অবিশ্বাস্য
রাজু,অমল,অভি আর বনানী চার বন্ধু।বন্ধু বলতে হরিহর -আত্মা। ওরা চারজনে চন্দননগর কলেজে এম-কম পড়ে। সেই বি-কম থেকে ওরা একসঙ্গে পড়ছে। বনানী যেহেতু মেয়ে,অনেকেই অনেক বাজেকথা বলে। অনেকবন্ধু বলে কিরে তিনজনের মধ্যে কাকে ঠিক করলি। বনানী হেসে বলে তোরা বন্ধু মানে জানলে এরকম বাজেকথা বলতিসনা।
এরকম কথা শুধু বনানীকে বলত তা- নয়,রাজু,অভি,অমলকেও বলত। এই বলতে বলতে ওদের মধ্যেও একটা উসখুসানি ভাব আজকাল বনানী অনুভব করে।
তিনবন্ধু আলাদা করে বনানীকে জিজ্ঞাসা করে,ওদের পছন্দ কিনা। বনানী সবাইকে না জানিয়ে ,একটু বন্ধুত্ব আলগা করে।
তারপর আবার আগের মত চলতে থাকে।ওদের এম-কম ফাইনাল দেবার আগেই অভি ব্যাঙ্কে চাকরি পায়। অভির বাড়ি বর্ধমানে। এখানে মাসীরবাড়ি থেকে পড়াশোনা করত। চাকরি বর্ধমানেতে পায়।অভি ফাইনাল পরীক্ষা দেয়। তবে বনানী অভিকে প্রচুর সাহাষ্য করে।পরীক্ষা শেষ,যে -যার বাড়ি চলে গেছে।
রেজাল্ট. বার হবার আগে রাজু,অমলও বনানী ঠিক করে অভির বাড়ি যাবে। অভি বর্ধমান স্টশনে থাকবে । ওরা দুইবন্ধু শ্রীরামপুর স্টেশন থেকে একসাথে যাবে আর বনানী ও শ্রীরামপুর স্টেশনে চলে আসবে,ওদের সাথেই যাবে।
যেদিন যাবে এত বৃষ্টি,তাও সবাই বার হয় ।ওরা যে ট্রেনে যাবে বলেছিল,সেটা আগেই চলে গেছে। বনানী গিয়ে দেখে দুইবন্ধু চলে গেছে। পরেরট্রেন প্রায় সাড়ে -সাতটায় এল।বেশ ঘুটঘুটে অন্ধকার,যেই ট্রেনে উঠতে যাবে আলো নিভে গেল। পিছন থেকে বর্ষাতি পরে অভি বলে ওঠ্ ওঠ্। আরে অভি তুই।ভূতের মত ঢেকে এসেছিস,আমিতো ভয় পেয়ে গেলাম। ও ভয় পেলি,আর আমি যে তোকে নিতে এলাম,এটা ভাল লাগেনি। নারে অভিসোনা খুব ভাল লেগেছে।
তোর হাতটা এত ঠান্ডা কেনরে? অভি বলে,তা বৃষ্টি বলে হাঁদুরাম।ট্রেনের ভিতর আলো নেই। ঠান্ডা হাওয়ায় বনানী ঘুমিয়ে পড়েছিল।
অভির ধাক্কায় ঘুম ভাঙে,নামতে হবে ।হঠাৎ আলো আসে ।বনানী দেখে অভি নেই।নামতেই দেখে দূরে অভি দাঁড়িয়ে।অভি বলে আধঘন্টা হাঁটতে পারবি।এখন কিছু যানবাহন পাবনা।
জঙ্গলের পথ চলছে তো চলছেই,বনানী বলে আর কত দূররে।অভি বলে তুই মোবাইলের আলো নিবিয়ে দে,কত চোর-বদমাশ তোকে দেখতে পাবে।আর কি করবে কে জানে।
আ..আ.অ.ভি..ভি.আমি পাঁকে ঢুকে যাচ্ছি।আমার হাত ধর,তুই কোথায়?ও হো এই হাত ধর আমার।বাবা অভি তোর হাত ভূতের মত ঠান্ডা কেন?অভি বলে তুই রাজু আর অমিত কে খুব ভালবাসিস তাই না।না ওরা আমায় ভালবাসলে বুদ্ধুরাম ,আমার জন্য স্টেশনে অপেক্ষা করত।আমি তোকে খুব ভালবাসিরে অভি।সেটা ছাড়াছাড়ি হবার পর বুঝেছি। আমি কি তোর হাত ধরে শূন্যে ভাসছি। অভি আমার পায়ে,সালোয়ারে কাদা মাখামাখি হল।ভাগ্যিস জুতো পায়ে ছিল।না হলে খালি পায়ে যেতে হত। আবার ওরা গল্প করতে করতে এগোচ্ছিল।বনানীকে ,অভি ওদের বাড়িটা দূর থেকে দেখিয়ে উদাও।”নাম না জানা নতুন পথে” বনানী কর্দমাক্ত অবস্থায় পা বাড়ায় আর
জোড়ে অভির নাম ধরে ডাকতে থাকে। ওদের বাড়িতে ঢুকতেই কান্নার আওয়াজ পাই বনানী।দেখে ভিতরে রক্তাক্ত ,ব্যান্ডেজ অবস্থায় শুয়ে অভি।গতকাল মারা গেছে,আজ পোস্টমর্টেম করে বডি এসেছে।তাহলে অভি কি করে বনানীকে এখানে আনল,ওতো অভির বাড়ি চেনেনা।
পাঁক পুকুরে ডুবিয়ে মারতে চেষ্টা করেছিল ।যখন বনানী বলে তোকেই ভালবাসি,ওদের নয়।তারপর অভি রক্ষা করে বনানীকে।আসলে অভি বনানীকে খুব ভালবাসত,মরে গিয়েও ওদের কাউকে ভালবাসুক সেটা অভি চাই- নি হয়তো।
অভির মৃতুর পাঁচবছর পরেও বনানী অন্য কাউকেও বিয়ে করতে পারেনি।যদি অভি কষ্ট পায়।
লেখনী..সমর্পিতা দে রাহা