Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

আজ এক বিশেষ জীবিকা পেশার গল্প করি, হ্যাঁ, এও এক ঐ ছোট্ট বেলার স্মৃতি নির্ভর ।

[ “কুয়োর ব্যাঙ” চালু কথাটিরই কুয়ো বা কূপ— বর্তমানে নলকূপ ত হেথা হোথা কত। আমি বলবো এঁদোকুয়ো, পাতকুয়ো, ইদারা, (ইন্দিরা–ইন্দারা- ইদারা), সিঁড়ি কুয়ো , এদের কথা। সিঁড়ি কুয়ো বা step well আছে রাজস্থানে।

সবচেয়ে প্রিয় “পাতকুয়ো” , পাতি অর্থাৎ জাতে নীচু “ইদারা” থেকে, কিন্তু কুলীন আবার “এঁদো ” থেকে। কুয়ো , কুয়োর বাঁধানো পাড়, পাশের মাটিতে কপিকলের আদলে নারকোল দড়িতে বাঁধা বালতি— বাঁশের খুটি ও ইটবাধা সরঞ্জামে গ্রামীন মেশিন —সহজে জল তোলার ব্যবস্থা , এও এক বিজ্ঞান। — কুয়ো ছিল আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথী ।
মন টানতো ঝুঁকে ফুঁচি দিলে , নীচে স্থির জলে এক আয়না —ছোট্ট গোল আকাশের ছায়া ও আমার মুখ। তখন কি জানতাম কাকে বলে virtual image আর real image? জানতাম না তো atmospheric pressure ও gravitation কি ? আর আমার পায়ের তলার জমিতে কত ফুট নীচে জলের স্তর!!! অজ্ঞতা ও কল্পনা তখন বাস করত পাশাপাশি?

জানতাম না কেন কুয়োতে শীতকাল সকালে গরম জল আর গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা জল পাবার বিজ্ঞান জ্ঞান? দরকারও ছিল না , ছিল ঝুঁকি মেরে শুধু আকাশকে শোনানোর গান।

আমাদের “গরুর বাসা”য় একটি “এঁদো কুয়ো” বা “কাঁচা কুয়ো”ও ছিল , যার জল ব্যবহার হতো গোয়াল ঘর ধোওয়া ও গাছ গাছালিতে । আর রাতে সেখানে সমবেত কণ্ঠে শোনা যেতো “দর্দুর সঙ্গীত ” মানে আক্ষরিক অর্থেই বাস করত মণ্ডুকেরা। ঐ কূপের ধারে কাছেও মা আমাকে যেতে দিতেন না যেহেতু তা রেলিং বিহীন, পুরোই মাটির গোল গভীর এক গর্ত বলা যায়।

পাতকুয়োর জলে সব কাজ হতো, জল ছিল “খর”। পান করতে স্বাদে টের পেয়েছিলাম যখন কলের জল(মৃদু) খেলাম কলকাতায় এসে । তখন কি জানতাম খর (hard)জল কাকে বলে? মাঝে মাঝে ” bleaching powder” দেওয়া হতো জল পরিষ্কার রাখার জন্য । জানতাম না তার chemical formula বা chemical reaction । যখন সখ্যতা হলো রসায়নের সাথে তখন পাতকুয়ো বেপাত্তা, মনের গহন তলে।

কুয়োতে কিছু পড়ে গেলে তা তুলবার এক বিশেষ কাঁটা পাওয়া যেতো। বড়ো পাটের দড়ি দিয়ে নীচ থেকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তোলা হতো, অসংখ্য বাকানো হুকের একটাতে তা আটকে যেতো । বড্ড বড়ো হয়ে যাচ্ছে—– এখনো জীবিকা প্রসঙ্গেই এলাম না।
এটা একটা ভূমিকা হয়ে না হয় থাক্———]

এখন এক অনুগল্প শুরু করি—–

হঠাত্ করে দু-চারজন লোক এসে হাজির হতো, ” কুয়ো পরিষ্কার করবেন বাবু?” তাগরাই শরীরে পরনে তাদের মালকোচা ধূতী, উর্দ্ধাঙ্গ উন্মুক্ত হাতে পাটের পাকানো দীর্ঘ মোটা দড়ি ও একটা বড়ো বালতি আর কোদাল । ভরদুপুরে হাজির।

বছরে একবার করে এ অভিজ্ঞতা আমার হতো। আনন্দ সাথে ভয় উত্তেজনা সব মিলিয়ে বুক ধুকপুক করত। কর্মক্ষেত্রে কর্মকাণ্ডের নিরীক্ষণকারী নীরব এক দর্শক — সে আমি।

কুয়োর সব জল বালতি করে তুলে ফেলে দিলে (প্রায় ঘন্টা খানেক লাগত) একেবারে নীচ অবধি দেখা যেতো শেষ , সে এক সুরঙ্গ রহস্য। কোমড়ে দড়ি বেঁধে একজন নেমে পড়তো কুয়োতে , কুয়োর রিংয়ের খাঁজে খাঁজে পা রেখে রেখে শেষ অবধি মাটিতে। ফুঁচি দিয়ে দেখতাম অনেক নীচে সে লোকটি কোদাল দিয়ে চেঁছে মাটি তুলছে বালতিতে। দড়ি বাধা সে বালতি তুলছে উপরের দুজন, মাটি ফেলে আবার ফাঁকা বালতি নামিয়ে দিতো। কত কি পাওয়া যেতো সে মাটিতে— গেলাস, চামচ ,বল, মগ, রেকাবি, লাঠি, খেলনা , কৌটো, বোতল, তেলের শিশি ইত্যাদি এও এক রহস্য । রিঙ্গের ফাঁকে ফাঁকে তির তির করে জল আসত ক্রমাগত আর তাতে আমার ভয় বেড়ে যেতো—- যদি লোকটি উঠে আসতে না পারে সময় মতো ! যদি কুয়ো জলে ভরে যায় , তাহলে !!! না, জল আসতে থাকলেও কুয়োর যথাযথ লেভেলে জল আসতে লাগত কমপক্ষে তিন চার ঘন্টা । এজন্য সংসারের কাজের জন্য আগে থাকতেই জল তুলে রাখা হতো।

পাতকুয়ো তৈরি হতো সিমেন্টের গোল রিং পর পর বসিয়ে , কত গভীর নীচু হবে নির্ভর করে রিং সংখ্যার উপর আর ইদারা তৈরি হতো ইট দিয়ে গেথে। রিং এর ফাঁকে ফাঁকে হঠাত্ দেখতে পেতাম সবুজ হলুদ গুচ্ছ এক ধরনের শৈবাল মনে হতো সুন্দর এক সূতোতৈরি লেস। মাঝে মাঝে বালতি কোনা দিয়ে তুলে আনবার আনবার চেষ্টাও করতাম , হাতে নিয়ে দেখতে দেখতেই কেমন যেন নির্জীব হয়ে সৌন্দর্য হারাতো। মাঝে মাঝে হঠাত্ দেখা যেতো সাদা সাপের মতো সরীসৃপ জলে ভেসে বেড়াচ্ছে । বড়োরা বালতি করে তুলে ফেলে দিলেই মরে যেতো। বর্ষাকালে কুয়োর জল অনেক উপরে উঠে আসত আর শীতকালে অনেক নীচে এও এক রহস্যময় লাগত। ইচ্ছে হতো গ্লাসভরা জলের মতো কেন কুয়ো জলে ভরে ওঠে না? না বিজ্ঞান সে প্রশ্রয় দেয় নি তাই। (অথচ সে সন্ধানে আছে এস্তোনিয়ার “ডাইনি কূপে “—- তিন হাজার বছর আগের– জল উপছে উঠে আসে—এর ভৌগলিক কারণ — তল দেশে বরফ নদীর সংযোগ)

কুয়ো পরিষ্কার করার লোকগুলোকে আমার বীরপুরুষ মনে হতো। এক সাহসী জীবিকা ব্রত। কত রহস্য ছিল ঐ কুয়োতে ! সবচেয়ে মন টানতো ঐ নিটোল গোল আয়নায় নিজেকে দেখা , বালতি ডোবাতে ইচ্ছে হতো না, স্বপ্ন চুরমার কি কখনো কারোর কোন সময়েই ভালো লাগে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress