যখন অনেকে সগৌরবে বাণিজ্যেতে ছুটে যায়
অথবা সাধের চাকরির অলৌকিক
গুহায় প্রবেশ করে প্রত্যহ, তখন
আমি এক রূপসীর নিরিবিলি গুলবাগে যাই।
যখন অনেকে করজোড়ে গদগদ কণ্ঠস্বরে জাঁরেল
আমলা তোষণে মেতে ওঠে কিংবা নতজানু হয়
দীপ্র শিরস্ত্রাণের সমুখে, তখন
আমি সেই সুন্দরীর রূপবর্ণনায় মগ্ন হই।
যুদ্ধের মাহাত্ম্য আমি কস্মিনকালেও
করি না প্রচার, পরাক্রান্ত বীরদের গাথা লিখে নাম কিনে
ধন্য হতে চাইনি কখনো, আমি শুধু
গৃহকোণে বসে একা অক্ষর সাজাই এক নারীর উদ্দেশে।
যখন অনেকে দিনরাত্রি ম্যামনের স্তব করে
প্রাণপণে, ম্যামনের স্বর
তাদের অতৃপ্ত কণ্ঠে করে ভর, তখন আমার
কণ্ঠস্বর সবার অলক্ষ্যে কন্দর্পের কণ্ঠস্বর হয়ে যায়।
যখন অনেকে জয়োল্লাসে অতিশয় মত্ত হয়ে,
যেন যদুবংশ, কুচকাওয়াজের দৃপ্ত ভঙ্গিমায়
সমস্ত শহর করে প্রদক্ষিণ, তখন একাকী আমি গূঢ়
বেদনার পথে হেঁটে প্রিয়তমার উদ্দেশে করি অশ্রুপাত।
যখন অনেকে খুব ঝুঁকে স্থুলকায়
জাবেদা খাতার রঙবেরঙের হিশেব-নিকেশ
করে নিত্য, তখন নেহাৎ বেহিসেবী আমি, হায়,
অগোচরে কাগজে শিশিরবিন্দু, ঘাস, মেঘ, চুমো জড়ো করি।
যখন অনেকে ক্রূরতার মদিরায় বুঁদ হয়ে রয়,
তখন সবুজ গ্লাসে সুন্দরীতমার
ঢেলে-দেয়া পানিতে চুমুক
দিয়ে আমি আকুল তৃষ্ণায় আবেহায়াতের স্বাদ পেতে থাকি।
পুণ্যবানদের মতো আমার কপালে, হা কপাল,
একনিষ্ঠ নামাজ পাঠের দাগ নেই,
অথচ আমার
হৃদয়ে বেড়াই বয়ে কত দহনের চিহ্ন সারাদিনমান।