নদীটা ভালোবাসতো মাঠটাকে,
আর মাঠটাও নদীর প্রেমে মাতোয়ারা ছিলো।
ঝুঝকি বেলা থেকে শুরু হতো তাদের কলকলানি।
ভোরের প্রথম পাখির কাকলিতে ঘুম ভাঙতো মাঠের,
আউল বাতাস মাঠ ছুঁয়ে নদীর বুকে তুলতো হিল্লোল !
নদী আহ্লাদে ডগমগো !
আস্তে আস্তে প্রাচী কপোল রাঙা হয়ে উঠতো
দিনমনির সোহাগের রক্তরাগে।
সোনালী আলো নদীকে বেনারসী সাজে সাজাতো।
মাঠের সোহাগে নদীতে তখন লহরের মেলা।
বেলা যত গড়।তো ,নদীর চেহারা তত পাল্টাতো!
একটু বেলায় আসতো কিশোরী মেয়ে বউ এর দল !
তাদের হাসি,কথা,গল্পে, গয়নার শিঞ্জিনী তে সারা নদীঘাট ভরে থাকতো!
তারা চলে যাবার পর ,আবার নদীঘাট নিঃ শব্দ !
ঘাট ছোঁয়া পাকুড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে ,!
দূরে ,,,,,,,, গাংচিল তীক্ষ্ণ স্বরে ডাক দেয় !
মাঠে তখন কাজের মেলা,
চাষী ও চাষীবউ নিড়ানি দেয় খেতে।
খেতের আলে বসে সুখদুঃখের কথা বলে!
রবি খন্দের প্রাচুর্যে মাঠ যেন উথলে ওঠে।
সরষের হলদে ফুলে মৌমাছির গুনগুন
মাঠকে গান শোনায় ।
মটরশুটির বেগুনী ফুল হাতছানি দেয় ,
আর মাঠ খুশিতে ,আমোদে উছলে ওঠে।
নদীর বুকে নাল ফুলের মেলা!
কুচে বক সেখানে একপা একপা করে মাছশিকারের চেষ্টায়,।
পায়ের পাতা ডোবা জলে, তির তির করে
ছোট্ট ছোট্ট মাছ খেলা করছে,
জলফড়িং জল ছুঁয়ে ছুঁয়ে উড়ে যাচ্ছে আবার এসে বসছে,।
আস্তে আস্তে দিনমণি অস্তাচল গামী হন!
বাউল বাতাস নদীকে সান্ত্বনা দেয় ,পাকুড়ে র ডালে এসে বসে গাংচিল।
মাঠ আঁধারের চাদর জড়াতে থাকে,
বকের ঝাঁক পশ্চিমে উড়ে চলে,॥
দূর গ্রাম থেকে ভেসে আসা শঙ্খধ্বনি
আউল বাতাসে ভর করে ভেসে চলে নদীর বুকে,
নদীচরার বেনাঘাসের বন কাঁপে থর থর করে,।
সোহাগী নদীর বুক ভরে ওঠে বেদনায়॥
আকাশে একটি একটি করে ফুটে ওঠে তারকার দল ,
যেন তপস্বিনীর জপমালার মতি,।
আঁধার ওড়নায় মুখ ঢাকে নদী,,,,নদীমাঠের ভালোবাসার পরানকথা মুড়ে , আগামীর অপেক্ষায় থাকে,॥