সাপুড়ে
(“সাপুড়ে” কথাটির সাথে তিনটি বিষয় চট করে মাথায় আসে — শরৎচন্দ্রের অন্নদা দিদি , নাগিন সিনেমা আর ঐ বিশেষ ভেঁপুর সুর। আর আসে জলপাইগুড়ির সাপেদের কথা। শীতকাল ছাড়া ছোটবেলাতে হরদম সাপের সাক্ষাৎ পেতাম —বাগানে, ঘরের আনাচে কানাচে, উঠোনের একধার থেকে আরেক ধার নির্বিকার চলে যেতো। যদিও বেশিরভাগ সাপ নির্বিষ কিন্তু জলপাইগুড়ির সাপ সবই বিষাক্ত খুব। গোখরো কেউটেই বেশি । সাপ ত আত্মরক্ষার্থে কামড় দেয় আর সে কি নিজে জানে যে তার বিষদাঁত আছে।
ওদের শত্রুরও অভাব ছিল না, প্রচুর বেজি ও নেউলদের আনাগোনা ছিল। নেউল অনেক টাই বেজিদের মতো তবে লেজ বৃহৎ, সুন্দর ঝাঁকড়া ওরা গাছে থাকতে ভালবাসত। ইঁদুর ছুচো সাপ তাদের প্রিয় খাদ্য, শিকার করার তাই তাগিদ । নেউলরা ঘরের টিনের চাল ও কাঠের প্ল্যাঙ্কিং এর মাঝে চলাফেরা করত । টের পেতাম তাদের দৌড়নোর দাপাদাপিতে। আর তাদের excretory product এ এক গন্ধ— ঠিক সুগন্ধি আতপ চালের মতো। তাদের আনাগোনায় সাপ এসেছে বুঝতাম।) এমনিভাবেই একদিন এক কাল কেউটে ঝুলে দোল খেতে লাগল সিলিং এর এক কাঠের ফাঁক থেকে । পূবদুয়ারির পশ্চিম দিকের তিনঘরের এক ঘরে।
সাপুড়ে এলো তার ঝুলি ও ভেঁপু নিয়ে সাপ ধরে সিধে ও পয়সা নেবে। খবর পেয়ে সাড়া —-এ পাড়া ও পাড়ার লোকেতে বাড়ি ভরে তখন গিজ গিজ। জোর ভেঁপু বাজাতে লাগলো, সাপুড়ের গায়ে গেরুয়া এক জবরদস্ত বড়ো আলখাল্লা। সব চুপ করে আছে এদিক ওদিক দেখছে কোন দিক থেকে যে আসবে জানা নেই।
সাপুড়ে ভেঁপু বাজাতে বাজাতে ঐ পশ্চিম দিক ঘরের পেছনে চলে গেল।
হঠাত্ বাঁশি থেমে গেল। সবাই চুপ—-
“বাবু……”
বলে চীৎকার করতে করতে সাপুড়ে ছুটে এলো মাঝ উঠোনে, হাতে ধরে আছে ইয়া বিশাল এক গোখরো সাপ!! সবাই সভয়ে পিছু হটতে লাগলো। ঠাস করে সাপুড়ে আছাড় মেরে ফেলল মাটিতে।
ওমা !
সে সাপ ত
নড়েও না, ফনাও তোলে না—–
এ কেমন?
ছোটমামা বললেন, “মজা পেয়েছ ? এ আমাদের বাড়ির সাপ নয়, এ তোমার দাঁতভাঙ্গা পোষা সাপ, নির্জীব ….. ফনাও ত তোলে না।” সাপুড়ে লাঠির বারি মারল সাপের গায়ে , সাপটা একটু ফনা তুলেই আবার নামিয়ে নিলো।
ছোটমামার সাথে আর সব ছেলেরাও হৈ চৈ করে উঠলো। ছোটমামা রেগে বললেন, “এক পয়সাও পাবে না, বেটা জোচ্চোর, লোক ঠকিয়ে পয়সা নাও।”
সাপুড়ে তখন ভয়ে পালাতে পারলে বাঁচে, তল্পিতল্পা গুটোতে থাকে।
দিদিমা বললেন , “আচ্ছা একটু সিধে নিয়ে যাও”।
সাপুড়ে বলে “কি করব মা, পেট চালাতে হয়।” এও এক বিচিত্র জীবিকা বৈকি।