Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভূত চতুর্দশী || Piyali Parua

ভূত চতুর্দশী || Piyali Parua

নদীর ধারে রায়’দের মস্ত এক জাহাজ বাড়ি। চারতলা মহল জুড়ে নয় নয় করে শ’খানেক ঘর। ঘরে ঘরে জ্বলা পিলসুজ। কচিদাদু বলত শামাদান। কলকাতায় থেকে ইলেকট্রিকের আলোয় অভ্যস্থ আমি আর ভাইটি। জাহাজবাড়ির অন্ধকার ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে যখন উঠতাম মনে পড়ত বাবার গলায় বিশ্বকবি।
“সিঁড়ি দিয়ে যেতে যেতে
প্রদীপটা তার নিভে গেছে বাতাসেতে”।
আমি যেন হয়ে যেতাম “হারিয়ে যাওয়া”র ছোট্ট মেয়েটি। আমার থেকে চার বছরের ছোটো ভাইটির তখনও স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণী হয়নি। তবুও সে ছিল বেশ ডাকাবুকো।
“ধুস। ওটা ভাবছিস কেন? তার চেয়ে বরং ভালো;
‘আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার পরে
টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে’—-“
এতক্ষণ আমার পিছনে থাকা ভাইটি পক্ষীরাজে চেপে আমায় টপকে টক টক করে এগিয়ে চলে সিঁড়ি দিয়ে।
আমরা এসেছি বাড়ির দুগ্গো পুজোয়। প্রতিবারের মতো লক্ষ্মী পুজোর পর ফেরা আর হলো না। উজান দাদার হঠাৎ ঠিক হওয়া বিয়ের জন্য। অনুষ্ঠান পর্ব মিটতে এসে পড়ল কালীপূজা। মামাবাড়ির মতন এবাড়িতে নিয়মের কড়াকড়ি নেই।
দুর্গারূপে পূজিতা মা শ্যামারূপে একই থানে পুজো হয় না।
ওখানকার বিধান এখানে গুরুত্ব পায় না। আমাদের রায়বাড়ির প্রশস্ত ঠাকুর দালানে দুর্গা লক্ষ্মী কালী সরস্বতীর সঙ্গে পূজিত হন ভোলানাথও। রাধাকৃষ্ণ দোলনায় বাঁশি বাজান ঝুলনে, অথবা আবির রঙা অভ্র ফাগে রাঙিয়ে তোলেন মণ্ডপ। জগতের নাথ সপরিবার চারতলা রথে চেপে গড়গড়িয়ে গড়িয়ে চলেন এখান থেকেই। চাতালে বসে কচিদাদু বলে চলে কত কথা।
••••প্রথম যখন মানুষ ভয় ভক্তি বুঝতে শিখল, তারা এক অজানা শক্তির কাছে প্রার্থনা করত। সেই শক্তিই কালে কালে মত পার্থক্যে পুরুষ এবং প্রকৃতিতে ভাগ হয়ে গেল। অর্থাৎ পুরুষের মধ্যেও আছে প্রকৃতি। আর প্রকৃতির মাঝেও আছে পুরুষ। তোমার চোখ যেমন দেখছে, তুমি তাকে মনে মনে তেমন করে ভাবছ। আদতে তুমি কালীপূজা করো অথবা কৃষ্ণ ভজো, প্রার্থনা সেই এক আদিতেই পৌঁছাবে।

দাদু “ওম্” বলার সাথে সাথেই নাটমন্দির প্রতিধ্বনি শোনায়। আমাদের কুচোকাঁচাদের হাঁ করা মুখের দিকে চেয়ে খানিক মায়া হয় বোধহয়। মুচকি হেসে বলে;

•••• এই যেমন ধর, আমাকে নিয়ে তোরা সবাই মিলে এখন চারতলার ঠাকুর ঘরের ছাদে যেতে চাস। তো বাইরের রোয়াকের পাশের এই লোহার ঘোরান সিঁড়ি দিয়ে আমি উঠে যাব। আর যাদের খোলা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে অসুবিধা, বাড়ির ভিতরের ঢালাই করা সিঁড়ি দিয়ে উঠবে। যাবো কিন্তু সবাই একই ছাদে। দেখা হবে তবে সেখানে।

কচিদাদু উঠে দাঁড়াতেই আমরা পেয়ে গেলাম গল্পের গন্ধ। আমরাও যারা গল্পের পোকা ছাদে চললাম। আর কিছুজন রয়ে গেল। মায়েদের সলতে পাকানো দেখতে। গাদা গাদা মাটির প্রদীপ বানিয়ে শুকনো করা হয়। তাতে তেল দিয়ে সলতে জ্বালিয়ে গোটা রায়বাড়ি সাজান হয় চতুর্দশী আর অমানিশায়।

•••• আজ কোন দিন জানিস তোরা? ভূত চতুর্দশী।

বড় বড় গাছের ছায়া দোলা ছাদে আমরা আরও ঘন হয়ে বসি। পাঁচ আঙুলে জড়ান থাকে পাশের জনের পাঁচ আঙুল। ছুঁয়ে থাকলে ভূত ধরতে পারে না।

•••• সেদিন তোদের ভাগবত পুরাণের বলি রাজার কাহিনী বলেছিলাম। মনে আছে তো?

আমরা সমস্বরে “হ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁ” করতেই কচিদাদু শুরু করল নতুন গল্প।

•••• ভগবানের আশীর্বাদে বলীয়ান দানবরাজ বলি একসময় দখল করে নিল স্বর্গ মর্ত্য পাতাল। শুরু হল নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ। রাক্ষসদের আক্রোশ থেকে রক্ষা পেলেন না দেবতারাও। তাণ্ডব রোধ করতে দেবগুরু বৃহস্পতি পরামর্শ দিলেন ভগবান শ্রীবিষ্ণুকে।
বামনের ছদ্মবেশ ধারণ করলেন তিনি। তিন পা সমান জমি ভিক্ষা চাইলেন বলি রাজের কাছে। বলি তো তখন তিন ভুবনের অধিকারী। বামনের তিন পা আর কতটুকু জায়গা। ওইটুকু অক্লেশে দিয়ে দেওয়া যায়। মনে মনে ভাবে বলি। আর সম্মতি আদায় করে মনে মনে হাসেন শ্রীহরি।
দেখতে দেখতে নারায়ণ স্বরূপ ধারণ করেন। দুই পা দিয়ে স্বর্গ মর্ত্য দখল করলেন প্রভু। নাভি থেকে উদ্গত তৃতীয় পা রাখলেন বলি রাজের মাথায়। পাতাল প্রবেশ হল বলির। সেই থেকে পাতালের অন্ধকারেই হলো তার এবং তার দত্যি সাথিদের আবাস।
বলি কিন্তু ভিক্ষা দেওয়ার পূর্বেই চিনতে পেরেছিল বামনরূপী ভগবানকে। তবুও সে ফেরায়নি শ্রীবিষ্ণু-কে। তাঁর আশীর্বাদের মান রক্ষা করতে। এই আনুগত্যের পুরস্কার স্বরূপ করুণাময়ের আশীষ লাভ করল বলি। নারায়ণ বললেন;
প্রতি বছর অমাবস্যায় মায়ের শক্তিরূপের আরাধনার পূর্ব রাতে পুজো হবে রাজা বলির।
সেই থেকে বচ্ছরকার এই চতুর্দশী রাতে সকল সহচর বৃন্দকে নিয়ে পাতাল থেকে পৃথিবীতে আসে বলি রাজা। যেহেতু রাজার সাঙ্গপাঙ্গরা সবাই অশরীরী তাই এটি ভূত চতুর্দশী নামে খ্যাত।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress