চকিতে একটি বাক্য মগজের কোষ থেকে একা
সারসের মতো উড়ে গেলো ডালিম গাছের
শীর্ষ ছুঁয়ে দূরবর্তী ছাদের ওপারে, তারপর
কোথায় যে। শুধু ডানা ঝাপটানি স্মৃতি
এ মুহূর্তে; সেই বাক্যে নিশি ছিলো, সমুদ্র গর্ভের
লতাগুল্ম স্মৃতি-বিস্মৃতির অনুরণন, কিছু বা
ঢাকির কাঠির নৃত্য, জলকেলি, শোভাযাত্রা ছিলো।
সেই বাক্যে পূর্বপুরুষের মুখচ্ছবি, নারীঘ্রাণ,
সৈনিকের আর্তনাদ, প্রেমিকের হৃদয়স্পন্দন,
তিতিরের কীটাহারকালীন নজর, তৃষাতুর
সাপের চলন, দীর্ঘ পথ, সান্থশালা আভাসিত।
সেই বাক্য মধ্যরাত্রি, অকপট গহন বিহান।
সেই বাক্য অকস্মাৎ আমার নিজস্ব চোখ হ’য়ে
তাকায় আমার দিকে, বলে, চলো যাই, উড়ে উড়ে
বনস্থলী, যা’ শ্যামল অনুভূতি, শহরের সব
বাড়িঘর, যা’ প্রচুর স্মৃতিময়, মাথার ভিতর
নিয়ে চলো উড়ে যাই। সেই বাক্য ইশারায় ডাকে,
আমিও কী মোহাবিষ্ট পাখার আশ্রয় পেয়ে যাই।
আমরা দু’জন-আমি সেই মগজ উদ্ভুত বাক্য,
চন্দ্রালোকে শহরের অনেক উঁচুতে উড়ে উড়ে
দূর শতাব্দীর রূপরসগন্ধ পাই, অস্তমিত
শতাব্দী কখনো হই। সকালের নাবালক আলো
স্ফুরিত হাওয়ার আগে আমার কোমল পাখা দু’টি
কাষ্ঠবৎ ভয়ানক নিঃস্পন্দ, নিশ্চল। দিকগুলি
ভয়াবহ প্রতিধ্বনি, আমাকে গিলতে আসে, আমি
ভীষণ পতনশীল, তবু আমাকেই লুফে নেয়
নারীর বুকের মতো ফুলের কেয়ারি ভালোবেসে।
একা সেই বাক্য পরিযায়ী পখিদের ছন্দোময়
মালার একটি ফুল হ’য়ে উড়ে গেলো, উড়ে গেলো।
বাক্যটির জন্যে আমি কেবলি দুঃখিত হতে থাকি।