আহ্ এত আতশবাজি, মালার বাহার, আলোর প্লাবন
চারদিকে। কেমন একটা মন-মাতানো সুরের
ঘূর্ণিনাচ সবুজ লন, ফুলের গাছ, গাড়ি বারান্দা, আর
বাড়ির পার্নিশকে দোল খাওয়াচ্ছে। নানা-বয়েসী
নর-নারী কবিকে ঘিরে দাঁড়িয়েছেন। হাসিমুখে
কত কথার গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দিচ্ছেন
তার ওপর। কেউ কবির কোনও কাব্যগ্রন্থের ভুল নাম
বলে প্রশংসার ঢেউ খেলিয়ে দিচ্ছেন। কেউ অন্য কোনও
কবির শস্তা কোনও পঙ্ক্তি ভেবে। এই প্রমাদ
মুখ বুজে হজম করলেন কবি। তবে সান্ত্বনা,
ধীমান এক সমঝদার মৃদু হেসে বলেন, ‘আমাদের এই কবি
এমন তরল পঙ্ক্তি লিখতেই পারেন না।
বেশ কয়েক বছর এই কবিকে নিয়ে অনেক জ্বলজ্বলে সভা,
জমজমাট আসর অনুষ্ঠিত হল; শহরের বহু সংগঠন
তাকে সামনে রেখে নিজেদের অস্তিত্বে সোৎসাহে
বিস্তর বিজ্ঞাপনের রঙ-জৌলুস মেখে নিল। আহ্ এত আতশবাজি
মাইক্রোফোনের পাড়া-কাঁপানো দাপট।
বহু বছর পর সেই কবি সন্ধ্যারাতে বসে আছেন তার
লেখাপড়ার ঘরে একা, অবসন্ন; অসুস্থতা ধেড়ে ইঁদুরের মতো
তাকে কুট কুট করে খেয়েছে। চোখের আলো
নিভে এসেছে প্রায়। অনেকদিন থেকেই
অনেকেই আসা ছেড়ে দিয়েছে বয়েসী কবির বাসগৃহে।
আজকাল কোনও অনুষ্ঠান অথবা উৎসবের
চটকদার আয়োজন নেই তার উপলক্ষে। এখন তিনি
উজাড় বাগানের মতো পরিত্যক্ত, তার কাছে রোজ
আসা যাওয়া করে একমাত্র অতিথি-
অতীত দিনের ক’জন স্মৃতি।