বাস্তব গল্প (Bastav Golpo)
রিপন আর পারছি না তো! দিনদিন মিথ্যা কথা বলছি। ভগবান আমাদের পাপ দেবেন।
মালা দেখে যাও শুধু। পরিস্থিতি অনুযায়ী বলো ।তবে কোনো দিন ওই মুহূর্ত আসবে কিনা জানিনা!!
মালা তোমার তাড়াহুড়ো করার কি আছে!
নাই বা বললে মাকে।
কিন্তু কতদিন না জানিয়ে থাকব রিপন!!
আচ্ছা মালা তুমি কি চাও??
তোমার মা ও মরে যাক!!
উফ রিপন আর অলুক্ষণে কথা বলো না ।
এমনিতেই আমাদের শরীর খারাপ, কিছু করতে পারছি না। ওদিকে ভায়ের বৌ মুম্বাই থাকে দুই মেয়ে নিয়ে ,ওরা কি করছে কে জানে! আমরা ও অপারগ।এক ভয়ংকর ভাইরাস আমার পরিবার ওদিকে মা ও বাবা একা থাকে ,ভাই কর্মসূত্রে দিল্লি থাকে।আমাদের সুখী পরিবার তছনছ করে দিয়ে গেছে।ভাই মুম্বাই থেকে বালিগঞ্জ এল তারপর সন্তোষপুরে বাবা ও মার সঙ্গে দেখা করে দিল্লি চলে গেল। একমাত্র ভাই সে একা একা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে চলে গেল। ওদিকে বাবা ও সন্তোষ পুরে থাকতেন, নার্সিং হোমে একা একা চলে গেলেন।ভায়ের যাবার পরদিন বাবা।হায় ঈশ্বর ওর দিদি ও যে ভাইরাসে আক্রান্ত, গৃহবন্দি, কিছুই করতে পারল না।যার বিয়ে দিদি দিয়েছে।যার দুই কন্যার মুখেভাতে দিদির দায়িত্ব ছিল,সে দিদির কাঁধে সব দায়িত্ব দিয়ে একা একা চলে গেল। এদিকে মা জানে ছেলে দিল্লিতে ঘরে বসে কাজ করছে।বর নার্সিং হোমে।
কতদিন কত মিথ্যে বলব রিপন।একটা ফোন ধরতে পারি না। ঠিক মত কাঁদতে পারি না।যদি মা বুঝতে পারে।একজন আশি বছরের বৃদ্ধা কিভাবে নেবে দুদিনের মধ্যে তার স্বামী ও একমাত্র পুত্র নেই। বৌমা একা কি করছে! মালা দুঃখের জোয়ারে ভাসছে। কতদিন আটকে রাখতে পারব বলে মালা কেঁদে কেঁদে বলে চলে।
ঈশ্বর তুমি এ কি করলে!
আমরা তো এক ভাই এক বোন ছিলাম।ভাই সাত বছরের ছোট , ছোট্ট দুটি মেয়ে, ভায়ের বৌ মনিষা কি করবে !!
টাকা পয়সার অভাব নেই আছে যে একাকিত্ব । মায়ের একাকিত্ব, মনিষার একাকিত্ব কে ঘুচিয়ে দেবে।
ওই শোন মা বলছে বাবু কি ফোন করেছে??
এত কাজ বাবা নার্সিং হোমে আছে , দিদি সামলাচ্ছে একটু ফোন করতে পারিস বাবু।
আর ফোন ! মায়ের বাবু তখন প্লাস্টিকে মড়ে গণদাহ হতে গেছে।
দেখতে দেখতে এক বছর হলো কর্তা ও পুত্রের সঙ্গে দেখা হয় না। বাবা নেই সেটা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।তবে ছেলের উপর বিশাল অভিমান।সে বাবার কাজে আসে নি, দিদি কাজ করেছে।তারপর একটা ফোন ও করে না। এদিকে ছেলের প্রতি অভিমান আবার অন্যদিকে ফোন করে না বলে অভিমানের পাহাড় নিয়ে বসে আছেন। তারপর মায়ের বিশাল বায়না মালাকে শেষ করে ফেলছে। অসহায় বুড়ি মা মাঝেমাঝে জিজ্ঞেস করে বৌমা ও নাতনি রা ও ফোন করে না।
মালা মনে মনে ভাবে ওরা ফোন করে তো।মাকে বাঁচাতে ওরা ফোন করে না।যদি কেঁদে ফেলে। ঠাম্মা কে তো পিসি সামলাতে পারবে না।
মিথ্যের পর মিথ্যে বলতে বলতে মালা ক্লান্ত। ঈশ্বর মা কে পারলে নিয়ে নাও। আমাদের সুখের জীবন তছনছ করে দিলে।