এখন আমি ষাটের কোঠার হাটহদ্দ ছুঁয়ে আছি
ঝড় ঝাপ্টা সয়েছি খুব, খানাখন্দে পড়েছি মুখ থুবড়ে কত।
হরেক রকম বিরূপতা চলার পথে ছদ্মবেশে দাঁড়ায় এসে,
বাদুড়মুখো কিছু মানুষ হেসে হেসে হিংস্র হয়ে কামড়ে ধরে।
কখনও কেউ অমানিশায় পথ ভুলিয়ে খন্দে ফেলে,
কখনও কেউ ওষ্ঠ আমার চুমোর ছলে গরল ঢালে,
কখনও কেউ বন্ধু সেজে চোরাবালির দিকে ঠ্যালে,
তবু আমি প্রেত-প্রহরে শুভকালের স্বপ্ন দেখি।
স্বপ্নে দেখি সূর্য বুকের দরজা খুলে ডাকে আমায়,
অসংকোচে প্রবেশ করি, অপরূপের জগৎ দেখি
উদ্ভাসিত দৃষ্টিপথে-অচেনা গাছ পুষ্পে ছাওয়া,
আমার প্রবীণ মৃত পিতা শাগালের নিজ গাঁয়ের ছবি
বুকে নিয়ে আছেন শুয়ে হ্রদের ধারে; আমার মৃতা মা রূপালি
চাঁদের নায়ে বসে একা কোন্ সুদূরে যাত্রা করেন;
স্বপ্নে দেখি প্রিয়তমা গৌরী মাঠে জ্যোৎস্না কুড়ায়
পুরাকালের পাণ্ডুলিপি পাখির ডানায় ভেসে বেড়ায়।
যাচ্ছি কোথায়? ডানে ঘাতক অস্ত্র নামায়, বামে নামে
ঘোর কুয়াশা। হোঁচট খেয়ে চলছি তবু আলোর আশায়,
স্বপ্ন জুড়ে অন্তবিহীন সেতু জাগে কবন্ধদের মিছিল নিয়ে;
কাঁটাতারের বেড়ায় দেখি পরীর ডানা আট্কে আছে।
পিকাসো তাঁর গোয়ের্নিকা ছুঁড়ে মারেন তালেবানি
কসাইখানায়; লোর্কার লাশে প্রজাপতির অবাধ মেলা।
ভগ্ন সেতুর কংকালে কার বাসর সাজে অন্ধকারে।
বাউলা হাসন ঢোল বাজিয়ে তারা ছিটোন চতুর্দিকে।
বাইরে আমি ছড়িয়ে পড়ি মাঝে মাঝে কিসের টানে?
আবার আমার ভেতরে যাই অনেক দূরে গহনপুরে।
ধ্যানের ছোঁয়ায় একতারাটা হাতে নিয়ে নিজের ভেতর
ঘুরে বেড়াই গেয়ে বেড়াই ধুধু মাঠে, নদীর ঘাটে।
আমায় আমি রৌদ্রে সেঁকে, ছায়ার মেখে ক্রমান্বয়ে
গড়ে তুলি, সবার মধ্যে থেকেও আছি বড়ই একা।
কেউ বোঝে না আমার গোপন রক্তক্ষরণ, ক্ষতের পীড়ন;
দ্যাখে না কেউ আমায় পোড়ায় ক্ষণে ক্ষণে কেমন আগুন।
ফাঁদ-পাতা এই জটিল পথে চলতে হবে সকল সময়,
শ্বাপদঘেরা হুমকিভরা চরাচরে থাকব আমি
কেমন ক’রে? আমার ভাঁড়ার নিচ্ছে লুটে তাতার দস্যু,
যায় যদি যাক পুঁজিপাটা, অন্তত থাক স্বপ্নপুরাণ।