রাশিয়ার বিশিষ্ট কবি বরিস পাস্তেরনাক
বিশ্বজোড়া খ্যাতিসম্পন্ন বরিস পাস্তেরনাকের জন্ম – ১৮১০ সালে এবং তিনি মারা যান -১৯৬০
সালে। তাঁর কবি প্রতিভা একাধারে জটিল ও
স্ব-বিরোধী।
প্রখ্যাত এক চিত্রকরের সন্তান তিনি। সঙ্গীত শিখেছিলেন স্ক্রিয়াবিনের কাছে। এবং দর্শন পড়তে গিয়েছিলেন জার্মানীতে । বিংশ
শতাব্দীর সাংস্কৃতিক নির্যাসে অবগাহন করেছিলেন তিনি। দৈনন্দন তুচ্ছতা ও পারিপার্শ্বিক কোলাহল থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার প্রবণতা স্বভাবের গভীরেই ছিল তাঁর। আর তার সাথে অন্তর্গত মানস ভুবন এমন প্রসারিত ছিল যে সচরাচর তার মধ্যে যেটুকু ধরা সম্ভব, তারচেয়েও দশগুণ বেশী ধারণ করতে পারত।
তাঁর কবিতায় পৃথিবীর যাবতীয় প্রধান ও মৌলিক পরিবর্তগুলির স্পন্দন ধরা পড়েছে।
তাঁর প্রথমদিকের লেখা কবিতাগুরি , শৈলীর দিক থেকে খুব জটিল ছিল। পরের দিকের কবিতা ধ্রপদী সারল্যে ভূষিত। সম্পূর্ণ স্বকীয় বাক্য বিন্যাস, অনুভবে ভরা প্রকাশ ভঙ্গী, বাক-প্রতিমার ব্যবহারের ফলে তাঁর কবিতা হয়ে উঠেছে বহুস্তর বিশিষ্ট। বিশ্ব-ব্রহ্মান্ডের অন্তর্নিহিত দর্শনরহস্য অপূর্ব কুশলতায় তিনি তুলেছেন তাঁর কবিতায়।
রুশ ভাষায তিনি শেক্সপীয়র ও গ্যাটের রচনা
অনুবাদ করেছিলেন।
তাঁর একটি কবিতা
——————————–
[ মূল রাশিয়ান ভাষা থেকে অনুবাদ করেছেন –
হায়াৎ মামুদ। ]
মহাবিশ্ব
————-
বিশাল হ্রদ স্বর্ণথালে মোহন মায়া
তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে মেঘের ভার
এবং আরও স্তূপীকৃত ধবল কায়া
রুক্ষপ্রাণ পাহাড়ঘেরা গ্লেসিয়ার।
একটু হলে এদিক-ওদিক আলোর খেলা
অরণ্যনী পালটে নেয় নিজের রং
এই জ্বলে তো এই ছড়ালো আঁধার-মেলা
কৃষ্ণকালো বসন আড়ে লুকোয় ঢং।
বাদলাদিন যখন বিদায় নেবার মুখে
কৃষ্ণ মেঘ সরিয়ে উঁকি দেয় নিলীমা
হাসে তখন গগন উৎসবের সুখে
মাটির ঘাসও অতিক্রমে নিজের সীমা।
বাতাস মরে, দূরান্তরে কুয়াশা কাটে
ভুবন ঘিরে ছড়িয়ে পড়ে রৌদ্রঝারি,
গুল্মেতৃণে উজ্জ্বলতা মাঠে ও বাটে
রঙিন কাচের আড়ে যেমন ছবির সারি।
গীর্জাঘরে জানলাবুকে রঙিন ছবি
সেখান থেকে চিরন্তনে তাকিয়ে কারা?
রাজাধিরাজ,সন্ত,সাধু,পুণ্যলোভী
মুকুট শিরে, আঙরাখা গায়,নিদ্রাহারা।
গীর্জাঘরের গূঢ় গভীর – ঠিক যেমনি
অপার সীমা মর্তভূমি,জানলা দিয়ে
শুনেছি কানে কোন সুদঃরের স্তোত্রধ্বনি
মাঝেমধ্যে, এই ভাগ্য এসেছি নিয়ে।
হে প্রকৃতি, মহালক্ষ্মীর গুপ্ত ঝাঁপি
বহুকালের সেবায় তোর রইব বলে
এই তো আছি গহন প্রাণের শিয়রে কাঁপি
ধন্য হয়ে আনন্দেরই অশ্রুজলে।