জীবন্ত ভূত – 1
সময়টা শীতের। ক’দিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছিল বলেই আমাদের সময় কাটছিল না । কারণ সারাদিন ঘরে বসে কাটছিল। এরই মধ্যে বাবা বাড়ি এসে বললেন, – তোদের বুলেট কাকু আসছে ।
খবরটা শুনে আমরা ভাই বোনেরা যার পর নাই খুশি হলাম। একে শীত তাতে আবার বুলেট কাকুর গল্প জমবে ভাল । বুলেট কাকু এলে মায়ের রাগটা বাড়ে । তার কারণ টা হল লেপ, বালিশ আর বিছানার ওপরে খাবারের ডিস, বাটি, চায়ের কাপ এর ছড়াছড়ি । তার থেকে বড় রাগের কারণ বুলেট কাকুর সিগারেট খাওয়া ।
মা বাবা কে বলেছিল- বুড়ো একটা লোকের কি একটুও আঙ্কেল বলে জিনিস নেই ? নিজেও চব্বিশ ঘন্টা রাশি রাশি ধোঁয়া গিলছে । বাচ্চাদের ও গেলাচ্ছে।
– আরে বাবা, ওটা অভ্যাস।
– নিজে গিলেছে বেশ । কিন্তু বাচ্চা গুলো কে ও ধোঁয়া গেলাচ্ছে । বলিহারি বাচ্চাদের । ঐ দামড়া এলেই বাচ্চা গুলো হুমড়ি খেয়ে পড়বে বিছানায় গল্প শুনতে । বাবা ও হাসতে হাসতেই মাকে কথা শোনালো।
– সে কি গো, তিরিশের যুবক টা কে তোমার বুড়ো মনে হল ? তবে এটা বুলেট এর ভারী অন্যায় চব্বিশ ঘণ্টা বসে বসে সিগারেট খাওয়া ।
– তুমি আর বুলেট এর হয়ে গাওনা গেওনা ।
– আহা! তুমি বললে না ,ছেলে গুলো কে সিগারেট এর ধোঁয়া গেলায় । দাঁড়াও কালই বুলেট কে মানা করে দেবো এখানে আসতে ।
– মরণ আমার আর কি! যেমন বুলেট তেমন তাঁর পাতানো দাদা । কিছু বলার নেই আবার আদিখ্যেতার ও দরকার নেই ।
বাবা হাসতে হাসতেই উঠে গেল জানালার কাছে । তখনই বাবা বলল- যাই বল না কেন, ছেলেটা বাচ্চাদের ভাল বাসে।
– সেই জ্বালায় তো কিছুই বলতে পারি না । সেই হেন বুলেট কাকু এসেছে । আমায় দেখে ই বলল।
– কী রে, বাবুল না ? বাব্বা, তুই দেখি বেশ বড় হয়ে গেলি ! এবার জম্পেশ করে লেপের তলে আড্ডা হবে কি বল? রনি, বনি কোথায় ?
– বোনে রা স্কুলে গেছে । এই এল বলে । কাল থেকে আমরা তোমার অপেক্ষায় আছি । তবে কাকু তোমার স্মোকিং টা একটু কমাতে হবে।
– এই ব্যাটা, তোকে এ সব কে বলল রে ?
– কে আবার? “মাস মিডিয়া ” । আমরা জানতে পেরে গেছি যে ,তুমি স্মোক করলে তোমার যা ক্ষতি হবে তার থেকে অনেক বেশি গুন ক্ষতি হবে আমাদের ।
– বটে? ঠিক আছে। যে কয়দিন এখানে থাকছি, নো স্মোকিং । ঠিক আছে?
– পারবে?
