শেষ সম্বল
গরমের ছুটিতে দাদুর কাছে শোনা প্রত্যন্ত গ্রামের সাথে পরিচয়ের প্ল্যানটা করেই রেখেছিলাম চিঠি মারফৎ l ট্রেনপথ পেরিয়ে জলপথ (মাধ্যম নৌকা ), কোনোরকমে পৌঁছালাম সেই গল্পে শোনা পরিচিত গ্রামের আমাদের ভিটে বাড়িতে l বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নেই অগত্যা সারাদিনের ক্লান্তি শরীরে মেখে রাত পার হলো l অনেক ভোরে কৌতূহলকে প্রশ্রয় দিয়ে বেরিয়ে এলাম গ্রাম পরিক্রমায় l কবি জীবনানন্দের কবিতায় পড়া প্রকৃতি ঘেরা গাঁ একদম সেই রূপে সেজেছে গ্রাম l ঘুরতে গিয়ে দেখলাম গ্রামের কোণায় একটা ভগ্ন প্রায় কুটির থেকে খুব কাশির শব্দ.. অসুস্থ ভেবে ডাকলাম “কে ঘরে, শরীর খারাপ নাকি? “অতি কষ্টে বেরিয়ে এলেন এক শীর্ণকায় বুড়ি দিদা বললেন “কে মা? এই গ্রামে আমার খোঁজ নেওয়ার তো কেউ নেই”, আমি পরিচয় দেওয়াতে হাসি মুখে আমাকে আঙিনায় বসালেন, জুড়ে দিলাম গল্প.. l
চললো গল্প… “জানিস মেয়ে!যৌবন কালে কাঁথার ওপর নকশা করে মনের ভাবগুলো গেঁথেছি সূঁচও রঙিন সুতো দিয়ে, দেখবি? দ্বারা !” এই বলে বুড়িদিদা ভাঙা বাক্সের মধ্যে দিয়ে ইঁদুরে খাওয়া পাঁচখানা নক্সীকাঁথা বের করলেন l কি যে অপূর্ব সেই হাতের কাজ আর কতটা মায়া থাকলে এভাবে আঁকড়ে ধরে রাখা যায় কোনো উপকরণ সেদিন বুঝলাম l
বুড়িদিদার অনুমতি পেয়ে বৈশাখের মেলায় ঐ কাঁথা কটি নিয়ে জমিয়ে দিলাম আসর l কতো লোক জমা হলো,কাঁথার নিপুণ কাজ দেখে সবাই অবাক l একজন অর্থের বিনিময়ে কিনতেও চাইলেন.. তাই ছুটে গেলাম বুড়িদিদার অনুমতি নিতে l বুড়িদিদা বললেন “বন্যায় সব হারিয়েছিরে মা,ঐ কাঁথা কটা আমার শেষ সম্বল, কিছুর বিনিময়ে যে প্রাণ থাকতে পরের হাতে তুলে দিতে পারবু নি “l
সেদিন বুঝলাম স্বার্থ,লালসা কখনো পবিত্র বিবেককে ক্ষত করতে পারে না l হাজার কষ্টের মাঝে নক্সীকাঁথা কটি ছিল বুড়িদিদার একমাত্র “শেষ সম্বল “ll