Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

আজ থেকে দশবছর আগে ….বিয়ে হয় আমার…..শ্বশুর ও শাশুড়ির নয়নের মনি ছিলাম।
আমাকে ও ননদকে দেখলে সবাই ভাবত দুই বোন।
ননদ বিয়ের পর আমাকে বলেছিল বৌদি আমি একজনকে ভালোবাসি…..আমি বললাম তোর দাদাকে বলব …..ও বলেছিল একদম নয়….ছেলেটি পার্টি করে…দাদার পছন্দ নয়।
আমি বলি …তাহলে মিশবি না…যখন দাদার অপছন্দ ।
জানো বৌদি ওর প্রচুর টাকা।
লেখাপড়া কি?
ঐ গ্রাজুয়েট।
চাকরি কোথায় করে?
ওরা পার্টির ছেলে,যেখানে বলবে চাকরি হবে।
আমি বলি …আবার ঐ পার্টি হেরে গেলে আবার নুতন দল আসবে।টাকার জন‍্য বিয়ে করিস না ।আসল হলো বংশ মর্যাদা।
আরও অনেক উপদেশ দিই ননদকে।

ননদ সব ঐ ছেলেটাকে লাগাবে কে জানে?
ওর দাদা ও বাবা এরপর একদিন খুব বকাবকি করে।ননদ ভাবে আমি লাগিয়েছি।তখন তো প্রেমের নেশা।

একদিন কলেজ থেকে ফিরছি,হঠাৎ দেখি কতকগুলি ছেলে আমার ননদকে টানাটানি করছে…আমি এগিয়ে যায়….ওদের একটা লাঠি নিয়ে সবাইকে এলোপাথাড়ি মারতে থাকি।তারপর পুলিশ আসে।আমাকে জেড়া করার জন্য নিয়ে যায়…সবাইকে অ্যারেষ্ট করে।

সত্যি আপনি দশভূজার মতো ননদকে রক্ষার জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
আপনারতো বিপদ হতে পারত।কলেজে পড়েন …অল্প বয়স।বাড়িতেও কি দশভুজার মতো সংসার সামলাচ্ছেন??
আমি হেসে বলি।ওটা শ্বাশুড়ি মা সামলান।দশভুজার একদিন দেখলেন বলে ভাবছেন আমি প্রকৃতপক্ষে দশভুজা।ঘর বাইরে সামলাচ্ছি।ঐটা পারিনা কারণ এখন আমি ছাত্রী।
থানা যাবার আগেই আমি ননদের খোঁজ করেছিলাম …ননদের দেখা পায়নি …তারপর ভেবেছিলাম নিশ্চয় বাড়ি গিয়ে দাদাকে বলেছে…..সেদিন রাত সাড়ে আটটায় বাড়িতে ঢুকি।
থমথমে পরিবেশ।বর বলল সারা রাত কলেজে থেকে আসলে না কেন?
আর ননদ ও বলে এত রাত অবধি কোথায় আড্ডা দিচ্ছেলে।
আমি অবাক হয়ে বলি…আরে তুই তোর দাদাকে বলিস নি?
কি বলিনি বৌদি!
আজ তোর জন্য আমার দেরী হলো।
বর বলে কি বলছ?
ও তো সন্ধ্যা থেকে বাড়িতে।
জানো ওকে বাঁচাতে গিয়ে আমাকে মারপিট করতে হয়েছে।পুলিশ ঐ গুন্ডাদের সবাইকে আরেষ্ট করেছে।
কেউ বিশ্বাস করল না ঘটনাটা।
উল্টে আমার দোষ হলো।

দশভুজার একদিন মারপিট দেখে অনেকেই মারকুটে বৌদি যাচ্ছে আওয়াজ দিত।এরপর একদিন ট‍্যাক্সি করে কলেজ থেকে ফিরছিলাম…তাকিয়ে দেখি একটা গাড়ি দূর্ঘটনায় একটি মেয়ে ছটফট করছে…ট‍্যাক্সি ড্রাইভার ও খুব সাহায্যকারি।আমরা দুজনে মিলে হাসপাতালে ভর্তি করায়..পুলিশ ওর গাড়ি থানায় নিয়ে যায়…মেয়েটিকে রক্ত ও দিই আমি।এমনকি
ওই মেয়েটির ফোন থেকে মেয়েটির বাড়ি ফোন করি।ভাগ্য ভালো ফোনটা লক ছিল না।বাড়ি থেকে মেয়েটির বাবা ও মা আসেন।আমাকে অনেক আদর করে মেয়ে পাতায়।

আমি বাড়িতে একটি ফোন করব দেখি আমার বাবা ও বরের একশ টা মিস কল।ফোন সাইলেন্টে এ ছিল।
আমাকে রক্তাক্ত দেখে যা তা ভেবে …চরিত্র হীন বলে তাড়িয়ে দিল।এমনকি বাপের বাড়ি থেকে বলে তোমার জন্য আমার মেয়ের বিয়ে আটকে যাবে।ধর্ষিতাদের সমাজে স্হান নেই।

কেউ বুঝল না ..এ রক্ত ঐ দুর্ঘটনায় আক্রান্ত মেয়ের রক্ত।যাক তাদের বাড়িতে আছি আমি ..সাড়ে সাত বছর ধরে আছি।সাত বছরের ছেলের কথা কারর জানা ছিল না।আমার তিনবছর সংসার করা হয়েছিল।আমার নুতন বাবা ও মা …অনেক করে শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা চাইলেও দিই নি।

আজ বোনের বিবাহ দেবেন বলে নতুন বাবা সম্বন্ধ দেখছেন।ছেলের বাড়ির লোকজন এসেছে।
আমার ছেলেবাবুল হঠাৎ বলে মা মাসীকে দেখতে এসেছে ঐ…. লোকটা।
আমি বলি কোন লোকটা?
আরে তোমার কাছে যার পাসপোর্ট ছবি।
দরজার ফাঁক দিয়ে দেখি বাবুলের বাবার সাথে বোনের সম্বন্ধ..ননদ ও ননদাই এসেছে….শ্বশুর,শাশুড়ি ও এসেছেন….
আমি নুতন বাবাকে বলি ….বোনের সাথে ঐ বয়স্ক ছেলের বিয়ে দেবে?
তাছাড়া উনি তো বিবাহিত!!!
নতুন বাবা বলে তূই চিনিস ওনাদের??
হ‍্যাঁ বাবুলের বাবা উনি।
বাবা পাত্রপক্ষকে সোজা জানান এই সম্বন্ধ হতে পারে না।তুমি তো বিবাহিত।তোমার ডিভোর্স তো হয় নি।তোমার একটি সাতবছরের ছেলে আছে।
আরে হ‍্যাঁ মেশোমশাই আমার নামমাত্র বিয়ে হয়েছিল।তবে আমার সন্তান নেই।
এমন সময় আমি চা নিয়ে সবাইকে দিই।সবাই অবাক হয়।বাবা বলেন আমার মেয়েকে এক দুর্ঘটনায় বাঁচাতে গিয়ে ও শ্বশুরবাড়ি হারিয়েছে।এমন সময় বাবুল এসে বলে মা কাল পরীক্ষা চলো পড়াতে চলো।
নুতন বাবা ও মা বলে বাবুল তোমার বাবা উনি।বাবুল দুর থেকে হেসে চলে যায়।তখন বাবুল বলে দাদু আমার মা হল সব।
বাবুলের বাবা আমাকে বলে ফিরে চলো।ননদ ও বলে বৌদি ফিরে চলো।আমিও স্বীকার করছি আমাকে বাঁচানোর জন্য তুমি মারপিট করে ছিলে।
বাবুলকে বলি চলো বাবুল পড়াশুনা করে নাও।
আরে হ‍্যাঁ ,আপনি বিয়ে করতে যাচ্ছেন…তাহলে আগের বৌকে ভুলে গেছেন।আপনি ডিভোর্স ফাইল করুন।আমিআপনাকে মুক্তি দিয়ে দেব।

তখন জানালার ফাঁক দিয়ে দূরের কাশের বনের হিল্লোল দেখে মা দুর্গার মতো আমার মনে নারীশক্তি জাগরিত হয়েছিল।আমি ও বাবুল ভালো আছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress