এখনো কি বাতাস ঘোরে
বৈঁচি গাছের শাখা প্রশাখায় দোল লাগে ,
মনে পড়ে বৈরাগী ঘাট, বানাইখালি
গোপাল বাড়ির অষ্টমী মেলার কথা,
কামাখ্যা মেলার সারিবদ্ধ গরু গাড়ি—সাজে কি
আগের মত ?
আজো কি ঝ’রে গল্পের ফুলঝুরি
কালিদার চায়ের আড্ডায়
সন্ধে সাতটায় বিবিসির খবরে মুখরিত হয়
দেশ- বিদেশ , বাড়ির কথকতা।
আজো কি আছে কান্তা ভায়ের সেই সাঁড়শী ,
যার বিনয়ী হাতে চকলেট খেতে খেতে কত দুপুর
পার হয়ে যেত বৃষ্টি গাছটার নীচে ,
আজো কি বাজে যতীনদার হাতে সেই
স্কুলের ঘন্টি, যার শব্দে পুলকিত হত মন
ছুটে ফিরতাম ঘরে
আজো কি ফেরে সেই দিন , সেই দুপুর, আম
জামের গন্ধে ভরা স্কুল পালানো গ্রীষ্মের দুপুর
উথাল পাথাল হাওয়া
জোয়ার ভাটার টান
নিঃশব্দ পংক্তি পড়ে থাকে,
আজো কি আছে সেই লোক যারা যাব কি যাব না
এই ভেবে ভেবে থেকে গিয়েছিল ভালোবেসে , এই শহর –গ্রাম
গাছ হাওয়া, সুবাস
গারোপাহাড়ের নেবু ফুলের সুবাস
জাগে কি আগের মত ।
পুরনো ক্লাবঘর, শহীদ বেদী , আজো কি
সজল-বিমল- সুভাষেরা কাঁধে
ব্যাগ নিয়ে ঘোরে, নাটক লেখে , নাটক করে,
দুর্গাবাড়ির চন্ডী মন্ডপ , বিজয়া দশমী
চক চক গর্জন তেল, তেলের গন্ধ , বিসর্জনের বাজনা
বেজে যায় , চন্ডী পাঠে চোখে আসে জল ;
জলের মত স্বচ্ছ ভালোবাসা জাগে কি হৃদয়ে !
চেরাপুঞ্জির পুঞ্জীভূত মেঘ বর্ষা ঝরায় অবিরাম
দুধ নিয়ে বাকলা নদী পার হয় গারো তরুণী
আজো কি রোগায় নবাগত বাঙালী শিক্ষক
চায়ের অভাবে দুধ খায়–
আজো কি তুমি আছো আগের মত
নীল ফ্রক, নীল ছায়া, শঙ্খচিল উড়ে যায়
নীল আকাশের নীচে
সাদা পায়রারা খুঁটে খায় সোনালী শস্য
স্বপ্নের কার্ণিশে—
কলকাতার মায়াবী দুপুর যেন
সহস্র যোজন দূর , দূর হয় , দূরত্ব বাড়ে,
নিকট ঘেঁষে না।
এ নিকট এমনি দূর
নিরুপদ্রব মূর্ত্তির মতন , দর্পণে মুখোমুখি
অথচ নাগালের বাইরে ; বৃষ্টি আর ঝড়ের নিবিড়ে
সব শব্দ মুছে যায়, তোমার মমতা ভরা কন্ঠস্বর ;
মুছে যায় পরিচিত প্রিয়জন, বন্ধুজন , নারী—
জেগে থাকে অপরিচিত সব মানুষ , গাড়ির শব্দ
চেঁচামেচি , এসবের মধ্য থেকে
জানান দিতে বেরিয়ে আসি—দেখি ,
গঙ্গার বুকে বিশ্বাস আর ছায়ায় বাঁধা
স্বপ্নের সাম্পান , তুমি অপেক্ষা করতে শিখিয়েছিলে
নদী ঘাটের আলো তোমার চোখের দৃষ্টিতে
এভাবেই জন্মান্তর , এভাবেই স্রোতের উজানে চলা
গঙ্গার বুকে সাম্পান , সাম্পানের বুকে অসমাপ্ত কথা
আর নিঃশব্দ শব্দের বিনিময়, স্নায়ু ছেঁড়া অন্ধকার
ভেঙে ধ্রুবতারাকে লক্ষ্য রেখে জীবন সাম্পান
কম্পাসের কাঁটার প্রবাহে এগিয়ে চলে।