Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পুরানো সেই দিনের কথা || Samarpita Raha

পুরানো সেই দিনের কথা || Samarpita Raha

এই দিকটা..আরে হচ্ছে না..আরেকটু..আরেকটু ডান পাশে যাও।আরে তুমি ডান বাম কিছুই বোঝো না ..
ধুস হচ্ছে না!!
কি কুক্ষণে যে তোমার সাথে বিয়ে করেছিলাম।একটু পিটটা চুলকাতেও পারো না।

ইস বিয়ে করে উনি আমাকে যেন ধন‍্য করেছেন।আর উনি বিয়ে না করলে অন‍্যত্র বিয়ে হতো না বুঝি!
সংসারের এত খাঁটুনির পর এখানে চুলকাও ..ওখানে চুলকাও।তার উপর লম্বা চওড়া ভাষণ।
শোনো এবার থেকে যখন পিটে মশা কামড়াবে..গরুর মতো দেওয়ালে পিট টা ঘষে নেবে।
কি করে এই চুলকানি বুড়োর সাথে পনের বছর কাটালাম ঈশ্বর জানেন!!

উফ বাবা এতক্ষণে আরাম হলো ।রাগ করো কেন গিন্নী?
পোকামাকড়গুলো আর কামড়ানোর জায়গা পায় না।হাত যাবে না ..ঠিক সেখানেই কামড়াবে।

শোন কর্তা..কাউকে দিয়ে কাজ করাবে যখন ..মুখে মধু দিয়ে কথা বলতে হয়।আমি তোমার সব মুখ ঝামটা সহ‍্য করছি।তোমার পুত্রবধূ কিন্তু এইসব সহ‍্য করবে না।

এরপর আমি যখন চোখ বুঝব ..তখন বুঝবে…কত ধানে কত চাল!
ছেলের বৌ তখন দেবে ঘাড় মটকিয়ে।..খিটখিটে বুড়ো বলবে।

ঠিক আছে এত কথা বলার কি আছে …যাবার আগে মনে করে একটা প্লাস্টিকের হাত কিনে দিয়ে যেও।

যাবার আগে মানে!
কি বলতে চাইছ..আমি তোমাকে ফেলে ডাং ডাং করে উপরে যাব ..উনি বিরিয়ানি ,কোপ্তা,চিংড়ির মালাইকারি খাবে!!
আর আমার শ্বাশুড়ি ও তাঁর শ্বাশুড়ি বেঁচে আছেন …আর বলে কিনা আমি চলে যাব!

এ বাবা তুমিতো বললে তুমি চলে গেলে আমি চোখে সর্ষে ফুল দেখব।

না আমি সর্ষে ফুল বলিনি।বলেছি কত ধানে কত চাল আমি চোখ বুঝলে হাড়ে হাড়ে টের পাবে।

বালাই সাট আমার বৌটা অকালে মরবে কেন? যমরাজের মৃতদেহ দরকার পড়লে ..বলব আমাকে নিয়ে যাও।

তারপর দুজনের অট্টহাসি।এই টিপ্পনী কাটা ..এই ভাব।

মনে পড়ে গিন্নী আমাদের সেই প্রথম দেখা…তুমি আলিপুরে বাস থেকে নেবে ..কলেজ খুঁজে পাচ্ছিলে না।কাঁদ কাঁদে ভাবে আমাকে বললে একটু শুনবেন–বিহারীলাল কলেজটা কোনদিকে বলবেন!!!
সেই সুমধুর গলা শুনেই আমি প্রেমে পড়ে রোজ কলেজ গেটে অপেক্ষা ক‍রতে করতে… অবশেষে তিনবছর পর ফাল্গুন মাসে আমাদের .বিবাহ।
বাসর রাতের কথা মনে পড়ে গিন্নী?

মনে পড়বে না ..তোমার একটা বন্ধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐ কি যেন কবিতাটা সুর করে বলেছিল।আমাদের কি হাসি।
হ‍্যাঁ মনে পড়েছে–ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল/ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল।
গানের তালে টেনে টেনে বলছিল।

আচ্ছা সোমা বাসর রাতে তুমি একটা গান করেছিলে ..সেটা মনে আছে?

হ‍্যাঁ ঐ কি জান কথাগুলো সব ভুলে গেছি।
ফাগুন রাত বলে গেল চুপিসারে অভিসারে যায়…তবে গানটি তো তোমার বন্ধু তৎক্ষণাৎ লিখে গাইতে দিল।কি রোমান্টিক কথা লেখা ছিল..কিন্তু আমি গুনগুন করতে করতে বেশ গেয়েছিলাম।তোমার বন্ধুরা খুব প্রসংশা করেছিল।

আচ্ছা বিয়ের আগের কি কি মনে আছে শুনি!

তখন কর্তামশায় তুমি আলিপুর কোর্টে প্রাকটিস করতে…কোর্ট চত্বর থেকে কলেজ চত্বরে বেশি থাকতে।তারপর রোজ দেখতে দেখতে অভ‍্যাস হয়ে গেছিল।যেদিন থাকতে না মন বেশ উসখুস করত।জজ সাহেব হলে তারপর রাজি হয়েছিলাম।বাবা মা হীরের টুকরো ছেলে পেয়ে ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে দিলেন।

তোমার মিষ্টি ,সুরেলা গলা শুনে সত‍্যি খুব ভালো লেগেছিল।

তাহলে এই গলা কর্কশ লাগে কেন চাঁদু??

আরে আজতো ঐ মশাটার দোষ।
বুঝলে শুভমের মা …বিকৃত করিয়া মুখ চুলকাইতে বড় সুখ।চুলকানি এমন জিনিস …স্বামী স্ত্রীর বন্ধন ঢিলা করে দিতে পারে।

যাইগো মাছের ঝোলটা এবার শুকিয়ে যাবে।তুমিতো আবার ঝোল ঝোল খেতে ভালোবাসো।

সত‍্যি আমার বৌটা খুব ভালো।বর যে শুকনা শুকনো খেতে পারে না …সব খেয়াল আছে।

আমাদের স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে রোজ কিছু না কিছু নিয়ে খুনসুটি হবেই।ছেলে বলেছে নাহলে ওর বাবা ও মার নাকি ভাত হজম হবে না।

হঠাৎ একটা মশা কানের কাছে পুনপুন শব্দে গান গেয়ে যায়..
ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছে যে দান।বসন্তের দূত কুহু করে গান শোনায়…জানিয়ে যায় কি করে ভুললে আজগে তোমাদের সাতাশতম বিবাহবার্ষিকী।গুনগুন করে ঐ রাতের গানটি দু লাইন গেয়ে ফেলি..ফাগুন রাত বলে গেল চুপিসারে অভিসারে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress