Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বাউল প্রকৃতি মানবতাবাদী || Suchandra Basu

বাউল প্রকৃতি মানবতাবাদী || Suchandra Basu

বাউল সম্প্রদায়ের উদ্ভব সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য জানা যায় না। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে বাউল শব্দের প্রয়োগ দেখা যায়। মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়, কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থে ‘বাউল’ শব্দের ব্যবহার আছে। তাই অনুমেয় পঞ্চদশ শতকের পূর্ব থেকেই বাংলাদেশে বাউল সসম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ছিল। এক গবেষণায় জানা যায় পারস্যে অষ্টম শতকে ‘বা আল’ নামে সুফি সাধনার একটি শাখা গড়ে ওঠে।তারা ছিল সঙ্গীতাশ্রয়ী এবং মৈথুনভিত্তিক গুপ্ত সাধন পন্থী।মরুভূমির বিভিন্ন অঞ্চলে তারা গান গেয়ে বেড়াত।তারাই এক সময় ভারতীয় উপমহাদেশে আসে এবং বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।এভাবেই বাংলায় বাউল সম্প্রদায়ের আগমন ঘটে।

বাউলদের আচার আচরণ অদ্ভূত বিচিত্র। তাই তাদের ‘পাগল’ বলা হয়।সংস্কৃত বাতুল (পাগল কাণ্ডজ্ঞানহীন) ও ব্যাকুল (বিহ্বল উদ্ভ্রান্ত)শব্দদ্বয়কে উৎপত্তিমূল বলে মনে করা হয়।কেউ কেউ পারসি ‘বা আল’ বা আরবি আউলিয়া(বন্ধ,ভক্ত) শব্দ থেকে বাউল শব্দের উৎপত্তি বলে মনে করেন।’ বা আলরা’ তাদের প্রেমাস্পদের উদ্দেশ্যে মরুভূমিতে ‘পাগল’ বা ক্ষ্যাপার মত গান গেয়ে বেড়ায়। তারা সংসার ত্যাগী এবং সকল বাধা বন্ধনহীন।বাউলরাও অনেকটা এইরকম। সুফি সাধনায় যিনি সাধকের পরমারাধ্য তিনিই বাউলের মনের মানুষ। বাউলদের মতে তাঁর অবস্থান মানবদেহে।বাউলরা তাঁকে স্বামী,গুরু, পথনির্দেশক ইত্যাদি নামে অভিহিত করে এবং তাঁরই সান্নিধ্য লাভে পাগল হয়।

বাউলদের দুটি শ্রেনী।গৃহত্যগী বাউল ও গৃহী বাউল।যারা গুরুর নিকট ভেক খিলাফৎ-এর মাধ্যমে দীক্ষা গ্রহণ করে তাদের ত্যাগী বা ভেকধারী বাউল বলে।এরা সংসার ও সমাজ ত্যাগী। ভিক্ষাই এদের একমাত্র পেশা।আখড়ায় আখড়ায় তারা ঘুরে বেড়ায় এবং সেখানেই সাময়িকভাবে অবস্থান করে।তারা সন্তানধারণ বা প্রতিপালন করতে পারে না।এধরনের জীবনকে বলা হয় জীবন্মৃত।মহিলাদের বলা হয় সেবাদাসী। সেবাদাসীরা বাউলদের সাধন সঙ্গিনী।একজন পুরুষবাউল একাধিক সেবাদাসী রাখতে পারেন।

গৃহী বা সংসারী বাউলরা স্ত্রী পুত্র পরিজন সহ লোকালয়ের স্বতন্ত্র পাড়ায় বাস করে।সমাজের অন্যদের সঙ্গে তাদের ওঠাবসা বিবাহ নিষিদ্ধ। এরা কলমা বা বীজমন্ত্র পাঠ এবং কিছু নির্দ্দিষ্ট সাধন ভজন অনুসরণ করে। ভেকধারী বাউলরা গৃহী বাউলদের দীক্ষা দিয়ে থাকে।দীক্ষা নেওয়ার পর সন্তান ধারণ নিষিদ্ধ। তবে,গুরুর অনুমতি পেলে কেউ কেউ সন্তান ধারণ করতে পারেন। বাউল মতে দীক্ষিত হওয়ার পূর্বে বিবাহ হয়ে থাকলে নতুন করে অনুষ্ঠান করতে হয় না।ত্যাগী বাউলদের সেবাদাসী ‘কণ্ঠিবদল’ করে একজনকে ছেড়ে অন্যজনের সঙ্গে চলে যেতে পারে।

