ঐ ডাকছে আকাশ
সমর্পিতার আজ মাধ্যমিকের রেজাল্ট।
সমর্পিতা মামাবাড়িতে মানুষ— মামী এসে বলল—” কি রে পেঁচীর মত মুখ কেন”??
মামী দাদাকে বললাম– দাদা নেটে রেজাল্ট টা দেখে দিবি— দাদা বলল মোবাইলে গেম খেলছে।
তুমি একটু বলবে গো?
মামী বলে— ঠিক আছে স্কুলে গিয়ে জেনে নিস।
রসমর্পিতা বলে–তাহলে তোমার ফোনটা দেবে।
বন্ধুকে ফোন করে জেনে নেব।
মামী বলে—নারে মোবাইলে টাকা নেই। তোর রেজাল্ট কাকেই জানাবি??
সব তো শেষ করে বসে আছিস আর সেই পাঁচ বছর বয়স থেকে টানছি।
সমর্পিতা কাঁদো কাঁদো ভাবে বলে সেই বারোটায় স্কুল যাবো।
এতক্ষণ কি করব??
সমর্পিতা প্রায় কেঁদে বলে–এই দাদা বলবি কত পেয়েছি??
মামাতো দাদা আগেই দেখে নিয়েছিল- রেজাল্ট–বলে —-খুব ভাল ফল করেছিস—খুব ভাল হয়েছে রে সমু–৯৭:৮% পেয়েছিস।
ও স্কুলে যেতেই জানতে পারল পঞ্চম স্হান পেয়েছে। আনন্দে কেঁদে ফেলে।
মামী বলেছিল কাকে জানাবি রেজাল্ট ??কেন আমি জানি তো আমার কেউ নেই?
সব বন্ধুরা কত আনন্দ করছে।
এদিকে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে রয়েছে।সমর্পিতা ভাবে নির্ঘাত ঝড় বৃষ্টি হবে।আজ এত আনন্দের মাঝে ঝড়ের আসার কি ছিল!!!!
ও ঝড় তুমি জানো তো সমু ঝড়কে ভয় পায়।
সেদিনের মতো অসময়ে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে,মাথার উপরে —–
“ঐ ডাকছেআকাশ” ।অঝোরে বৃষ্টি।
সমর্পিতা একপাশে রেজাল্ট হাতে নিয়ে চুপটি করে ভাবে—এককালে সব ছিল—একটু মনে আছে —তখন পাঁচ বছর বয়স—কদিন ধরে একটানা বৃষ্টি—-সমু ওরফে সমর্পিতা পাশের বাড়িতে খেলছিল—- মা বাবা দাদু,ঠাম ও দাদা একসাথে শেষ—-বিদ্যুতের তার বাড়ির গেটে পড়েছিল।
তাই সবাই সবাইকে বাঁচাতে গিয়ে সবাই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তারপর আমাদের বিশাল বাড়িটা মামা ভাড়াটে বসিয়েছেন।সেই টাকায় হয়ত- — খাচ্ছি, থাকছি,
অভিভাবক পেয়েছি।
মামী সমুকে উটকো জঞ্জাল ভাবে না—— মাসান্তে মোটা টাকা হাতে পান— ওই কথায় কথায় শোনান কেউ নেই—- আরে তোমরা তো আছো গো– — আমিতো তোমাদের আপন মনে করি—–তোমরাও তো একটু আপন ভাবতে পারো।
সমর্পিতাকে বন্ধুরা বলে —এই যে ভালো মেয়ে কার কথা ভাবছিস??
দেখ তোর দাদা গেটের বাইরে তোর জন্য অপেক্ষা করছে।মামা ও মামী রেজাল্টে খুব খুশী।
দাদা আজ বাড়িতে বন্ধুদের খাওয়াবে—খুব ভাল ভাল গন্ধ বের হচ্ছে—আত্মীয়রা আসছে বাড়িতে—সমর্পিতা রেজাল্ট এনে ঘরে শুয়ে আছে।
মামি মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করে —অনেক বড় হ —-মামার মুখ উজ্জ্বল কর।
সন্ধ্যায় মামা সমর্পিতাকে সুন্দর জামা —একটা মোবাইল দেন—সে যে কি আনন্দ সমর্পিতা কাউকে বুঝাতে পারবে না।
মামী সমর্পিতাকে ওপরের হলঘরে ডাকে—সে গিয়ে দেখে তাকে নিয়েই এই অনুষ্ঠান—-
আনন্দে সমু কেঁদে ফেলে মামী কে ভুল করে মা ডেকে ওঠে—-মামী বলে আজ থেকে তুই আমায় মা বলেই ডাকবি—আজ থেকে আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে।
সমর্পিতা মা বলে মামীকে জড়িয়ে ধরে— মামী বলে তোর সাথে কঠোর না হলে তুই তোর বাবার এত টাকা সম্পত্তি দেখে তুই হয়তো নষ্ট হয়ে যেতিস—লেখাপড়া নষ্ট হয়ে যেত—আর তোর মামা দশ বছর ধরে যা বাড়ি ভাড়া পেয়েছে তা দিয়ে তোকে তোর দাদার মত রাজস্হান পাঠাব —-পড়াশুনা করে বড় হ মা—আমাদের দেখবি তো??
প্রস্তুত হও মা—এই সপ্তাহে আমরা রাজস্হান যাচ্ছি— একাদশ ক্লাস থেকে ওখানে পড়লে তোর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে সুবিধা হবে—এতদিন সমু মামীকে ভয় পেতো। আজ মা পেয়েও হারাবে।
এইভেবে সমু বলে ফেলে তুমি যাবে মা…মী।
না না সমু মা বলবি,আমি তোর মা।
সুন্দর পার্টি হল।তারপর আবার রাজস্হান…পড়াশুনা।
কে বলেছে সমর্পিতার কেউ নেই। ঐ ডাকছে আকাশ।অঝোরে বৃষ্টিপাত ।রনির আর ভয় করে না।ওর সবাই আছে ।এখন নূতন জগৎ— পড়াশুনা মামা…মা..দাদা…সব্বাই আছে।সমুকে মামার মুখ উজ্জ্বল করতেই হবে।
সমর্পিতা বলে ওঠে..”তাই তাই তাই মামাবাড়ি যায়…
মামাবাড়ি ভাড়ি মজা কিল চড় নাই।।মামী এল ঠ্যাঙা নিয়ে পালাই পালাই”।
মামীরা ভালই হয়—খুব একটা খারাপ হয় না…