Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » এক ডাকাবুকো মায়ের কথা || Samarpita Raha

এক ডাকাবুকো মায়ের কথা || Samarpita Raha

এই “তারা” ঘুম থেকে ওঠ সোনা।তোর দাদারা বকবে —-বলবে বৌদিরা কোন যত্ন করে না।
এক এক করে তিন বৌদি এসে ডাক দিয়ে যায়।সবার তো কাজ আছে ।সারাক্ষণ পিতৃ মাতৃহীন তারার জন্য বৌদিরা ব্যাকুল।পুচকি মেয়েটার সরল সিধা মুখটা দেখে সবার মায়া হতো।বৌদিরা তারাকে ওই এক বছর বয়স থেকে মানুষ করছে।

এখন তারার বয়স দশ।
তারারা তিন ভাই ও দুই বোন—-দাদারা ও দিদি বিবাহিত।
তারার যখন ছয় মাস তখন মা বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
আর একবছর যখন বয়স বাবা এক অজানা জ্বরে মারা যান।
তারার বড়দা তারার চেয়ে বাইশ,মেজদাএকুশ আর দিদি উনিশ বছরের বড়।
আগের দিনে ছেলে মেয়েদের ছোটতেই বিয়ে হত,—-তাই দেখা যেত শ্বাশুড়ি ও বৌমা হয়ত এক সঙ্গে পোয়াতি। পিসি,ভাইঝি বা মামা ,ভাগ্নে প্রায় সমবয়সি দেখা যেত।
এখন তো যুগ পরিবর্তন হচ্ছে—-জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বার হয়েছে।
“তারা”– প্রচুর দাসী ও বৌদিদের আদরে মানুষ।
তারা যে কি দুষ্টু তা হনুমানরাও জানত।একদিন তারা বাগান থেকে দাসীদের দিয়ে কচু তুলিয়ে বাড়ীর ছাদে রেখে দিয়েছিল ——কেননা হনুমান তার গাছের কলা খেয়ে নিয়েছে—-ব্যাস একদল হনুমান সেই কচু খেয়ে কি দাপাদাপি।
সারা বাড়ির লোক ভয়ে তটস্থ—বন্দুকে ফাঁকা আওয়াজ—-বাসনপত্র বাজিয়ে ওদের তাড়ান হয়—সেও ওই দশ বছরের তারার বুদ্ধি।

একদিন তারা তো ঘুমাচ্ছে বৌদিরা জানে।কিন্তু তারা তো বিছানায় বালিশ সাজিয়ে গঙ্গায় নাইতে গেছে—-খোঁজ করে ঘরে নিয়ে আসে বাড়ীর পরিচারিকারা।
তারা থাকত ভদ্রেশ্বরে।একসময় তো চন্দননগর ফরাসিদের রাজত্ব ছিল।একদিন ছোড়দার সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিল তারা— ডাকুরা তারার গায়ে এত গহনা দেখে তারাকে দাদার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়– –তারার বয়স ঐ এগার হবে—তারা ওদের বন্দুক ছিনিয়ে —-ওদের দিকে বন্দুক তাক করে ভড়া গঙ্গা পার হয়ে পালিয়ে আসে—–তারা বন্দুক চালাতেও পারত।

তারপর তারার তের বছর বয়সে বিবাহ হয়।কি দজ্জাল শ্বাশুড়ি—-বড়লোকের মেয়ে —-ছোট থেকে দাস দাসী নিয়ে বড় হয়।—সে ও সু গৃহিনী হয়।
তারা তিন মেয়ে কে পড়াশুনা শেখায়—নিজে তো ক্লাস নাইনে উঠতেই বিয়ে হয়—।দাদারা প্রায় জোর করেই বিয়ে দিয়েছিল। তারা—- হয়তো মাধ্যমিক দেয় নি—কিন্তু সংসারের সব কাজের মাঝে বড় মেয়ের সঙ্গে পড়াশুনা চালিয়ে যায়।
তারার বিয়ের পর সন্তান হয়ে যাবার পর ও ডাকাবুকো ছিল।
একদিন তারা তার দ্বিতল বাটীতে মেয়েদের নিয়ে ঘুমাচ্ছে—-ট্য়লেট করতে গিয়ে দেখে পাশের বাড়িতে ডাকাত—-উনি খিল খুলে রাস্তায় বেড়িয়ে চিৎকার করে—-ডাকুরা তাড়া করলে— তারাএক ছুট্টে ঘরে এসে খিল দেয়।

হায় রে প্রতিবাদি তারার বাড়িতে—-ডাকাতরা পরের দিন ডাকাতি করতে আসে —- ডাকাতি করে পালাতে যাবে —-তখনই তারার ঘুম ভাঙে—– তারা তাদের সঙ্গে মারপিট করে বড় মেয়ের গলার চেন অাধা উদ্ধার করে।

এইভাবে তারা নানান প্রতিকূলতা অতিক্রান্ত করে মেয়েদের পড়াশুনা শিখিয়ে সুপাত্রস্হ করে নিজেই তারাদের দেশে পালিয়ে যায়।

আমার মা সোনা মা…আমার চোখে ঘুম আসে না মা।….মা মাগো মা আমি এলাম তোমার কোলে….তুমি আমার মা ,আমি তোমার মেয়ে….মার স্নেহ কাকে বলে জানি না….ও তোতা পাখি রে,শিকল খুলে দে না আমায় মায়ের কাছে চলে যায়… কত তারার গান রেকর্ডিং এ ভেসে আসে কিন্তু সেই দুষ্টু ডানপিটে মা আর আসে না— আজ নিজেই এক মেঘে ঢাকা তারা….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress