পঞ্চবাণ
আমি মৌ।আমি ছোট থেকে রান্নাবাটি,পুতুল নিয়ে খেলতাম।
প্রতি সপ্তাহে পুতুলের বিয়ে দিতাম।বিয়ে হত পাশের বাড়ির বন্ধুর পূতুলের সঙ্গে।ব্যাস পুতুল বিয়ে করে বন্ধুর বাড়ি চলে যেত।কারণ আমার মেয়ে পুতুল।বন্ধুর ছেলে পুতুল।তারপর আমার কান্না শুরু হতো।আমার পুতুল কেন বন্ধুর বাড়ি থাকবে।
তারপর পুতুল নিয়ে চলে আসতাম।
মেয়ে ছিলাম তো ,বিয়ে বিয়ে খেলা ভালো বাসতাম।তারপর বড়পিসির মেয়ের বিয়েতে নিতকন্যে সাজি।সবাই বলছিল আরে বৌয়ের সাথে একটা বৌ বাড়তি এসেছে।আমার তখন বয়স পাঁচ।যে নিতবর সেজেছিল,তার মা আমার মা কে বলেছিল।আপনার মেয়েকে এখন থেকেই বৌ করব বলে বলে রাখলাম।মা কি বলেছিল আমার জানা নেই।
তারপর সাত বছর বয়সে মামাতো দিদির সাথে নিত কন্যে হয়ে যায়।তারা ও নাকি মা কে বলেছিলেন আপনার মেয়েকে বড় হলে বৌমা বানাব।
আবার আট বছর বয়সে নিত কন্যে হয় আমার বড় জেঠুর মেয়ের বিয়েতে।
পরবর্তী এগারো বছর বয়সে নিত কন্যে সাজি আমার ছোট পিসির মেয়ের বিয়েতে।
পরবর্তী হল ষোলো বছর বয়সে নিজের দিদির বিয়েতে।এবার বরের সাথে যে আসে সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।প্রত্যেকের মা কে মা কথা দিয়েছেন আমাকে তাদের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেবেন।মা ভেবেছেন সবাই বলে ,কার ছেলে ও মেয়ে বড় হয়ে কেমন হবে কে জানে?
আমার বি এস সি পরীক্ষার পর আমার বিয়ে দেবার জন্য খবরের কাগজে পাত্রী চাই বলে বার হয়।ঐ পাঁচ বাড়ির নিতবরের মা রা ফোন তুলে মা কে জানায়।
কি হল??
“মেয়ের বিয়ে দেবে ভেবেছ,তা আমাদের তো কথা ছিল,বড় হয়ে তোমার মেয়ের সাথে বিয়ে দেব”।
মা বলে ও তাই নাকি—-তা ছোট বেলায় তো অনেক কথায় হয়—–সবাই কি মনে রাখে-???
পরের দিন পাঁচ পরিবার চলে আসে।পাঁচ জনে ইঞ্জিনিয়ার এই আর কি কোনো পরিবার এক সাথে আসে নি।
এদিকে মা পাঁচটা রত্ন দেখে মন স্হির করতে পারছে না।
কার সাথে দেবে???
দিদি ও জামাইবাবু ঘুরে ঘুরে সব ছেলের সাথেই আলাপ করে।ওরাও বলে পাঁচ জনেই ভালো।
জামাইবাবু মজা করে বলে দ্রৌপদীর তো পাঁচটা বর ছিল। তুমি পাঁচ জনকে বিয়ে করে ফেলো।
আমি বললাম আমার পছন্দে আমি বিয়ে করব।আমার কলেজের স্যার আমাকে এই বিপদ থেকে মুক্তি দিলেন।আমি ওনার কাছে কেমিস্ট্রি পড়তাম।উনি আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দেন।ব্যাস বিয়ে হয়ে যায়
“মিলন হবে কতদিনে
মনের মানুষের সনে”
বিয়েতে পাঁচ নিতবর আসে।তারা ভাবে আমি বাড়িতে জানায় নি,আমার স্যারের সঙ্গে প্রেম ছিল।।আমি ছাতনা তলায় বরকে বলেছিলাম এখনো রাজি তো বিয়ে করতে—দেখো পঞ্চ নিতবর দাঁড়িয়ে আছে।কেমিস্ট্রি স্যার হো হো করে হেসে ওঠে। ঠাকুর মশায় ভাবেন নুতন বৌ কি বলল বরের এত জোরে হাসি পেল।