
আমাকে উপড়ে নেয়, ঘর গেরস্থালি, প্রেমিকার একরাশ
চুলের সৌরভ, সন্তানের চুমো জনপথ, কবিসভা থেকে
ঝোড়ো হাওয়া এক ফুঁয়ে আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়
পালকের মতো, হাতলে কি এ শহর হয়ে যাবে
ধনুকের প্রোজ্জ্বল টংকার?

এ রকম কিছুই হবে না। যে মচ্ছব সালঙ্করা
গণিকার অঙ্গভঙ্গি, তাতে ভাটা
গড়বার লক্ষণ দুর্লক্ষ্য আপাতত। কত নির্ঘুম রাত্রির

স্মৃতি আনে কর্কশ অস্বস্তি। সর্বদাই
নির্ঘুম কবির চোখ, অবসাদে, ক্লেশে
দু’চোখের পাতা জোড়া লাগলেও অন্য চোখ
জেগে থাকে, দ্যাখে
রাত্রির তৃতীয় যামে চাঁদ হাঁটে নীলিমার দবিজ কার্পেট,
ফুটপাতে ঘুমন্ত শিশুর
কপালে নিবিড় টিপ দিয়ে যায় খুব চুপিসারে।
তোমার সৌন্দর্য, হে স্বদেশ, আকৈশোর মুগ্ধ আমি
অনিন্দ্য ফুলের মতো তোমার এ মুখ
উন্মীলিত, যেখানেই যাই
তোমার মুখশ্রী সঙ্গী আমার এবং
দেশ-দেশান্তরে ভ্রমণের ঘোর কেটে গেলে
তোমার রূপের টানে ফিরে আসি তোমার কাছেই।
আমাকে কখনো যদি নির্বাসনে যেতে হয়, তবে দূরদেশে
কী ক’রে বাঁচব আমি তোমাকে না দেখে? ভাবি খুব
উদাসীনতায় ডুবে থাকব, অথচ
দুখিনী তোমার কথা কিছুতেই ভুলতে পারি না।

হে অনিন্দ্য ফুল,
তোমার ভেতরে ওরা ছড়িয়ে দিয়েছে মুঠো মুঠো
কীট, কালিমার গাঢ়ঝ, পোঁচড়া পড়েছে
তোমার চোখের নিচে, তবু কী সুন্দর
তুমি, রোগ শোক অর্ধাহারে। কত নোংরা
হাত সাপ হয়ে নাচে ডোরাকাটা শাড়ির চৌদিকে,
চায় দরবারি স্খলিত বসনে দেখে পেতে লালসার যৌথ বাহারের ভাগ।

তোমাকে বন্ধক রেখে পেট্রোডলারের খাদেমেরা
নিটোল মুক্তোর মতো নিজেদের আখেরকে সাততাড়াতাড়ি
পৌঁছে দেয় সাত আসমানে। স্থিতি নেই
কোনোখানে, আঙনের কোলাহলে দিশেহারা মানুষ, বনের
পশুপাল আমার জীবন ঘূর্ণিজলে
পাতা যেন, ডোবে আর ভাসে।

এই ডামাডোলে
যার রাজবেশ তার প্রত্যাবর্তনের উপলক্ষে
অসংখ্য তোরণ তৈরি হয় প্রধান শহরে, তাকে
বরণ করার জন্যে সভাসদদের
তুমুল উদ্দীপনায় শূন্য হয়ে যায় সব ফুলের নার্সারি।
জনসাধারণ বিস্ময়ের
চূড়ায় দাঁড়িয়ে দ্যাখে, কবি দ্যাখে তার
কবিতার ছন্দ ভুলে, শোনে
একটি তোরণ থেকে ভুখা শিশুদের
কান্না ভেসে আসে,
আরেকটি থেকে রাজবন্দিদের দীর্ঘশ্বাস স্বৈরাচারীদের
বিরুদ্ধে ঘৃণার উচ্চারণ,
কোনো কোনো তোরণের চিত্রিত গা বেয়ে
চুইয়ে চুইয়ে পড়ে গত ধর্মৎটে শহীদের
পবিত্র শোণিত। এরই মধ্যে নানা ডৌলে
শব্দ লিখি, ছন্দ গেঁথে যাই আর দশদিকব্যাপী
অন্ধকার থেকে
একমুঠো কালো তুলো নিয়ে
ব্যাজ পড়ি, যা নয় কখনো পরবশে,
কিংবা কারো একলার নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *