মুক্তমনা
যদু মধুকে ডেকে বলছে, এমন মারব, বাবার বিয়ে দেখিয়ে ছাড়ব।
দেখাতে হবে না আর, কলকাতার সায়নবাবু দেখিয়েছেন বাবার বিয়ে।
সমাজ মুক্তমনা হচ্ছে।
কোনও মারামারি বা রাগারাগি ঘটেনি। বরং এক মিষ্টি সম্পর্ক গড়ে দিলেন সায়নবাবু।
প্রেম শুধু বয়স নয়, প্রেম মানে না জাত–ধর্ম–বর্ণ–সীমান্ত কিচ্ছু! প্রেম শুধুই প্রেম! এক মনের সঙ্গে অপর মনের মিলন।
কলকাতার বাসিন্দা তরুণ কান্তি পাল জীবনের ৬৬টি বছর পার করেছেন। স্ত্রী গত হয়েছেন দশ বছর আগে।চাকরি সূত্রে ছেলে বিদেশে থাকায় নিঃসঙ্গ ছিলেন তিনি। কিন্তু পথের বাঁকে যে বাঁচার নতুন রসদ অপেক্ষা করেছিল, তা কল্পনাও করতে পারেননি তরুণ কান্তিবাবু। বছর দুয়েক আগে অবসর নেওয়ার পর রোজ নিয়ম করে আশ্রমে সকাল-বিকেল হাঁটতে যেতেন। আর সেখানেই আলাপ হয় বছর তেশট্টির স্বপ্না রায়ের সঙ্গে। আলাপ হঠাৎ অনুরাগে বদলে যায়।
একে অপরের কাছে দুজনেই পরিচিত হতে থাকে আর সম্পর্কের বাঁধুনি মজবুত হয়ে ওঠে। ফোন নম্বর আদানপ্রদান করে শুরু হয় কথা বলা, শুরু হয় পথ চলা। একদিন দু’জনেই বুঝতে পারেন, একে অপরকে হৃদয়ে জায়গা দিয়ে ফেলেছেন। স্বপ্না রায়ও নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছিলেন।
মনে পড়ে — ‘শহরটা যেন বৃদ্ধাবাস হয়ে গেল!’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মুখের সংলাপ।
এই দুঃসময়ে জীবনের প্রান্ত বেলায় দুই নিঃসঙ্গ আত্মা যেন পরিপূর্ণ হল দু’জনকে পেয়ে। তাই দুজনেই সিদ্ধান্ত নিলেন প্ৰেমকে তাঁরা বিয়ের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা দেবেন। কিন্তু এই বয়সে নতুন সংসার পাতলে কি সমাজ মেনে নেবে? তিরস্কারে জর্জরিত হতে হবে না তো? এসব নানা ভাবনা মাথায় পাক খাচ্ছিল কান্তি বাবুর। তাই ছেলেকে জানিয়েই পদক্ষেপ নিলেন কান্তিবাবু। সব কথা জেনে কানাডা বাসি ছেলে সায়নও মত দিলেন।
নিজেই বাবার বিয়ের আয়োজন করতে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে কানাডা থেকে কলকাতায় চলে এলেন।
বাবা সঙ্গী পেয়েছেন, বাবা সুখী হবেন, মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন, তার চেয়ে ভালো সন্তানের জীবনে আর কিছু হতে পারে না।
এইভাবে সমাজের তথাকথিত ভাবনা থেকে বেরিয়ে বাবার বিয়েতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অবশেষে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বাবা এবং নতুন সঙ্গী মায়ের বিয়ে দিলেন।
তাই বলা যেতে পারে, বাবার বিয়ে দেখিয়ে ছাড়ল ছেলে।