স্বর্গীয় সুখ
রাত তখন একটা । পাশাপাশি শুয়ে রুদ্র আর অহনা । বছর দুয়েক হলো ওদের বিয়ে হয়েছে।
এখনো পর্যন্ত ওদের কোনো ইস্যু হয়নি ।সেই নিয়ে নিত্য গোলোযোগ , শ্বশুর – শাশুরির মুখ ঝামটা , ইনিয়ে বিনিয়ে কথা শোনানো সেইসব তো লেগেই আছে ।তার মধ্যে রুদ্রের মা আজ অহনার মাকে ফোন করে বলেছে — আপনার মেয়ের কি কোনো সমস্যা আছে ? আপনার দাদা বলছিলো ডাক্তার দেখাতে হবে নাকি? আরো কি সব বলেছে , সবটা বলেনি অহনার মা ।সেই সব নিয়েই কথা হচ্ছিল দু’জনের ।রুদ্র একটা ভালো ডাক্তারের সন্ধান পেয়েছে ।ঠিক হয় সকালেই এই কথা তার বাবা মাকে জানাবে ।
পরদিন অহনা ঘুম থেকে উঠে সূর্য প্রণাম করছে সেই সময় তার কানে আসে আজ দত্ত বাবু বলছিলেন তোমার নাম করে অমুকের ছেলের অনেকদিন বিয়ে থা হয়েছে এখনো বাচ্ছা কাচ্ছা হয় নি । এত খারাপ লাগছিলো আমার ।কি জনি কি হবে । এমন একটা বউ বাড়িতে এলো !এসব শুনে চোখের জল মুছতে মুছতে স্নান করতে চলে গেলো অহনা । স্নান সেরে আনাজ কাটতে বসেছে এমন সময় তার শাশুড়ি বলছে জানো বৌমা তুমি যে লঙ্কা গাছটা বসিয়েছিলে ওটা বাঁজা গাছ । ওতে ফল ধরেনি , ফল ধরবেনা মনে হয় । অহনার কানের কাছে বাঁজা শব্দটা বার বার ঘুরপাক খেতে লাগলো । সে বুঝলো শব্দটা তার উদ্দ্যেশ্যেই বলা ।চোখের জলটা সামলে নিলো সে । জানো বৌমা পাশের ফ্ল্যাটের যে বিট্টু আছে না ওর বৌয়ের বাচ্ছা হবে । বিট্টুর বাবা বলেছে তোমার বাপিকে । তোমার বাপি এসে কতো দুঃখ করছিলো ।পাড়ায় কারোর বাচ্ছা হবে শুনলেই অহনা কুঁকড়ে যায়।সে জানে সেই নিয়ে তাকে কত কথাই না শুনতে হবে ।
আকাশটা আজ সকাল থেকেই মেঘলা করে আছে । প্রচন্ড গুমোট করে আছে । দুপুরে খাওয়া সেরে নিজের ঘরে জানলার ধারে বসেছিলো অহনা । পাশের বাড়ির ছাদে কতো হুনুমান এসেছে ।একটা হনুমানের কোলে একটা ছোটো বাচ্ছা ।মনে হচ্ছে সদ্যজাতো ।পরম মমতায় মা হনুমানটা আগলে রেখেছে তাকে । অহনা ভাবে পশু পাখি কেউই মাতৃত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয় না ।ফাঁকি শুধু তার বেলায় । এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখদুটো আবছা হয়ে এসেছে সে বুঝতেই পারেনি।এমন সময় হঠাৎ করে কয়েক ফোঁটা জল আর একটা ঝোরো শীতল বাতাস স্পর্শ করে তাকে
ঠিক শীতল চামরের মতো।
মাস দুয়েক হলো নতুন ডাক্তার দেখাচ্ছে ওরা । সেই নিয়েও নানান কথা । কাছাকাছির ডাক্তারে কি আর কাজ হয় । সব সময় অসুখ । শারীরিক চাওয়া পাওয়াগুলোও এখন শুধুই তাগিদ । প্রতিবার মিলনের চরম ক্ষণে অহনা শুধু ঈশ্বরকে ডাকে — এবারটা সফল কোরো ঈশ্বর ।
মাস দেড়েক হলো পিরিয়ড বন্ধ অহনার । এরাম প্রায়ই হয় । অনেক বার test করেও ব্যর্থ হয়েছে সে । আজ আরো একবার মনে জোর নিয়ে ঈশ্বরকে স্মরণ করে kit টা হাতে নিয়ে bathroom গিয়ে test করলো ।হঠাৎ করে আবিষ্কার করলো report positive . অনাবিল আনন্দে মনটা ভরে গেলো অহনার ।নিজের চোখকেই সে বিশ্বাস করতে পারছে না ।সেও মা হবে …..আর পাঁচজনের মতো…..আর কোনো খোঁটা নয় গন্ঞ্জনা নয়…..তার কোলেও খিলখিলিয়ে হাসবে একটা ফুটফুটে শিশু অবিরাম !