একটু আরও কষ্ট স’য়ে কাছে গেলে পৌঁছে যাব,
একটু আরও হাঁটলে পরে পেয়ে যেতাম যা চেয়েছি।
যাত্রারম্ভে সঙ্গী ছিল অনেকজনই দলেবলে;
অনেক হেঁটে, খেটে খুটে এতটা পথ
পেরিয়ে এলাম। সদর রাস্তা, অলিগলি,
নদীতীরে, বনবাদাড়ে ঘুরে ফিরে লক্ষ্য খুঁজি।
সঙ্গী ছিল অনেক তেজী সজীব তরুণ,
পথের মাঝে পা দিল কেউ মোহন ফাঁদে;
কেউ কেউ দূরে জলাভাবে ছলাকলার মায়াহ্রদে
ঝাঁপিয়ে প’ড়ে কোথায় যেন ডুবে মরে।
কাউকে কাউকে চোরাবালি হঠাৎ পুরো গিলে ফেলে,
বাঁকা বিপথ কারও কারও দিশা ভোলায় বেলাশেষে।
পথের শেষে না পৌঁছেই মাঝে মাঝে ক্লান্ত লাগে,
ক্লান্ত লাগে, আমার বড়ই একা লাগে;
ব’সে পড়ি পথের ধারে, ঘুমের আঠায় বুজে আসে
চোখের পাতা। পথের শেষে না পৌঁছেই
এদিকে হায় আমার নিজের রসদ ফুরায় অবশেষে।
তবু আমি ভয় পাই না, ফুরায় না তো মনোবল।
ফলমূল আর গাছের পাতা খেয়ে টেয়ে, কচি কচি
ঘাস চিবিয়ে, ঘামের ফোঁটা চেটে চুটে
ক্লান্তি মুছে সাতসকালে, দিনদুপুরে, গোধূলিতে,
আঁধারে আর জ্যোৎস্নারাতে চলব পথে শেষ অবধি।
পৌঁছে গিয়ে হাত বাড়াব অভীক্ট সেই বীণার দিকে, যদি পারি
তারে তারে সুর জাগাতে দেহমনে চিরঅমা নামার আগে।
বাকি আছে একটু আরও হুমড়ি খেয়ে না গড়ালে
খাদের নিচে, দেরী হলেও পেয়ে যাব হাতের মুঠোয় যা চেয়েছি।
আখেরে হায় সিসিফাসের শ্রমের মতোই যদি আমার
সকল কষ্ট বিফলে যায়, তবু মনে উড়বে না কো খেদের ছাই;
এ ব’লে এই আলাভোলা মনকে কিছু প্রবোধ দেব-
ভবের হাটে কতজনাই ঘোরে ফেরে, ক’জনা পায় আসল রতন?