আখড়া বাউল ফকিরদের সাময়িক আবাস্থলের নাম ‘আখড়া’।এই আখড়া পল্লীগ্রামের লোকায় থেকে দূরে অবস্থিত।সাধারণত সংসারত্যাগী এবং ভেকধারী বাউলরাই এখানে অবস্থান করে।

বাউল সম্প্রদায় অতীতকাল থেকে একশ্রেণীর মানুষের কাছে যেমন সমাদৃত তেমনই গোঁড়া সম্প্রদায়ের কাছে ধিকৃত ও নিন্দিত।

হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ই বাউলদের প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন ছিল। কারণ বাউলরা শাস্ত্রাচার ও জাতিভেদ প্রথাকে মানে না।তারা দেহবাদী এবং আধ্যাত্মসাধনায় নিয়োজিত থাকে।এই সাধনায় নারীকে তারা সঙ্গিনী হিসাবে গ্রহণ করে।তাদের সাধনা প্রেম নির্ভর,আধ্যাত্মবাদী হলেও মিথুনাত্মক যৌনাচারমূলক।তাই সুশীল সমাজ কর্তৃক নিন্দিত। বাউল গানের একটি বৈশিষ্ট্য হল,এতে একটা উদাসী ভাব লক্ষ্য করা যায়। এর সুরে যেন মিশে থাকে- না পাওয়ার বেদনা। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে বাউল গানে সুরের পার্থক্য রয়েছে। পশ্চিমবাংলায় সহজিয়া বৈষ্ণব সুরের আধিক্য এবং বাংলাদেশে সুফি গজলের প্রভাব দেখা যায়। বাউল গানের একাধিক ঘরাণা আছে।যা সাধন ভজন সংক্রান্ত। বাউল গানে নানা তত্ত্ব কথা আছে।যেমন দেহতত্ত্ব,গুরুতত্ত্ব,মনেরমানুষ তত্ত্ব ইত্যাদি। প্রতিগানে দুটি পদ থাকে,দেহতত্ত্ব এবং ভজনতত্ত্ব।বাউল গানের সুরে ভাটিয়ালী সুরের প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের কুষ্ঠিয়া–পাবনা এলাকা থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম — বোলপুর– জয়দেব কেন্দুলি পর্যন্ত বাউলদের বিস্তৃতি। প্রতি বছর পৌষসংক্রান্তির দিন বীরভূমের জয়দেব কেন্দুলিতে বাউলদের মেলা হয়,যা ‘জয়দেব বাউল মেলা’ নামে বিখ্যাত।

তাই বলতে পারি, বাউলরা উদাস ও অসাম্প্রদায়িক ধর্ম সাধক।তারা মানবতার বাণী প্রচার করে।তাদের মতে আত্মা দেহে বাস করে।তাই তারা দেহকে পবিত্র মনে করে। তারা জীবনদর্শনকেই প্রাধান্য দিয়েছে। বাউল লোক সম্প্রদায়ের একটি সাধন ভজন গোষ্ঠী। এরা দেহভিত্তিক গুপ্ত সাধনার অনুসারী। এরা মসজিদ বা মন্দিরে যায় না।কোন ধর্মগ্রন্থেই তাদের বিশ্বাস নেই। মূর্তিপূজা বর্ণবৈষম্য বা জাতিভেদে এরা বিশ্বাসী নয়।এরা মানবতাবাদী। তাদের বিশ্বাস জন্মগত ভাবে কেউ বাউল নয়। গুরুর নিকট দীক্ষা নিয়েই বাউল হতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *