Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মমতাময়ী নারী || Samarpita Raha

মমতাময়ী নারী || Samarpita Raha

আনন্দবাজারে পাত্রী চাই বিজ্ঞাপন দেখে রিনির বাবা সোমের মার সঙ্গে যোগাযোগ করে।তারপর উভয়পক্ষের পছন্দ হলে বিয়ে হয় “রিনি আর সোমের”।

রিনি শান্ত আর সোম ছটফটে প্রকৃতির।বিধবা সরমাদেবী ছিলেন সোমের মা।বিয়ের পর ছেলেকে একটু হাতছাড়া করেননি।তিনি বৌমাকে সোমের কাছাকাছি দেখলেই রেগে যেতেন।সোম ও কোন প্রতিবাদ করত না।রিনি ভাবত শাশুড়ি অল্পবয়সে শ্বশুরকে হারিয়েছেন, তাই এরকম করেন।
বিয়ের আটমাসের মাথায় রিনি প্রথম প্রতিবাদ জানায় ,তার ফলস্বরূপ তাকে মারধোর করে সাদাকাগজে সই করিয়ে বাড়ি থেকে বার করে দেয়।

রিনি বাপের বাড়িতে এসে পড়াশুনা শুরু করে। নার্সিং এ ভর্তি হয়। কিছুদিন পর জানতে পারে বাচ্চা এসেছে গর্ভে। রিনি বাড়ির লোকদের বোঝায়,সন্তান হবে জানতে পেরে যদি রিনিকে গ্রহণ করে,তাহলে রিনি শ্বশুরবাড়িতে চলে যাবে।
“মন মানে না মানা “তাই রিনি পরিবারের সাথে শ্বশুর বাড়ি যায়। তালা বন্ধ দেখে ফোন করে।ফোন বন্ধ।পড়শি বলে ট্রান্সফার নিয়ে বাইরে গেছে।
রিনি নার্সিং পড়া শেষ হয়নি,ছেলের ও বয়স বছর তিনেক। ওই সময় ছেলের বাবা ও ঠাকমা পুলিশ এনে ছেলেকে জোর করে নিয়ে চলে যায়।এমনকি বার্থ -সার্টিফিকেট ও।পুলিশদের কি বোঝাবে রিনি,ঐ যে সাদা কাগজে মারধর করে সই করে রেখেছিল শাশুড়ি.।
তাতে কি যে লেখা ছিল কে জানে।রিনি চোখের জল ফেলতে ফেলতে নার্সিং পড়া শেষ করে আসালসোলে এক নার্সিংহোমে জয়েন করে।

তারপর বহুদিন যায়।আজ নার্সিংহোমে প্রচুর খাওয়া, রিনি হেডনার্সের ছেলের জন্মদিন। আজ ছেলের সাতাশবছরের জন্মদিন। সকলের অনুরোধে ছেলের ছবি বার করে ,প্রায় হাত কাঁপতে কাঁপতে। ওকি রিনিদি এটাতো দুইবছরের ছেলের ছবি।তারপর রিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে।
কেউ জানত না রিনির এই কষ্টের কথা।
হঠাৎ জুনিয়ার ডাঃ সোহম ঢোকেন।উনি এক মাস জয়েন করেছেন। সদ্য পাশ করা ঝকঝকে ডাঃ। সবার সাথে পরিচয় হয়।তিনিও বলেন আজতো রিনিদি খাওয়ালেন।আমি কাল আমার বাড়িতে খাওয়াব,কারণ আজ আমার জন্মদিন।
সবাই সোহমকে বলে বাড়িতে নয়,এখানেই খাব।
পরদিন রিনি একটা সুন্দর কেক বানিয়ে নিয়ে যায়,সোহমের জন্য।
সেই কেকটা কাটা হয়।সোহম সবাইকে মিষ্টিমুখ করান।সোহম বলেন আমার মা নেই ,রিনিদি আমার মায়ের অভাব মিটিয়েছেন।বাবা ও প্যারালাইসিস হয়ে বিছানা শয্যা।ঠাকমা মানুষ করেছেন।এখন ঠাকমাও নেয়।তাই জন্মদিনের খাওয়াটা বাড়িতে করতে চেয়েছিলাম,বাবা আনন্দ পেতেন।
তখন সবাই বলে ঠিক আছে ,আজ রাত্রে নার্সিংহোমে অত চাপ নেই,সোহমের বাড়ি যাব।
পনেরো জনের মত সোহমের বাড়ি হইহই করে যায়।
বাবা বিছানায় বসে কাকে আপনমনে ডাকছেন।রিনি ওখানে সবচেয়ে বড়।ক্রমে সোহমের বাবার দিকে এগোয়।কাকে দেখছে।সোহম এগিয়ে যেতেই বাবা সোহমকে কিছু বলার চেষ্ঠা করেন।রিনিতো বুঝতে পেরেছে।
সবাই হইহই করার পর কেহ বাড়ি কেহ নার্সিংহোমে ফিরে যায়।
রাত ২টো বাজে” মন মানে না মানা ” রিনি ছটফট করতে থাকে,সোহম তার তো ছেলে।কি করবে?ওরা মায়ের নামে কি বলেছে?? ভগবান জানে।
রিনি ফোন করে সোহমকে,তোমার বাবা কেমন আছেন?
জানেন আমার বাবার ,মাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে।ছোট বেলা থেকে আমায় বলা হয়েছিল,”আমার মা খারাপ”।
বাবা প্যারালাইজড হবার পর ঠাকমা নিজের ভুল বুঝতে পেরে বলেছেন ,আমার মা খুব ভাল ছিলেন।
রিনি কাঁদতে কাঁদতে বলে তোর ঠাকমাই তো তোর বাবার সাথে সংসার করতে দেয়নি।একটু সংসার করতে দিবি বাবা??
রিনিদি তোমার কি হয়েছে??
কি সব বলছ?
না-না-না সোহম আমি তোর মা।
ফোনের উল্টোদিকে ছেলের চিৎকার শুনতে পায়,ও মা তুমি বাড়ি এস । ও-মা এস না।কতক্ষণ রিসিভার ধরে রিনি দাঁড়িয়ে ছিল জানেনা।

হঠাৎ পিঠে একটা ঠান্ডা হাতের স্পর্শে রিনি সম্বিত ফিরে পায়।তাকিয়ে দেখে ডঃ সোহম রায় ।
চলুন ম্যাডাম আপনার স্বামি এক দেখাতেই বিছানাতে উঠে বসেছেন।এবার সংসার করবেন চলুন।
তারপর মায়ের গলা জড়িয়ে নার্সিংহোমের যারা ছিল সবাইকে বলে দেখো আমার মা।আজ থেকে নার্সিংহোমে নয়,উনি স্বামির ঘরে ছেলের সাথে থাকবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress