Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ঢাকী বিদায় || Purabi Dutta

ঢাকী বিদায় || Purabi Dutta

এ বছর বাঙ্গালীদের প্রধান আকর্ষণ— “দুর্গোৎসব” এর শুরু ২২শে অক্টোবর, তবে বছরটা ত হলো ২০২০, পূজোর দিন শুরু, ২২৷১০৷৷২০২০ “বাইশ দশার বিশে বিষ”।

না, মহিশাসুর নয়, দানব এবারে অতীব ক্ষুদ্র ভয়ঙ্কর নরখাদক হিংস্র সব অসুর।

“মহামারী” , ” অতিমারী” নিয়ে ত ঘর করছি আমরা তিন চার শতক বর্ষ কি তারও বেশি, কলেরা, টাইফয়েড বসন্ত, প্লেগ, ফ্লু ইত্যাদির সাথে, কোয়ারানটাইন ও যথাযথ ব্যবস্থা, তাও ত নতুন নয়। তাহলে এবারে এতো দুর্ভাবনা কেন, কি হয় কি হয়….. ঐ ঘনায়মান আসন্ন দুর্গোৎসবের নানা প্রতিবন্ধকতার আশংকা কেন?

ICMR এর মতে বিকল্প ব্যবস্থা না হলে ঐ সময় অর্থাত পূজোর সময় মহামারী মারাত্মক আকার ধারণ করবে। তড়িঘড়ি “কোয়ারানটাইন ” ও “লক ডাউন”এর সাথে বিকল্প কি—- পূজোর জমক তাহলে কিভাবে হবে?

দুর্গাপুজো বড়ো কঠিন পূজা—- লোকবল অর্থবল, মনোবল ব্যতীত সম্পন্ন করা দুরূহ ব্যাপার। ধনবান ব্যক্তি ছাড়া সাধারণের পক্ষে সাধ হলেও সাধ্য থাকে না। তাই বারো ইয়ার(বন্ধু) মিলে এক পূজা আগ্রহ দেখা গেল প্রথম— জন সাধারণের মাঝে, শুরু হয় বারো-ইয়ারি থেকে “বারোয়ারি”।

এই বারোয়ারি পূজা নানা বৈচিত্র্যময় হতে হতে বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে প্রতিযোগিতামূলক থিম পূজোয়, উৎসাহ উদ্দীপনার যোগান আবার নানা পুরস্কার। কিন্তু একটি ব্যাপারে,তা জমিদার বাড়ি থেকে বারোয়ারি সব পূজোতে একটি বিষয় আদি অকৃত্রিমভাবে চলে আসছে। কি সেটা, ঢাকঢোল বা ঢাকী বাজনা। সব বড়ো পূজাতে, ঢাকী না হলে চলবে না আর তার তেমন রূপান্তর বিশেষ ঘটে নি।

কোলকাতায় দুর্গাপুজোর প্রায় একমাস আগে থাকতেই রেল স্টেশন চত্বরে শহরতলি থেকে আসা ঢাকীর নানা দল বায়না নেবার আবদারে ভীঁড় জমায়, যদিও প্রতিবছর তাদের বিশেষ কারোর কারোরও এক এক পূজা মণ্ডপ ত নির্দিষ্ট থাকতই।

“ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন”

এ হলো ঢাকীর দশমীর বোল। কুশল ঢাকী বাজনদারের এমন নানা “বোল” ঢাকীর কাঠিতে কথাসুর গায়। (চামড়ার তৈরি ঢাকের কাঠের ওজন অনেক, প্রায় ২৫/৩০ কেজি, বর্তমানে কাঠের পরিবর্তে লোহার হালকা পাতের ঢাক তৈরি হচ্ছে, দামও কম— পাঁচ ছ হাজার, আদি কাঠের ঢাকের মূল্য ১০/১২, হাজার।) ভারী ঢাক মাটিতে রেখেই বাজাবার রেওয়াজ তেমনি বিশালাকার ঢোলেরও, অবশ্য পিঠে নিয়েও বাজানো চলে, এজন্য শক্তিমান পুরুষের দরকার, অথচ সাথে সঙ্গত করার জন্য কাঁসা ধাতুর নির্মিত থালা “কাঁসি” ছোট্ট কাঠি দিয়েই কাজ চালাতে সক্ষম হয় শুধুমাত্র দশ বছরের কি তার কম এক বালক মাত্র। কমপক্ষে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ও এক বালক হলেই তথাকথিত ঢাকী বাজনা দল স্বয়ংসম্পূর্ণ।

দশমীর পরদিন তারা বিদায় নেয় আর তাও ছোটবেলায় দেখেছি এক পর্ব। বলা হয় “ঢাকীবিদায়” কেমন সে বিদায়? ষষ্ঠী পূজোর “অধিবাস” এ তাদের আগমন, তারপর চারপাঁচদিন চলে বাজনার দাপট। দাপটই বটে, বাজনা চলা ইস্তক, কানে তালা, মুখে কুলুপ, কিন্ত গুরু গম্ভীর শব্দের অনাবিল আনন্দ— ঢাকীর কাঠি না চললে আর কি পূজা মনে হয় !

ছোটবেলার সেই ছোট্ট শহরের পাড়ায় দেখতাম বারোয়ারি পূজায় দশমীর পরদিন ঢাকীরা বাড়ি বাড়ি ঢুকে বাজাত — ডুম ডুমা ঢুম , ডুম ঢুম, ঠ্যাং ঠ্যাটাং ট্যাং, ট্যাং….. আমার মা(দিদিমা) অমনি ঘর থেকে পেতলের বড়ো থালায়, সাজিয়ে আনতেন ধান দুর্বা, সিন্দুর, ছানার মিষ্টি, নারকোল নাড়ু, কিছু পরিমাণ চাল ও ডাল, রূপোর টাকা। তারা ওসব নিয়ে চলে যেতেন। মা বলতেন “ঢাকী বিদায়”

ক্রমে পরবর্তীতে তা শিথিল হতে হতে দেখতাম, তাদের শুধু কিছু টাকা দেওয়ার রীতি, ঢাকীদের সম্মান স্তিমিত হতো “বখশিষ” এ ! আরও পরে তাও উঠে গেল।

কলকাতার পাড়াতে দেখতাম, দশমীর পরদিন পাড়া ঘুরে বাজনা বাজিয়ে চলে যেতো , বিদায় জানান— “আসছে বছর আবার হবে”।

বর্তমানে যে আবাসনে আছি, সেখানে —- না বারোয়রি, না জমিদার বাড়ির পূজা—- এ হলো এক বৃহৎ পরিবারের ভিন্ন ভিন্ন হাঁড়ির সদস্যদের সমষ্টিযোগে দুর্গোৎসব।

চমৎকৃত হলাম, “ঢাকী বিদায় ” পর্বটির পুনঃপার্বন ,বহু ফ্ল্যাটের প্রতিফ্ল্যাটে তাদের বেল বাজিয়ে আগমন,তবে ঢাক ঢোল কাঁসি নিয়ে নয় , সশরীরে শুধু বিদায় অনুমোদন।

হাসিমুখে দিলাম সামান্য কিছু পারিতোষিক। এক চল্লিশ ছোওয়া যুবক, যিনি ঢোল বাজান, সাথে এক পৌঢ়, যিনি বাজান ঢাক , কাঁসি বাদ্যকার আট- দশ বছরের দুটি বালক।

একটু কৌতুহল হলো, “আচ্ছা শুনুন, পূজো ত এ কদিন, সারা বছর আর কি করেন”? (আসলে বলতে লজ্জা হচ্ছিল সোজা কথাটা যে, সারা বছর পেট চালান কি করে?) এক পরিচ্ছন্ন হাসি— ” আজ্ঞে আমি , একজন শিক্ষক, গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের । ” “ও, তাই, ” বিস্ময়ে বললাম —“বাঃ” ” হ্যাঁ, এরা আমার ছেলে , আমার স্কুলেই পড়ে, আর ইনি আমার কাকা, ঢাক বাজান।” বললাম, ” জানেন, আমিও একজন শিক্ষিকা ছিলাম।” “ও , কলকাতার কোন স্কুলের?” না, না না, স্কুল নয়, কলেজের।” “ও, আপনি প্রফেসর !!!” হ্যাঁ, আমরা, সকলেই শিক্ষক শ্রেণী।” বাচ্চা দুটি চোখের পলক না ফেলে আমার দিকে চেয়েই রইল——

তাদের কথা আর কেউ জানেন কিনা, জানা নেই। হয়ত জানেন বা জানেন না। আবাসনে তাদের শুধু “ঢাকী” পরিচয়ই না হয় থাক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress