শীতলষষ্ঠী-গোটাসেদ্ধ কাহিনী
দেবর্ষি নারদ নারায়ণের কাছে জানতে চেয়েছেন ষষ্ঠী দেবীর কথা তার নামের ও পূজার মাহাত্ম্য। নারায়ন বলে চলেছেন—- ষষ্ঠী হলেন বালক গণের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। বিষ্ণুমায়া প্রকৃতির ষষ্ঠ কলা বলে ষষ্ঠী নামে সম্বোধিতা হয়েছেন। এই দেবী নিরন্তর শিশুসান্নিধ্যে থাকতে পছন্দ করেন। প্রিয়ব্রত নামে স্বায়ম্ভূব মনুর পুত্র কে ষষ্ঠী জানিয়েছে যে তিনি ব্রহ্মার মনসিজা। বিধাতা আপন মন থেকে তাকে সৃজন করে কার্তিককে সম্প্রদান করেছেন। ইনি ষোডশ মাতৃকার মধ্যে স্কন্দ পত্নী সুব্রতা দেবসেনা নামে এক মাতৃকা। জগতে ইনি ষষ্ঠী নামে পরিচিতা। ইনি সন্তানহীনকে সন্তান, দারিদ্র্যকে ধন সম্পদ এবং কর্মহীনকে কর্ম প্রদান করে থাকেন। রাজা প্রিয়ব্রত প্রতি মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে মহোৎসবে তার রাজ্যের ষষ্ঠী দেবীর আরাধনা করেন। তেমনি নিজের প্রজাবৃন্দ কে নবজাতকের কল্যাণ কামনায় ষষ্ঠ ও একবিংশ দিবসে তিনি শ্রদ্ধা সহকারে ষষ্ঠী দেবীর পূজার নির্দেশ দেন। সুতরাং সন্তানের কল্যাণ কামনায় ষষ্ঠী দেবীর পূজাপ্রচলিত হলো।
শ্রী পঞ্চমী সরস্বতী পুজোর পর দিন এই শীতল ষষ্ঠী উদযাপিত হয়। পশ্চিমবঙ্গীয় দের মধ্যে এই লোকাচার টি দেখতে পাওয়া যায়। শীতল ষষ্ঠীর প্রধান উপাচার হলো গোটা সেদ্ধ। এই পূজাকে “ষষ্ঠীর অরন্ধন” বলে! শ্রীপঞ্চমী দিন রান্না করা হয়ও ষষ্ঠীর দিন অরন্ধন পালন করে পান্তাভাত, গোটা সেদ্ধ ,দই খেতে হয়। এই রান্না আমিষ! “মাছের ঝাল” রান্নার প্রধান পদের একটি! 5 ভাজা মাছের ঝাল চাটনি এবং প্রধান উপাচার হল গোটা সেদ্ধ। খোসাশুদ্ধ বিরির ডাল বা মাষকলাই খালি কড়ায় টেলে নিতে হয়। গোটা সেদ্ধ র জন্য ছোট গোল আলু রাঙ্গা আলু মটরশুঁটি শিম বেগুন পালংশাক গোডাশুদ্ধ” পুঁইশাকের ছয় টুকরো সজনে ফুল ও টোপাকুল ছটি” সব একসঙ্গে ডালের সাথে দিয়ে হাড়িতে করে সেদ্ধ করতে হয়! গোটা সেদ্ধ রান্নার পর আর রান্না করা চলবে না! রান্না শেষে শিলপাটা কে হলুদ কাপড়ে ঢেকে ছটি সিঁদুরের ফোটা দিয়ে প্রণাম করতে হবে! এটি মা ষষ্ঠীর প্রতীক। পরদিন এই পান্তাভাত ওসব তরিতরকারি গোটা সেদ্ধ খেতে হয় এদিন গরম খাওয়া নিষিদ্ধ। কথিত যে গোটা সেদ্ধ র ঔষধি গুন আছে। এইসময় বসন্ত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে এই গোটা সেদ্ধ ওই রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বাঙালির দেবতা জীবন্ত। এখানে আধ্যাত্মিক জগত টাকে বুকের মধ্যে টেনে আনা হয়েছে সরল ভঙ্গিমায় কথকতার মাধ্যমে। তাইতো বাঙালি জনমানস আন্তরিকভাবে হৃদয় দিয়ে গ্রহন করেছে এই লোকাচার কে।