Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » এখানে রেখেছি লিখে || Shamsur Rahman

এখানে রেখেছি লিখে || Shamsur Rahman

আমার স্বপ্নের ঘাটে বৃষ্টি পড়ে, টগবগে
সাদা ঘোড়া পা ঠোকে পিছল
মাটিতে, যদি সে পড়ে যায় মুখ থুবড়ে, পাতাগুলি
সসম্ভ্রমে ঢেকে দেবে তাকে। বজরায়
কে বধূ রয়েছে ব’সে সালংকারা? তার মনোভার
পারে না সরিয়ে দিতে স্তব্ধ নিশীথের জলধারা।

আমার স্বপ্নের ঘাটে ঈশ্বর পুত্রের আংরাখা
বুকে চেপে নারী করে অশ্রুপাত, তার
ওপর নক্ষত্র ঝরে, দেবদূত ওড়ে আর চারণ কবির
কণ্ঠস্বরে সৃষ্টি হয় জ্যোৎস্নাস্নাত মানবিক গাথা।
জগৎ সংসারে প্রতি যুগে মানব সন্তান কত
ক্রুশবিদ্ধ হয়, রক্ত মুছে যায় তাণ্ডবে, আমেন।


‘কবিকে পোছে না কেউ,’ ব’লে এক গলির মাস্তান
গুলী ছোঁড়ে মেঘের মুলুকে। কুকুরেরা চিৎকারে বমন
করে ভীতি। কবি কিশোরের পাণ্ডুলিপি
গুণ্ডার পায়ের নিচে কবুতরছানা। এই দৃশ্য দেখে কিছু
দু’চোখে অঞ্জনমাখা ভণ্ড ধর্মাশ্রয়ী হো হো হাসে, উহাদের
হিংস্র দাঁতে
জ্যোৎস্নাও পারে না দিতে সৌন্দর্য প্রলেপ। ছিন্নবেশ
উন্মাদের অট্রহাসি বরং অধিক
রমণীয় মনে হয়। বসিয়া বিজনে কেন একা মনে কবি
বৃষ্টিতে ভেজাও দুঃখ? কেন
বুকের ভেতরে জ্বালা প্রগাঢ় আগুন ছন্নছাড়া প্রার্থনায়?


বয়স ঢলেছে বটে পশ্চিম আকাশে,
তবু শব্দবোধ
সঠিক হ’ল না মঞ্জরিত। দুরাশায়
করেছি মেঘের চাষ দারুণ খরায়। চোখমুখ
হায়, জ্বলে পুড়ে যায় রোদের ছ্যাঁকায়। বৃষ্টিহীন
দীর্ঘ দিবসের ভস্মকণা
দু’চোখে ফোটায় পিন। দুঃস্থ কৃষকের,
মজুরের চালডাল চকিতে নেপোয় দেয় মেরে।

এ শ্রাবণে হায়রে এমন ঘন ঘোর বরিষায়
ফুটোময় টিনের ছাদের
তলায় এভাবে প্রাণাধিক বিবি বাচ্চা নিয়ে বাস করা দায়।

আত্মত্যাগী, রুক্ষ বুদ্ধিজীবী
ঢাউস বইয়ের পাতা চেখে নিজেকে বলেন আজো
বলেন জনসভায় ধারালো ভাষায়,
‘এ সংকটে মার্কসীয় দর্শন ছাড়া মুক্তি নেই কোনো।
কম্যুনিস্ট মেনিফেস্টো সবার মুখস্থ থাকা চাই।
সমাজতন্ত্রের কথা অমৃত সমান,
শ্রেণীচ্যুত কবি ভনে, শোনো পুণ্যবান।


কীভাবে যে বেঁচে আছি পিশাচ নগরে! দিনদুপুরেই দেখি
গুম হ’য়ে যায় লোক, নগররক্ষীরা নিদ্রাতুর,
পাহারা ভরসাছুট, সকলেই নিষ্ক্রিয় দর্শক। পচা মাংসের
দুর্গন্ধ
বেড়ে যায়; যে কোনো মুহূর্তে অন্ধকার ঘাড়ে নিয়ে
ভিক্ষুর মুদ্রায় আমি চলে যেতে পারি,
বহু পথ ঘুরে টলটলে দিঘির কিনারে এসে
শান্তিজল আঁজলায় তুলে নেব, হাওয়ায় উড়বে
বৈকালী চীবর।


এখানে রেখেছি লিখে নিজেকে নানান ছাঁদে, ছোঁও,
ছুঁয়ে দেখো, আমার হৃৎপিণ্ড কীরকম
বেজে ওঠে নিরিবিলি। শব্দগুলি মিলনপ্রয়াসী
রমণীর মতো বুক উন্মোচন ক’রে দেবে। কেউ
গৈরিক বাউল হ’য়ে একতারা হাতে এক পাক ঘুরে এ
গহন
দুপুরে উঠবে গেয়ে গান, কেউ ত্র্যাকর্ডিয়নের
রীডে তার আঙুল নাচাবে। এই লেখা অকস্মাৎ
আর্তস্বরে ব’লে দেবে হৃদয়ের উষ্ণ-অশ্রুজলে-
আমার শৈশব আর আমার কৈশোর
সেই কবে বিক্রি হ’য়ে গেছে কোলাহলে আঁশটে হাটে;
যৌবন যে বাজেয়াপ্ত হ’ল কবে, নিজেই জানি না। খুঁজে
দেখো,
আমার স্পন্দিত বুকে স্তরময় বিষাদের খনি।

এখানে রেখেছি লিখে অন্যমনস্কভাবে, নাকি
গৃঢ় ঘোরে সে গাছের কথা, নিষ্পত্র যে,
যার ডালে ভুলেও বসে না কোনো পাখি,
যে দাঁড়িয়ে থাকে দিনভরা রাতভর বজ্রাহত অভিমানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress