তোমাদের ডাক শুনেই ঘর থেকে
বাইরে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। অথচ
চৌকাঠে মাথা ঠুকে গেল,
কিছুক্ষণের জন্যে থমকে দাঁড়িয়ে, রক্ত মুছে
আবার পা বাড়ালাম। তখন কে এক পাখি কোত্থেকে
ডেকে উঠল নিষেধের সুর ঝরিয়ে।
আমি সেই নিষেধের ঢেউ উজিয়ে
অনুসরণ করলাম তোমাদের মিলিত কণ্ঠস্বরকে,
কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতিহত হয়ে ফিরে আসতে হলো
আমাকে, যেমন আসে তট থেকে তরঙ্গ। আমার কপালের ফোঁটা ফোঁটা
রক্ত দেখেও তোমরা
বিশ্বাস করতে পারলে না তোমাদের গন্তব্যই
আমার গন্তব্য। তোমাদের ভেতর থেকে
কেউ আমার দিকে আড়চোখে তাকাল,
কেউ কেউ ছুড়ে দিলো বিদ্রূপের পাথর, কেউবা
ঠোঁটে অনুচ্চারিত
জুড়াস শব্দটিকে নাচাল কিছুক্ষণ। তোমরা তাচ্ছিল্য আর
উপেক্ষায় আমাকে, বলা যায়,
বিতাড়িত করলে, স্পষ্টতই জানিয়ে দিলে
তোমাদের পথে আমার পদচিহ্নের
কোনো ঠাঁই হবে না।
এই কি আমার অপরাধ যে আমি
তোমাদের গলায় গলা মিলিয়ে ডুমুরপাতা
আর আকন্দ গাছে শিহরণ জাগিয়ে
দিইনি ডাক? দোর এঁটে কখনো অক্ষরবৃত্তের
কখনো মাত্রাব্ত্তের পর্বে পর্বে ছায়া আর জ্যোৎস্না
পুরে, নর্দমার গাদ ঘেঁটে হীরে
বের ক’রে সময় কাটিয়ে তোমাদের তীর্থরেণু
গায়ে মাখিনি বলেই কি
আমাকে ফিরে যেতে হলো মুখ অন্ধকার করে?
তোমরা কি আমাকে ডাকবে না আর,
যে ডাক শুনে আমার
হাড় থেকে ত্বক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে শৈবের রোদ,
যে ডাক শুনে আমার হৃৎপিণ্ড ছিঁড়ে
দিগন্তের দিকে ছুটে যাবে যৌবনের উল্লাস?
তোমাদের পথে পদচিহ্ন
আঁকার জন্যে আমাকে কি নাজেরাথের সেই
অমৃত পুরুষের মতো ঝুলতেই হবে কালবেলায় ক্রূশকাঠে?