জীবন দান
টোটো স্ট্যান্ডে আজ টোটো রাখতে দেরী হয়েছে রামুর, সকালে বৌএর সাথে একচোট কথা কাটাকাটি করে বেরোতে দেরী, একে বাজার মন্দা তারউপরে বৌ এর নেই নেই লেগেই আছে, বোঝো ঠেলা!
টোটোতে বয়স্ক অনন্ত বাবু উঠলেন রামুর মুখচেনা, তারপর এক অফিস বাবু,উঠেই বলতে শুরু করলেন কতক্ষণে ছাড়বে, চলো চলো অফিসে দেরী হয়ে যাবে আজ! রামু বিরক্ত গলায় বলে ওঠে দাঁড়ান,আর দুটো সিট ভরুক, নাকি আপনি টাকা দিয়ে দেবেন,হেঁ হেঁ,অফিসবাবু বেগতিক বুঝে চুপ করে গেলেন। দুজন ভদ্রমহিলা সেই সময় টোটোতে উঠে বসতেই রামু টোটো চালাতে শুরু করে বলে উঠলো পাঁচ মিনিট ও স্ট্যান্ডে দাঁড়াই নি, আর কোনো কথা হবে না। বয়স্ক ভদ্রলোক বলে ওঠে বাবা আমাকে একটু ব্যাঙ্কের গলিটার সামনে নাবিয়ে দিও,আজ শরীরটা ভালো নেই, পেনশন তুলতে হবে তাই বেরিয়েছি।
ভদ্রমহিলাদের নামিয়ে দিয়ে রামু টোটো এগোয়,এমন সময় অফিসবাবু বলে ওঠে একি কাকু আপনি এতো ঘামছেন কেন?কথাটা শুনে রামু পেছনে তাকিয়ে দেখে ভীষণ ঘেমে গেছেন অনন্তবাবু,টোটোটা রাস্তার ধারে দাঁড় করাতেই বমি করতে শুরু করেন তিনি, রামু তাড়াতাড়ি জলের বোতলটা বাড়িয়ে দেয়, অন্যদিকে টোটোর একদিকে অফিসবাবু সিঁটিয়ে বসে আছেন, অনন্ত বাবু বমি করতে থাকেন, রামু ভয় পেয়ে অফিসবাবু কে বলে চলুন ওনাকে বরং সামনের হাসপাতালে নিয়ে যাই দাদা,অফিসবাবু তিড়িং করে টোটো থেকে নেমে বলে আমার লেট হয়ে যাবে তুমি বরং ওনাকে নিয়ে যাও,আমি অন্য টোটো ধরে নেবো,এনাও তোমার ভাড়া ২০ টাকা, রামু হেসে বলে থাক বাবু,আপনি এগোন,আপনারা অফিসবাবু ভদ্রলোক সময়ের অনেক দাম,আমরা ছোটলোক, দেখি কি করতে পারি!
রামু জল দিয়ে অনন্তবাবুর মুখ,হাত, পরিষ্কার করে দেয়, বলে কাকু হেলান দিয়ে বসুন,আমি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি,অনন্তবাবু কোনমতে বসেন টোটোতে,রামু হাসপাতালে টোটো নিয়ে পৌঁছে যায় হাসপাতালে, ততক্ষণে টোটো বমিতে ভর্তি হয়ে গেছে,হাত ধরে নামায় অনন্তবাবুকে,আউটডোরে নিয়ে যেতে ডাক্তারবাবু ইনজেকশন দেন ও বলেন ভর্তি করতে হবে ওনাকে,
রামু বলে ডাক্তারবাবু আপনি যা দরকার করুন আমি ওনার বাড়ির লোকদেরকে খবর দিচ্ছি, অনন্তবাবুকে জিজ্ঞেস করে বাড়িতে কে আছে? অনন্তবাবু বলেন ছেলে আজ বাড়ি আছে,রামু ফোনে সব জানালে ছেলে গৌরব হাসপাতালে আসে, রামু ও গৌরব দুজন মিলে ওনাকে ভর্তি করে,ডাক্তারবাবু বলেন হালকা স্ট্রোক মনে হয়, এখন আর বিপদ নেই, তবে কিছু টেস্ট করাতে হবে। অনন্তবাবু ছেলেকে বলেন, আজ রামুই আমার প্রাণ বাঁচালো! গৌরব বলে তোমায় কি বলেযে ধন্যবাদ দেবো!এই ৫০০ টাকাটা রাখো,আজ সারাদিন তো তোমার হাসপাতালেই কেটে গেলো। রামু বলল না দাদাবাবু টাকা আমার চাই না, আপনি বরং কাকাবাবুকে সাবধানে রাখুন, একা বেরোতে দেবেন না, অনন্তবাবু বলে ওঠেন তোমার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো বাবা এটুকু তুমি নাও, আজ থেকে আমার দুই ছেলে, তুমি তোমার ফোন নাম্বার আমার ছেলেকে দিয়ে যাও,আবার তো আমাদের দেখা হবেই……..