– পারবো না মানে? না পারলে ধরে নিতে হবে আমি তোদের একটুও ভালবাসি না ।
– কাকু, আমি তোমাকে খুব ভালবাসি । বলেই জাপ্টে ধরলাম কাকু কে। উত্তরে বুলেট কাকু বলল ।- জানি রে । আমিও তোদের ভালবাসি । তাই তো ছুটে এলাম । রাতে খাওয়া সারার পর বুলেট কাকু বলল ।
– রনিতা,বনিতা আর বাবলু আজ কি গল্প শুনবি বল ?
– ভূতের গল্প । আমরা চেঁচিয়ে উঠলাম । বুলেট কাকু- না রে ,ভূতের গল্প আর ভাল লাগছে না । তোদের বরং আজ জীবন্ত ভূতের গল্প বলি। এরই মধ্যে মা যে কখন এসেছেন তা খেয়াল ই করি নি । মা বলেন,- কি গো ঠাকুর পো ,তুমি নাকি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছো ? খুব ভাল করেছ ? অযথা সুস্থ শরীর কে ব্যস্ত করা । যাই শুয়ে পড়ি । রনি,বনি আর একটু পড়ে চলে আসিস । বাবলু, কাকুর সাথে শুবি তো? আমি বললাম- হ্যাঁ মা । বুঝলি। – কাকু ,গল্প শুরু করল । বছর তিনেক আগের ঘটনা । সাব মেরিন এ চলেছি আমরা তিরিশ জন। হ্যাঁ তিরিশের মতোই হবে । সাব মেরিন অর্থাত ডুবো জাহাজ । জলের তলে চলে সাব মেরিন। ওপরে এমন ভাবে কাঁচ লাগানো থাকে যাতে ওপরের জিনিস আর দূরের জিনিস দেখা যায়।
জাহাজ ঘাটায় সিঁড়ি দিয়েই ওপরে উঠে তারপর পাড়ে নামতে হয় । আবার সিঁড়ি দিয়েই নীচের দিকে দুটো তলা পার হলে সাবমেরিন চালানোর যন্ত্র পাতি মানে মেশিনারি। প্রকৃতির আলো হাওয়ার কোন ও ব্যপার নেই সেখানে । বনি বলল- তোমার ভয় করে না বুলেট কাকু ? বুলেট বলল- না রে । ভেতরের ব্যাবস্থা দেখলে তুই বুঝতেই পারবি না যে তুই জলের তলে আছিস । আমি বললাম- কী দারুণ ! বুলেট কাকু- দারুণ তো বটেই । খাবার ঘর, রান্নার ঘর, শোবার ঘর, বসার ঘর সবই আছে । সেই রকম একটা ডুবো জাহাজ এ আমরা চলেছি । কলকাতার থেকে মাদ্রাজ এর দিকে। তারপর কি হল বুলেট কাকু ? জ্যান্ত ভুত টা এলো? – রনি বলল। বুলেট কাকু বলল- এমন বার বার প্রশ্ন করলে ভূত টা আসবে কি করে? আমি বললাম- রনি,বনি একদম চুপ করে থাক । এবার বলো কাকু । আমরা চুপ করে শুনবো ।
বুলেট কাকু বলতে শুরু করলো ।- জানিস সে রাতে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো । আমরা সবাই শুয়ে পড়েছি। রাত প্রায় দু’ টো হবে । আমি জেগে গেলাম। একটা আর্ত চিৎকার শুনে বিছানার থেকে নেমে দাঁড়ালাম। হাসান ও লাফিয়ে নেমেছে বিছানার থেকে । বুঝলাম শব্দ টা আসছে লেফটেন্যান্ট পল এর ঘর থেকেই । ছুটে গেলাম সেদিকেই। দেখলাম সবাই দরজায় দাঁড়ানো । দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। মুহূর্তে শব্দ থেমে গেল । লোহার দরজা ভাঙা সোজা কথা না । তাই সবাই সকালের অপেক্ষায় রইলাম। যে যার ঘরে ফিরে গেলাম। সকালে পল এর ডেড বডি বার করা হল।