Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সন্তান || Samarpita Raha

সন্তান || Samarpita Raha

আমি একটা লাল বেনারসী পরে বাবা বরণ করছি।কেউ একজন বললেন বরের গাড়ির চাকায় জল দিস।সাধারণত মা জামাই বরণ করে।কিন্তু আজ যে আমার মায়ের বিয়ে। মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়েটা দিচ্ছি আমি আর আমার ভাই রবি। আর যার সাথে বিয়ে হচ্ছে তিনি ভায়ের ডাক্তার জীবনের পথপ্রদর্শক ডক্টর সুবল রায়।।যার দয়ায় ভাই ভালো ডাক্তার হতে পেরেছে।

আমাদের বাবা হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে বিনা নোটিশে মারা যান তখন আমি উচ্চ মাধ্যমিক ও ভাই নবম শ্রেণির ছাত্র।মায়ের বয়স আটত্রিশ।মা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা।বাবা ব‍্যবসা করতেন।কোনো কারণে ব‍্যবসার চরম ক্ষতি ।ব‍্যস ঐ আঘাত সহ‍্য করতে না পেরে বাবা চুয়াল্লিশে চলে যান।

বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে গোটা পৃথিবীটা আমরা নতুন করে চেনা শুরু করি।প্রতিদিন আমাদের বয়স একদিনের পরিবর্তে এক বছর করে বাড়ছিল।আমাদের বড় হতেই হবে।মায়ের কষ্ট লাঘব করতে হবে।আত্মীয়রা সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।
মা সারাদিন স্কুল,টিউশনি,ঘরের কাজ করে দিন অতিবাহিত করছিলেন।বাবা যে মায়ের মাথায় বিরাট বোঝা চাপিয়ে দিয়ে গেছিলেন।
আমি উচ্চমাধ্যমিকে স্টার পেয়ে পাশ করে জুলজিতে অনার্স নিয়ে কলেজে পড়ি। রবি মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকে রীতিমতো র‍্যাঙ্ক করে ডাক্তারীতে ভর্তি হয়।

আমাদের কি সুন্দর সাজানো গোছানো সংসার ছিল।
বাবা রোজ সকালে কাজে যেতেন, আমরা স্কুলে যেতাম আর মা স্কুলে গিয়েও গোটা সংসারটা সামলাতেন।
আমরা ছুটির দিনে সকালের জলখাবার একসাথে খেতাম। রাতের খাবার ও রোজ একসাথে খেতাম।বাবা টুক ক‍রে আমার পাতের বড়াভাজা তুলে নিতেন।তারপর খেতে বসে বাবার পিঠে দুমদুম করে মজা করে মারতাম।মা বকতেন আমাকে।ছিঃ মাম ভাই কি শিখবে।

সব কোথায় হারিয়ে গেল।বাবা তোমার অভাব প্রতি মুহূর্তে অনুভব করি।
আমরা আর একসাথে খেতে বসি না, একসাথে গল্প করিনা। কেউ আর আমাদের জন্য আইসক্রিম, চকলেট,নুতন জামা,গল্পের বই কিছুই কিনে আনে না।
বাবা না থাকলে সন্তানদের মাথার উপর সত্যি আকাশ ভেঙে পড়ে।

আমিও অনার্স গ্রাজুয়েট হয়ে স্টাফ সিলেকশন পরীক্ষা দিয়ে উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের দিদিমনি হয়। প্রচুর টিউশনি শুরু করি। ভায়ের ডাক্তারী পড়তে প্রচুর খরচ।মনে আছে ভাই বলেছিল দিদি বাস ভাড়া জমিয়ে একটি কঙ্কাল দুই বন্ধু ভাগ করে কিনেছি।

আমরাই ক্রমে হয়ে উঠলাম মায়ের শক্তি।আমার মাস ছয়েক হলো সম্বন্ধ করে ব‍্যাঙ্ক ম‍্যানেজারের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে।ভাই ও সুপ্রতিষ্ঠিত ডাক্তার।এখন অনেক আত্মীয় উঁকি মারছেন আমাদের সুখের সংসারে।
তখন কোথায় ছিল কাকুরা,মামা ,মাসিরা।

যে বয়সে রবির বাবার চোখে পৃথিবী দেখার কথা ও আমার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দেখার কথা ও মায়ের প্রিয় মানুষের কাছে চরম ভালোবাসা পাবার কথা ।তিনি শূন‍্য সিঁথিতে গোপনে চোখের জল ফেলতেন।

আজ বিবাহিত জীবনে গিয়ে বুঝতে শিখেছি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কি।মার জন‍্য নতুন করে কষ্ট পেতে দেখে জামাই বলে তোমার ভায়ের স‍্যারের সঙ্গে বিয়ে দিই ।স‍্যারতো তোমাদের সন্তানের মতো ভালোবাসেন।তাছাড়া উনিতো অবিবাহিত।

কি যে বলো মার পঞ্চাশ হবে একমাস বাদে।
এই বয়সে মায়ের বিয়ে!!!
এই যে তোমার ভাই এম এস করতে লন্ডন যাবে।তুমি ও শ্বশুরবাড়ি।ভেবে দেখেছ মায়ের কি হবে!!

মাকে জামাই অনেক বোঝায়।মা বিয়েতে রাজি ছিলেন না। ওই সমাজের ভয়। সেদিন মাকে বুঝিয়েছিলাম আমাদের ও বাবার প্রয়োজন।তাছাড়া আমার শ্বশুর – শ্বাশুড়ি ও নেই।

স‍্যারকে আমরা বলতেই উনি বহুকষ্টে রাজি হন।তবে শর্ত দিয়েছি আমরাই যেন স‍্যারের ছেলে মেয়ে থাকি।তখন উনি আমাদের মাথায় গাট্টা মেরে বলেন ..বাবা কিন্তু ভালো বাসবে না তার সঙ্গে দুষ্টুমি করলে এরকম গাট্টা ও পড়বে।

হ্যাঁ, আজ আমার মায়ের বিয়ে পুরো নিয়ম করে দিয়েছি। আমরা খুব খুশি। রবি ,আমার কর্তা, নতুন বাবা আর মায়ের সাথে আমি সেলফি তুলতে ব‍্যস্ত হয়ে পড়ি।দেখি আমাদের মা আনন্দে বা কষ্টে চোখের জল মুছছেন।সেটা আর জিজ্ঞেস করিনি।
তবে আমার মায়ের পদবী পাল্টে গেছে ভাই আফশোস করে।দিদি সরকার , মা রায় আর ভাই দত্ত।এই নিয়ে বেশ হাসাহাসি হয়।
মা -বাবা খুব ভালো আছেন।আমরাও তাই ভালো থাকব।।
গুণীজনদের মুখে শুনেছি
যম জামাই ,ভাগনা
কেউ হয়না আপনা।
এক্ষেত্রে জামাই অবশ্যই ছেলের কাজ করেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress