Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » এই তো জীবন || Samarpita Raha

এই তো জীবন || Samarpita Raha

সোহম কোচবিহারের ছেলে। পড়াশুনাতে খুব ভালো। মাধ্যমিকে তিরানব্বই শতাংশ নিয়ে পাশ করে। উচ্চ মাধ্যমিকে ও নব্বই শতাংশ পেয়েছে। জয়েন্টে ইঞ্জিনিয়ারিং রাংক পঁচাত্তর।
তাই সোহম যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বার জন্য কোচবিহার থেকে কোলকাতায় আসে।
বাবার ছোট বেলার বন্ধু রমেশ কাকুর বাড়িতে ওঠে।কথা ছিল কিছু দিন থেকে ঘর খুঁজে চলে যাবে।

কাকুর যমজ ছেলে-মেয়ে ছিল।এর মধ্যে ছেলেটা গত বছর গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়।যমজ মেয়েটি ভাইকে ছেড়ে খুব কষ্ট পাচ্ছিল।

কাকিমা ছেলের চিন্তা করে সারাদিন খিটখিট করে।
রমেশ কাকুর বাড়িতে এই অবস্থায় থাকাটা খুবই চাপের।

আপ্রাণ চেষ্টা করে সোহমের কলেজ হোস্টেলের ব্যবস্হা হয়।তবে যেতে প্রায় দিন পনেরো বাকি।
কাকু-কাকিমা বললেন সোহম তুমি এখানে থেকে কলেজ করো। মেয়েটা মাধ্যমিক দেবে একটু ছুটির দিনে বিজ্ঞান ও অঙ্কটা দেখিয়ে দিও।

সোমলতা কাকুর মেয়ে আমার কাছে পড়তে আসত।এক বাড়িতে তাই যখন তখন এসে পড়া বুঝে যেত।
কাকিমার ছেলে যা খেতে ভালো বাসত তাই সোহমকে রান্না করে খাওয়াতেন। এখানে সোহমের থাকা ও খাওয়া সব ফ্রি।
সোহমের বাবার অবস্থা মধ্যবিত্ত।তাই সোহম খুশি হয়েছিল।কাকু কাকিমা, সোমলতা ও সোহমের জীবন আনন্দে কাটছিল। সোমলতা মাধ্যমিক পরীক্ষায় খুব ভালো নম্বর পায়।তার ইচ্ছা আইন নিয়ে পড়ার।তাই কলাবিভাগ নিয়ে স্কুলে ভর্তি হয়।দিন যায় এগিয়ে। সোহম তৃতীয় সেমিস্টার দিয়ে কোচবিহার যায়।
তারমধ্যে কাকিমার বহুবার ফোন গেছে। তাড়াতাড়ি চলে আয় সোহম।
সব থেকে সোহম মিস করে কাকু কাকিমার নানান ভঙ্গিতে ঝগড়া। সোহমের জন্মের পর সোহমের মা অজানা রোগে মারা যান।
তাই কাকিমার গায়ে সোহম কেমন যেন মা মা গন্ধ পায়।
কাকু বাজারে গেলে খুঁজে খুঁজে শাকসবজি ও নানা সবজি ও মাছ কেনেন।সকাল সাতটায় বাজারে গেলে ফেরেন প্রায় এগারো টা।
আর তারপর কাকিমা চিৎকার শুরু হয়। উচ্চ স্বরে বলতেন এ মা কি এনেছ!!
লাউ শাকের পাতা কোথায়??
এগুলি লাউ ডাটা !!
দেখে মনে হচ্ছে আমাদের ওই ভুলুর লেজ।
মুলোগুলো শুকিয়ে …।
অসময়ে র মুলোতো শুকনোই হবে গিন্নি।
কাকিমা বলেন তুমিতো শুকনো….।
পুরো কথা শেষ হতে না হতেই কাকু বলে তুমিতো নারকেল গাছের পাতা থেকে যেটা তৈরি সেটা তুমি।
আমি ঘরে হাসতে থাকি। শনিবার ও রবিবার এইগুলো শুনতে থাকি।অন্যদিনতো কলেজ থাকে।

সোমলতা এসে বলে কি হচ্ছে বলো!!
মা বাবা তোমরা বাইরের ছেলের সামনে এরকম কেন করছ!!!
কাকু বলে ওই সোহম এদিকে আয়।
তুই কি খারাপ ভাবিস আমাদের।
সোহম বলে কাকু চালিয়ে যাও বেশ লাগে।
হঠাৎ কাকু গান করতে থাকে.. “দেখো পাড়া পড়শীতে মাছ গেঁথেছে বড়শিতে…
কাকিমা রাগতে গিয়ে হি হি করে হাসতে থাকে।

কাকুর হাতে একটা গোটা ইলিশ মাছ।
“তোমার মুখে একটু হাসি” দেখব বলে গিন্নি ইলিশ দেখলেই খপাত করে মাছের লেজ চেপে ধরি। বুঝলাম কাকিমা ইলিশ খুব ভালো বাসেন ।

সোহম ভাবে আমার মাকে চোখে দেখে নি তাই বাবা ও মায়ের এই রকম খুনসুটি সম্পর্ক হয় কোনো ধারনাই ছিল না।

কাকু কাকিমা আমার মধ্যে ছেলেকে খুঁজে পান। সোমলতা ও ভাবে বাবা ও মা খুশি থাকলেই হলো।সোহম ও সোমলতা এখন দুই আলাদা পড়াশুনার জগতে। সোমলতার মনে সব সময় একটা গভীর দুঃখ। কাকিমা আগে খুব কাঁদতেন। এখন আমাকে আঁকড়ে ধরেছেন।

বি.টেক শেষ হতেই কোলকাতায় ভালো চাকরি পেয়ে গেলাম। তখন কাকুকে আমার থাকা খাওয়ার খরচ নিতে বলতেই প্রায় কাঁদিয়ে দিয়েছিলাম।এরপর বাবা এসেছিলেন কোচবিহার থেকে।

কাকু ও কাকিমার সাথে আমার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলেন।কাকুর ইচ্ছা সোমলতার সাথে আমার বিয়ে হোক।

যদিও আমার ও সোমলতার মধ্যে কোন প্রেম ভালোবাসা ছিলনা। তারপর সোমলতার আইন পাশ করার পর আমার ও সোমলতা র বিবাহ হয়। সোমলতা ভেবেছিল ওর বাবা – মার খুশিতেই তার খুশি।
তারপর বিবাহের পর সোমলতার সাথে সোহম মিশে অনুভব করে সোমলতা কিছুতেই কোনো দাম্পত্য ব্যাপারে আকর্ষণ নেই।

একদিন প্রায় জোর করে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যায় সোহম।
কিছুতেই যে সোহম সোমলতার মুখে ও মনে হাসিখুশি ভাব দেখতে পায় না।
একদিন সোহম অফিস থেকে বাড়ি ফিরে দেখে বাড়ির ড্রয়িংরুমে যোগা ক্লাস চলছে।
লাফিং ক্লাসে সোমলতা র কি হাসি!!!
বন্ধুরা কে কত হা হা করে হাসতে পারবে।এতে নাকি মন ভালো লাগে।
দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আমি ও হা হা করে ওদের সাথে তাল মিলিয়ে হাসতে থাকলাম।
হঠাৎ সোমলতা সোহমকে পাগলের মতো হাসতে দেখে অবাক হয়ে সোহম কে প্রায় জড়িয়ে ধরে। সোহমকে বলে তোমার মুখের একটু হাসি দেখব বলে অপেক্ষায় ছিলাম।সোহম ও সোমলতাকে এক কথা বলে…
এবার দুজনের অট্টহাসিতে যোগার বন্ধুরা হাসিতে যোগদান করে।
কাকু-কাকিমা আনন্দে অশ্রুসজল নেতৃত্বে হা হা হা করে হাসতে হাসতে বলেন আজ দোসরা মে লাফিং ডে।চল চল তোদের সাথে আমরাও হাসি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress