Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বৃদ্ধাশ্রম || Samarpita Raha

বৃদ্ধাশ্রম || Samarpita Raha

বৃদ্ধাশ্রম

বৃদ্ধাশ্রমে সুন্দর মনোরম পরিবেশ। প্রথম প্রথম সবার খারাপ লাগে। পিছুটান ,রক্তের সম্পর্ক বড্ড কষ্ট দেয়।সব কিছুই একসময় অভ্যেসের দাস হয়ে যায়।তখন আর কি করা যাবে !
সবাই বৃদ্ধাশ্রমে অবশেষে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করে। কেউ হয়তো দেশ ছেড়ে বিদেশে যেতে চান না তারা বৃদ্ধাশ্রমে থেকে যান সাগ্রহে।
কিন্তু বড্ড কষ্ট হয় বৌমা বরের মায়ের সেবা করে যাবে , কিন্তু বৌয়ের মা -রা বড্ড অভাগী হন। তাঁর মেয়ে শ্বশুর-বাড়িতে শ্বাশুড়ির সেবা করছে। কিন্তু তার মা হয়ত স্বামী হারিয়ে একা একা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। ছেলের মা বলে থাকেন তোমার বৌমা খুব কষ্ট,এর চেয়ে মাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে দাও।
এই জগতে সবার কম বেশি দোষ থাকে।আসলে সব ভাগ্যের ব্যাপার। বৃদ্ধাশ্রমে মধুদি আপন মনে কৃষ্ণ সাধনা করে যাচ্ছেন।উনি মাস ছয়েক এসেছেন।ফ্ল্যাটটা বড্ড ছোট।বৌমা আবার বাপের বাড়ি থেকে দুটো কুকুর এনেছে। একে এত জিনিষ তারপর ঘরে জিমখানা।কাজ লোকে করে, কিন্তু শরীরে মেদ জন্মালে লোকে কি বলবে। চলছে হাফ প্যান্ট পরে নানান শারীরিক কসরত। শ্বাশুড়ির ঠাকুর ঘর নেই।ঘরেবসে কৃষ্ণ নাম করে এতেই বৌমার আপত্তি।
বৃদ্ধাশ্রমে খাবার ঘন্টা বেজে ওঠলে সবাই বলে মধুদি চলো জলখাবার খেয়ে আসি।
মধুদি হঠাৎ বলে জানো আজ আমার নাতির জন্মদিন।
কি জানি পায়েস খাওয়াবে কিনা!তবে বিকাল থেকে নাতির বন্ধুরা চলে আসে।বড় কেক কাটা হয়।
অনেকেই বলে মধুদি দেখবে আজকে তোমার নাতি ঠিক বাবার সাথে আসবে।
মধুদি বিড়বিড় করে বলেন,আসলে আর কি হবে “কতক্ষণ আর থাকে”।আগেতো চব্বিশ ঘণ্টা আমার সাথে থাকত।
কি করবে মধুদি এখন তো কুকুরের প্রতি ভালোবাসা বেশি।
হঠাৎ বৃদ্ধাশ্রমে গাড়ি থামে, ঠাম্মা বলে ছুটে আসছে বাবুন। কিন্তু ও একা একা কেন???
বারো বছর বয়স, এতদূরে একা ওলা করে এসেছে।মধুদি বলে তুই না বলে এসেছিস!!!
ওলার টাকা কোথায় পেলি!!
বাবুন বড়দের মতো বলে ও ঠাম্মা চাপ নিও না। আমি বড় হয়ে গেছি। ঠাম্মা আমার দিব্যি তুমি বাড়িতে ফোন করলে আমার মরা মুখ দেখবে।মধুদি কি করে !!
চুপিচুপি বৃদ্ধাশ্রমের ইনচার্জ মধুদির বাড়িতে ফোন করে।ফোনটা একজন ধরে কেটে দেন। বারবার করা হলে ওপার থেকে মিনমিন করে এক মহিলা কেঁদে কেঁদে বলেন কি হয়েছে!বুড়িটা বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে শান্তি দেবে না। ফোনটা কেটে দেন।
বৃদ্ধাশ্রমে নাতির জন্মদিন পালনের ব্যবস্থা চলছে। হঠাৎ বৃদ্ধাশ্রমে মধুদির ছেলের ফোন আসে। একটু আমার মাকে ডেকে দেবেন! ইনচার্জ এবার রেগে মধুদির ছেলেকে জানান কতবার কি কারণে ইনচার্জ ফোন করেছেন। কিন্তু কেউ কথা না শুনে উল্টো পাল্টা কথা বলে ফোন কেটে দিয়েছেন।তারপর মধুদির নাতিকে মধুদির ছেলে নিতে আসে।নাতি বাড়িতে ফিরবে না। অনেক বুঝিয়ে নিয়ে যায়। রাতে মধুদির হার্ট অ্যাটাক হয়।দিন পনেরো যমে মানুষে টানাটানি।তারপর সুস্থ হয়ে সোজা নিজের বাড়ি।জিমখানা , কুকুর কিছু নেই।নাতি বিছানায় শোওয়া। ঠাম্মার সেবা যত্নে নাতি ভালো হয়। নাতি বাবাকে বলে তোমরা বৌয়ের কথায় ওঠো বসো,নুতন প্রজন্ম কি শিখবে বলো! মানুষের চেয়ে কুকুর বেশি আপন হয় কখনো!মা বাড়িতে “কতক্ষণ আর থাকে”,স্কুল,টিউশন,পার্টি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ঠাম্মা , দাদু থাকলে কত কিছু শেখা যায়।কত পৌরাণিক কাহিনী জানতে পারা যায়।
মধুদির বাড়িতে ফিরে মাঝে মাঝে বৃদ্ধাশ্রমের কথা মনে পড়ে।ভাবেন সবাই যদি পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারত!
বৃদ্ধাশ্রমে সবাই ঠেকায় পড়ে যায়। নিশ্চয় ভালো বেসে নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress