Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হারিয়ে পাওয়া || Rimpa Laha

হারিয়ে পাওয়া || Rimpa Laha

হারিয়ে পাওয়া

পাহাড়ী রাস্তা । স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন সোমদত্তা সান্যাল।দার্জিলিং এর যনাথন স্কুল এর গানের শিক্ষিকা । পনেরো বছর ধরে এই স্কুলে রয়েছেন । বেশ অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছিলেল । পিছনে একটা গাড়ি অনেকক্ষণ থেকে হর্ণ বাজাচ্ছে । কিন্তু তিনি খেয়াল করেননি । অবশেষে ধাক্কা খেয়ে আহত হন । ওই ট্যুরিষ্ট গারিটিতে ছিল এক নব বিবাহিত দম্পতি । তারা তৎক্ষণাৎ সোমদত্তাকে গাড়িতে তুলে কাছাকাছি একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় । হসপিটালে প্রাথমিক চিকিৎসা করে ওনাকে ছেড়ে দেওয়া হয় ।ছেলেটি ওনাকে ওদের হোটেলে নিয়ে এসে পরম যত্নে ওনাকে বিছানায় শুইয়ে দেয় ।
ছেলেটির নাম সোহম আর তার স্ত্রী অপরাজিতা । দুজনের দেখাশুনা করেই বিয়ে । তার মতে Long term relation গুলো বিয়ের পর ভালোবাসা হারিয়ে মৃত শব হয়ে ঘুরে বেড়ায় ।এর পিছনে একটা কাহিণী আছে । সোহোম বার বার বিষয়টা এড়িয়ে গেছে ।আজ অপার জবরদস্তিতে সোহোম বলতে শুরু করে ।
বছর কুড়ি আগের কথা । তখন আমি খুব ছোটো ।শুনেছি 11 বছর প্রেম ছিল ওদের । মা অরফ্যান । মামার বাড়ি মানুষ । পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে দুজন । তাই মামারা কোনো সম্পর্ক রাখেনি । ঠাকুমা সহ্য করতে পারত না মাকে । তাই মায়ের সাথে ঠাকুমার খুঁটিনাটি লেগেই থাকত । হঠাৎ একদিন বাবার চাকরিটা চলে যায় । বাধ্য হয়ে মা চাকরির চেষ্টা শুরু করে । কিছুদিন পর একটা চাকরি পায় বেসরকারি ফার্মে । মায়ের ফিরতে সন্ধ্যে এক এক দিন রাতও হয়ে যেত । বাবাকে ঠাকুমা ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কথা বলত । সব কথার মানে ঐ বয়সে ঠিক বুঝতে পারতাম না । মা বাড়ি ফিরলেই বাবা মায়ের সঙ্গে খুব ঝগড়া করত । মায়ের গায়ে হাত তুলত । আমিও তখন সারাদিন মাকে কাছে পেতাম না । তাই অভিমানে মায়ের থেকে দূরে দূরে থাকতাম ।
মা আমায় জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদত । কাছের বলতে তো কেউ ছিল না ! এরপর বাবা একটা কাজ পায় । মাকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলে । মা রাজী হয়না । অশান্তি চরমে ওঠে । ঠাকুমার প্ররোচনায় বাবা ডিভোর্স ফাইল করে । আমাকে বোঝানো হয় কোর্টে যদি আমায় জিজ্ঞেস করা হয় আমি কার কাছে থাকতে চাই আমি যেন বলি বাবার কাছে । তার জন্য আমাকে অনেক ক্যাডবেরি ও আইসক্রিম দেওয়া হবে । কতো বোকা ছিলাম আমি !! সেদিন মা অনেক কেঁদেছিল আমাকে হারিয়ে । তারপর থেকে আর মায়ের খোঁজ কেউ নেয়নি । “তোর মা আজও কাঁদে ঋক ।” বহুদিনের ফেলে আসা ডাকনাম শুনে চমকে তাকায় দরজার পাশে দাঁড়ানো মহিলার দিকে । আপনি ?? আমিই তোর সেই অভাগী মা ! সোহম দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে মাকে । আমায় ক্ষমা করো মা । মায়ের থেকে আপন আর কেউ হয়না রে ঋক । তোর বাবা কেমন আছেন ? তোমায় তাড়ানোর পর ঠাকুমা তার পছন্দের মেয়ের সাথে বাবার বিয়ে দিয়েছিল । আমায় খুব মারত কষ্ট দিত । ঠাকুমাকে slow poison করে মেরে ফেলে । তারপরই বাবার হার্ট অ্যাটাক টা হয় । তখন থেকেই বাবা প্যারালাইসড । তারপর ঐ মহিলা কোথায় যেন চলে যায় ।খুব অনুতপ্ত বাবা । অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছেন । ফিরে চলো মা — বলে মাকে জড়িয়ে ধরে সে ।দুজনেই কান্নায় ভেঙে পড়ে ।এই দেখো তোমার বৌমা ।তোমাকে না নিয়ে আমরা এখান থেকে যাবো না ব্যাস । শোনো পাগল ছেলের কথা । ওরে সন্তান ছাড়া মা যে বড্ড অসহায় । আমার শেষ বয়সের লাঠি হতে পারবি তো ? পারবো মা । তোমার সব চোখের জল আমি সুখের চাদরে ঢেকে দেবো । পনেরো বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সেই মায়াবী হাসিটা আজ আবার উঁকি দিচ্ছে মায়ের মুখে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress