ঐতিহাসিক ভূত
ডক্টর নাইডুর কথায় ধার ধারলেন না ডক্টর চার্লস। লন্ডনে ক্যাপ্টেন থমাস ব্ল্যাক মোরের তথ্য হাতে আসার পর থেকেই ইন্ডিয়ায় আসতে চেয়েছিলেন। বাড়ির লাইব্রেরি থেকে দু’ শো বছরের ইতিহাস ঘেঁটে বার করেছেন ব্ল্যাক মোর এর হদিস। তাঁর পূর্ব পুরুষদের বংশ তালিকা। একখানা ভারতের ম্যাপ। লাল কালির দাগ কাটা আছে একটা অক্ষরে ।সেই অক্ষর টা হলো “বিশাখাপত্তনম ” । তা ছাড়া কয়েক খানা চিঠি ও সযত্নে সংরক্ষিত ছিল।
আঠেরোশো এক সালে ক্যাপ্টেন থমাস ব্ল্যাক মোর ভারতে এসেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হয়ে। তখনকার (ওয়ালটেয়ার) বিশাখাপত্তনমের দক্ষিণে সমুদ্রতল দেশ থেকে তিন শো ফুট উঁচুতেএক বিশাল শিলার অন্তরীপের ওপরে তাঁর বাঙলো তৈরি করেন তিনি। শুধু বাংলো নয় দশ ক্যাননের ব্যাটারিও তৈরি করেন তিনি। এর জন্য কোম্পানির থেকে চুয়াল্লিশ একর জমির অনুদান নিয়েছিলেন।
রাত জেগে রিসার্চ শুরু করলেন ডক্টর চার্লস। তথ্য বেরিয়ে পড়ল একে একে। জানা গেল ক্যাপ্টেন থমাস মোর এর সেই জায়গা বিধ্বংসী সমুদ্রের ঝড়ে সব বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আজ সে জায়গা ক্যাপ্টেন থমাস মোর এর স্মৃতি বহন করছে। তার নাম পাল্টে গেছে । এখন সেই শিলার অন্তরীপের নাম হয়েছে ডলফিন নোজ। সবই জানতে পেরেছেন ডক্টর চার্লস। শুধু ব্ল্যাক মোরের শেষ টা জানতে পারেন নি। তাই ডক্টরেট নাইডুর প্রচেষ্টায় ভারতে বাস করতে চলেছেন সেই ধ্বংসাবশেষে, যেখানে ব্ল্যাক মোর বাস করেছিলেন।
ডক্টরেট নাইডু বাঁধ সেধেছিলেন-। বলেছিলেন- পাগল হয়েছ?ওখানে কেউ থাকতে পারে?ওখানে লোক বসতি নেই। ধূ ধূ করা অন্ধকার চারদিকে। জনশূন্য জায়গা।
ডক্টর চার্লস বললেন–আরে নাইডু, আমার পূর্ব পুরুষ ক্যাপ্টেন থমাস ব্ল্যাক মোর । ওঁর শেষ দিন টা জানা হয়নি। তুমি সব ব্যবস্থা করো। ঐখানেই আমি থাকতে চাই। আমার ফ্যামিলি নিয়ে যাব। ওঁর কি হলো তা জানতে চাই।
ডক্টরেট নাইডু বললেন—ঠিক আছে আমি সব ব্যবস্থা করবো যাতে তুমি ব্ল্যাক মোরের হিল এ থাকতে পারো । তবে তোমার মতো কয়েক জন পাগল ওখানে সন্ধ্যা কাটাতে গিয়ে ভূত দেখেছেন। সুদূর লন্ডন থেকে ই টেলিফোন এ হাঃ হাঃ করে হেসে উঠেছেন ডক্টর চার্লস।–ঘোস্ট?ডু ইউ বিলিভ ইন ঘোস্ট? আমি কেন? আমার ছেলে হ্যারি আর মেয়ে ইসাবেলা ও ভূতকে ভয় পায় না।
হাল ছেড়ে দিয়েছেন ডক্টরেট নাইডু । নাইডু সব ব্যবস্থা না করলে ক্যাপ্টেন থমাস মোরের স্মৃতি বিজড়িত এই জায়গায় তিনি বাস করতে পারতেন না। ভাবতে ভাবতে ই তাকালেন ইয়ারাদা হিল রেঞ্জ এর দিকে। এখানে এসে পৌঁছে দারুণ উত্তেজিত ডক্টর চার্লস। । বাংলোর তিন দিক অনন্ত সাগরে ঘেরা। চারদিক সূর্য কিরণে ঝলমল করছে। তিনশো ফুট ওপর থেকে সাগরের রূপ আলাদা । টহলদারি জাহাজ এদিক থেকে ওদিকে চলেছে।
স্ত্রী এমিলি ঘরের ভেতর ঢুকে গেছেন ঘরের তদারকি করতে। সঙ্গে আছে ওড়িশার কাজের মেয়ে। বিশাল পাঁচিলের কাছে দাঁড়ালেন ডক্টর চার্লস। খুঁজে বেড়াতে লাগলেন তাঁর নিখোঁজ পিতৃ পুরুষকে। –ক্যাপ্টেন মোর, হোয়্যের আর ইউ ? কোথায় তুমি ? চমক ভাঙলো হ্যারির কথায় ।—ড্যাড্, কি সুন্দর না জায়গাটা ? ডক্টর চার্লস বললেন –হ্যাঁ। খুব সুন্দর । কিন্তু সাবধান । পাঁচিলের কাছে যেও না । ইসাবেলা কে লক্ষ রাখবে সব সময় । ও দিকে যেন না যায়।
দূরের আকাশের দিকে তাকালেন ডক্টর চার্লস । যার টানে ভারতে এসেছেন, তাঁর কথা ভাবলেন। একবার তাঁর দেখা পেলে মন্দ হতো না । মৃত্যুর রহস্য টা জেনে নিতেন । ভাবতে ভাবতেই ঘরে ঢুকলেন। কানে এল কাজের মেয়ের কথা গুলো—মু সব্বু করি দেবি ।