উপস্থিত বুদ্ধি
হঠাৎ অসময়ে কলিংবেলের আওয়াজ।ফ্ল্যাটে পঞ্চাশ বছরের বৃদ্ধা ও ষাট বছরের বৃদ্ধ …তারা নিঃসন্তান…বুড়ি বলে তুমি খোলো আর বুড়ো বলে তুমি…এই করতে করতে পাঁচ মিনিট এগিয়ে গেছে।
বুড়ি বলে আমার ওয়াটস অ্যাপে একজন পোস্ট করেছেন–বুড়ো বলে কি?ব্যাঙ্গালোরে ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রী সুধা মূর্তিজি নাকি… সবজি বিক্রি করেন… ভেঙ্কটেশ মন্দিরের কাছে…অবশ্য বছরে একদিন…কারণ নাকি দম্ভ কমানোর
জন্য….সত্যি ভাবা যায় না।
তা তুমি একটু দরজা খুলে দেখো না ..দেখবে এক্ষুণি তুমিও ভাইরাল হয়ে যাবে।
কিসের ভাইরাল?
এই আমার গিন্নি কি ভালো ,আমাকে নড়তেই দেয় না।
বুড়ো বলে আমি খাটের পিছনে লুকোচ্ছি….মনে হচ্ছে পাশের ফ্ল্যাটের ববি এসেছে ..আজ সকালে বাজার থেকে ফেরার সময় দেখা হয়েছিল..বলল দাদু চারটের সময় আসব দাবা খেলতে।
জগৎবাবু মোবাইল সাইলেন্ট করে… খাটের পিছনে লুকিয়ে পড়েন…হাতের চাপে ভিডিও
অন হয়ে যায়।
সোমা দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে সাত-আট জন ছেলে ঢুকে… কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে…. আলমারির চাবি চায়…সবার মুখে মাস্ক।কি অদ্ভুত সবারটা গোলাপি
একজন সাদা ফর্সা…একজনের কটা চোখ…একজনের বড় চুল ঝুটি বাঁধা…দুজন খুব কালো …একজন খুব লম্বা।
জগৎবাবু ঘেমে স্নান..বের হতে পারছেন
না…আর দেখতে পেলে গুলি করবে নিশ্চয়।আলমারিতে এক লাখ টাকা ছিল।লকডাউন…করোনা …এইসব কারণে পরশু ব্যাঙ্ক থেকে তুলেছিলেন।
ডাকাতরা আলমারিতে পায় তিনশ টাকা….একটি রুপোর চামচ।
“এই বুড়ি কাল তোর বুড়ো ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলেছিল কোথায়”?
সোমা বলে …কি বলব বাবারা আমার বুড়োর আরেকটা বৌ আছে… তাকে দিয়েছে মনে হয়।
দেখছ তো ঘরে কিছু নেই।তারপর ফ্রিজ খুলে একটা করে আপেল নিয়ে বলে…চললাম।
বুড়োকে বেঁধে রাখতে পারো না…বুড়ি বলে তোমরা ফলগুলো ধুয়ে খাও..ও আমাদের করোনা হবে না।
বুড়ি হঠাৎ বলে ওঠে তোমাদেরকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে!!!
ব্যাস একজন রিভলবার ঠেকায়।তখন বেলের আওয়াজ।ও দাদু দরজা খোলো।সাত ডাকাত দরজা খুলে বেড়িয়ে যায়।
জগৎ পুলিশকে খবর দেয়।ভাবছে টাকাটা গেলো।সোমা আলমারি খুলতেই বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছিল।
“সবার মুখে মাস্ক”–পুলিশ সব লিখে নিচ্ছিল…হঠাৎ ববি বলে দাদু তোমার ফোনে ঐ ডাকাতদের ছবি…তারপর পুলিশকে পুরো ভিডিও পাঠিয়ে দেয়…সবাইকে পুলিশ ধরে।
আরো বেশ কয়েক বাড়ি ওরা ডাকাতি করে,একজনকে গুলিও করেছিল।
জগৎবাবুর ভিডিও ডাকাতদের ধরতে সুবিধা করে।
জগৎবাবু, স্ত্রীকে বলে গিন্নি তোমাকে ভিডিওতে দেখো।”কী স্মার্ট তুমি”!
গিন্নি বলে ডিলিট করো ভিডিও,আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।ডাকাতরা জানতে পারে ,তাহলে পরে জেল থেকে বার হলে আমাদের শেষ করে দেবে।জগৎবাবু বলেন হ্যাঁ এইমাত্র পুলিশ ফোন করে তাই বলল।ব্যাপারটা যেন নিজেদের মধ্যে থাকে।
এই মুখোশের বদলে ওরা মাস্ক পরে এসে খুব ভুল করেছে।নিজেদের পায়ে কুড়ুল মেরেছে।লকডাউনের ফলে ডাকাত সংখ্যা ও বাড়ছে।পেট চালানোর জন্য এইসব অসৎ পথ অবলম্বন একদম উচিত নয়।লকডাউনে সবাই সঞ্চিত পুঁজি ভেঙে খাচ্ছে।এইরকম লুটপাট একদম উচিত নয়।