বিবর্ণ হাতলহীন একটি চায়ের কাপ পাঁচ মুখে ঘুরে
চলটে-ওঠা বেশ নড়বড়ে টেবিলের
মাঝখানে স্থির হয়ে বসে। এক কাপের ইয়ার
পাঁচজন যুবক নরক গুলজার
ক’রে রাখে প্রায়শ দু’বেলা
নিজেদের পাড়ার ঘনিষ্ঠ চাখানায়।
এক পালকের পাখি ওরা; প্রত্যেকের
উশ্কো-খুশ্কো চুল ঘাড়ে নেমে আসা, গালে
ক’দিনের না-কামানো খোঁচা খোঁচা দাড়ি,
নোংরা নোখ, হাতা-গোটানো ময়লা
শার্ট গায়ে, কারও ট্রাউজার্স,
কারও বা পাজামা, কেউ কখনও কখনও উচ্চৈঃস্বরে
ফিল্মি গান গায় টেবিলকে
তবলা বানিয়ে, কেউ কেউ নিপুণ বাজায় সিটি। রোজগারে
মন নেই কারও, যেন ওরা মেঘচারী, নিরুদ্বেগ
দিন যায়, রাত কাটে জনকের সরাইখানায় মাতৃস্নেহে।
একদিন সে পাড়ায় ছিমছাম ফ্ল্যাটে
একজন নবীনার আবির্ভার রূপবতী বসন্তের মতো
পাঁচ যুবককে তরঙ্গিত করে; রাতারাতি যেন যাদুবলে
বিন্যস্ত ওদের চুল, পরিচ্ছন্ন গাল,
জামা পরিপাটি, নবীনার দৃষ্টি কাড়বার লোভ
প্রত্যেকের মনে লকলকে হ’য়ে ওঠে,
এক পালকের পাখি ক্রমে ভিন্ন ভিন্ন পথ ধরে।
বিবর্ণ হাতলহীন একটি চায়ের কাপ আর
ঘোরে না এখন পাঁচ মুখে। চাখানায়
সহজে আসে না কেউ, কাঁধ ধ’রে হাঁটাহাঁটি নেই।
পাঁচজন যুবকের মধ্যে কেউ নবীনার মন
শেষে জয় করেছিল কিনা, জানা নেই। কিছুকাল পর সেই
তরুণী হঠাৎ কোথায় যে চলে গেল
অসমাপ্ত লিরিকের মতো। অনন্তর চাখানায়
ফিরে আসে ঢেউ, পুনরায়
বিবর্ণ হাতলহীন একটি চায়ের কাপ ঘোরে
পাঁচজন যুবকের ঠোঁটে, মাথাভর্তি অবিন্যস্ত চুল,
গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, গায়ে
ইস্ত্রিহীন ম্লান জামা, মলিন পাজামা, ট্রাউজার্স,
অথচ কোথায় যেন একটি ফাটল রয়ে গেল।