Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আলো-ঝরানো ডানা || Shamsur Rahman

আলো-ঝরানো ডানা || Shamsur Rahman

রোজকার মতো আজো ঘুম ভাঙালো
ভোরবেলা। হাওয়ার সঙ্গে নারকেল গাছের পাতার খেলা
দেখলাম দু’চোখ ভরে। একটা পাখি
এসে নাচানাচি শুরু করলো ডালে, শিস্‌ও দিলো
দু’একবার। এই মুহূর্তে মনে হলো, কোনো শোক নেই
পৃথিবীতে; কোনো হতাশা অথবা
বিক্ষোভের কারণের কথাও মনে করতে পারলাম না। চারদিকের
শোভা আমাকে রাখলো আচ্ছন্ন করে।
এই মুহূর্তে স্তোত্র রচনা করতে পারি গাছের পাতায়
মিশে-যাওয়া রোদের, পাখির শিষের বিষয়ে। বাথরুমে
ট্যাপ থেকে টপটপানো পানি, আলনায় ঝোলানো
উপহার-পাওয়া পাঞ্জাবি, ফ্যানের হাওয়ায় ওড়া
পেঙ্গুইনের আধ-পড়া পেপার ব্যাকের স্তুতি গাইতে পারি।

আমার পক্ষে অসম্ভব নয় হৃদয়জোড়া
ভালোবাসার জয়, সামনের দিকে প্রসারিত
নির্জন পথ কিংবা সেই মন-কেমন-করা ঘর, যেখানে
আমার প্রিয়তমা বসত করে, গুন গুন করে গান গায়,
যেখানে ঝরে যায়
অনেক অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষার মুকুল, রুক্ষ জমিনে
ফুটে-ওঠা স্মিত ফুল, তার কপালে লুটিয়ে-পড়া চুল, ওর
দ্বিধা-জড়ানো খানিক দাঁড়িয়ে থাকা সিঁড়ির ধাপে,
স্তব রচনা করা।

আমার যে-মেয়ে বিদেশে গোছাচ্ছে সংসার, যাকে
দীর্ঘকাল দেখিনি, কিংবা সেই ছেলে, যাকে মৃত্যু ছিনিয়ে
নিয়ে গেছে আমার বুকের
পাঁজর খসিয়ে তাদের নিয়ে বিধুর কিছু লেখার
বেদনা আমি সইতে পারি সহজেই। দু’জনের
মধ্যে যে চিরকালীন দূরত্ব বিদ্যমান, তাকে সরিয়ে
ফেলার ব্যর্থতা অন্ধকারে আবৃত বৃষ্টির দিন যে তোলপাড়
সৃষ্টি করে মনের গহনে, যে বুলবুলি কোনোদিন
এসে বসবে না আমার ঘরের ঘুলঘুলিতে,
এসব কথাও মঞ্জরিত হতে পারে আমার খাতার পাতায়।

কিন্তু আজ ভোরবেলা আমি নিজেকে সরিয়ে
নিচ্ছি এসব থেকে। আজ বৃক্ষ, পাথর আর
নক্ষত্রের স্তবগান গাইবো না। আমি উচ্চারণ করবো
সেই মানুষটির নাম, যাকে আমি
কোনোদিন দেখিনি অথচ মনে হয় দীর্ঘকাল সে
জড়িয়ে আছে আমার দিন যাপনে,
আমার নিভৃত স্বপ্নে, যে আমার সঙ্গে কথা বলে বারবার
অন্তরঙ্গ কণ্ঠস্বরে। তার ঠোঁটের নড়া, হাসি
এবং চোখের আগুন আমার মুখস্থ,
অথচ তাকে কোনোদিন চোখেও দেখিনি।

এইতো আমি দেখছি পুরকালের বীরের ভঙ্গিতে
কোনো দুর্বার ইঙ্গিতে সে কোনো ভোজসভায় নয়,
হেঁটে যাচ্ছে ধুন্ধুমার যুদ্ধক্ষেত্রে, স্পষ্ট দেখছি সে
ছুটে চলেছে উদোম গায়ে। মেঘের গর্জনের মতো
সাহস আর অন্তহীন দেশপ্রেম ছাড়া
তার কোনো অস্ত্র নেই। সে ছুটে চলেছে শক্রদের
নির্মম ব্যুহের ভেতরে। তার যাত্রা ছিল
ফিরে না আসার মহিমা-খচিত।

ওর মা কাতর কণ্ঠে মিনতি জানিয়েছিলেন,
নুর নুর, বাছা আমায়, আয় ফিরে আয়।
কিন্তু সে ফিরে আসেনি। ফিরে আসার জন্যে
অমন করে কেউ কোথাও যায় না
বুনো বরাহের দঙ্গলে।
ওর বর্ষীয়ান পিতা, যিনি বায়ান্নোর একুশে ফেব্রুয়ারিতে
পা রেখেছিলেন ঢাকার মাটিতে,
তিনি নুর নুর বলে ডাকেন, কিন্তু এক থমথমে নিস্তব্ধতা ছাড়া
তিনি কোনো সাড়া পান না। তিনি এই পাথুরে
শহরের উপেক্ষিত
দরিদ্রমণ্ডলীর একজন, অথচ তাঁর মাথায়
জ্বল জ্বলে সোনার মুকুট, যা পরিয়ে দিয়েছে
তাঁর হৃদয়ের নুর। সেই মুকুটের দিকে তাকানোর
সময় কোথায় এই নষ্ট ভ্রষ্ট শহরের?

দু-দুটো বর্ষা বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশকে ধুইয়ে,
কিন্তু আমি সত্যি দেখতে পাচ্ছি, নেকড়ের দাঁতোর মতো
বুলেট ঝাঁঝরা ঐ যুবার বুকের রক্ত প্রবল
বর্ষার অবিরল জলও রাজপথ থেকে আজো
মুছে ফেলতে পারেনি। প্রবালের মতো জ্বলছে চাপ চাপ
রক্ত আর দেখছি ওর দুই কাঁধে

গজিয়ে উঠেছে আলো-ঝরানো ডানা। আমাদের
চোখ কখনো কখনো ঝলসে ওঠে সেই আলোয়।
না, তাকে ওরা হত্যা করতে পারেনি। তা হলে
কে অমন আলো-ঝরানো এক জোড়া
ডানা নিয়ে উড়ে যাচ্ছে মেঘে মেঘে, হেঁটে চলেছে
রাজপথে? ওর চোখে নক্ষত্রের নীড়, বাহুতে
অনির্বাণ বরাভয়। নুর, নুর, নুর, হোসেন বলে
ডাকছে রাজপথ, নদীনালা, গাছপালা, নীলকণ্ঠ
বাংলাদেশ। কখন আবার দশদিক
ওলোট পালট করে জেগে উঠবে নতুন যৌবন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress