ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক দৃষ্টিতে একই দিকে
তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার অসুস্থ চোখ দুটো
হাঁপিয়ে উঠেছিল। আমার ছিপের ফাৎনাটা
মাঝে মাঝে কাঁপছিল, কিন্তু ডোবার কোনও
লক্ষণই দেখতে পাইনি। ফাৎনা ভাসতে থাকুক
লেকের পানিতে, আমি না-হয়
খানিক বেড়িয়ে আসি এদিক সেদিক থেকে। পাশের
ছায়াঢাকা পথের অন্তরঙ্গ ডাক আমাকে উন্মন করে।
পথের দু’দিকের গাছগুলোকে মনে হয় আত্মীয়;
হাঁটতে থাকি, দৃষ্টি বুলোই ধুলোয়, দূরের নীলিমায়।
দু’জন তরুণী হাত ধরে স্মিত ভঙ্গিতে হেঁটে যাচ্ছে,
একটি নারীকণ্ঠে সন্তানকে কাছে ডাকার
আনন্দধ্বনি, অদূরে এক মনোহারী দোকান থেকে
শিশুতোষ খেলনা কিনছেন একজন মাঝবয়েসী ভদ্রলোক, তার
মুখে ছড়ানো তৃপ্তির হাসি। সদর রাস্তার কিনারে
একজন নুলো ভিখিরি দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে আছে, গালভরা
খোঁচা খোঁচা দাড়ি, ওর পাশে ছেঁড়া শাড়ি পরা এক যুবতী।
যুবতী এক খিলি পান পুরে দেয় নুলোর মুখে,
নুলো ভিখিরির চেহারায় ফোটে অনুরাগের ছটাময়
দরবারি বসন্তবাহার। দৃশ্যাবলীর নানা রঙ নিয়ে ফিরে আসি।
লেকের কিনারে এসে দেখি, ফাৎনাসুদ্ধ ছিপটি
কোথায় তলিয়ে গেছে, জানতে পারিনি। অথচ কষ্ট হ’ল না
এক রত্তি। নিজেকে কী এক বৈভবে
ভরপুর মনে হয়, দৃশ্যাবলী সেতার হয়ে অন্তরে বাজতে থাকে।