Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নদী মাঠ জঙ্গলের কথকতা || Manisha Palmal

নদী মাঠ জঙ্গলের কথকতা || Manisha Palmal

তমাল—- কেউ বলে নদী কেউ বলে খাল! শালবনি গ্রামের মাঠের মাঝে ছোট্ট ঝোরা— তির তির করে বয়ে চলেছে পান্নাসবুজ মাঠের পাশ দিয়ে বাঁশ জঙ্গলকে সঙ্গী করে দূরে দিগন্তসীমায় জঙ্গলের বুক চিরে।
নদীর ঘুম ভাঙ্গে পাখিদের প্রভাতী ভোরাইএ। নদীর বুকের বেনাঘাসের জঙ্গলে তেলে মুনিয়া আর গাংশালিখ মজলিস জমায়। নদীর কুলেরঅশ্বথ্থের কচি পাতার ঝালরের আড়াল থেকে বেনেবউ উঁকি মারে। মিষ্টি “পিলো” “পিলো “ডাকে মায়াবী ভোর যেন মিঠাসে ভরে ওঠে। নদীর হাঁটুজলে নাল ফুল দোলে। নদীকূলে ভাট পিটালির জঙ্গলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মাতাল হাওয়া টা। শুরু হচ্ছে এক কর্মব্যস্ত সোনালী দিনের।
দূরে রাঙ্গা পথের বাঁকে তাল খেজুরের সারি। ভাবি মনোরম দৃশ্য। দূর থেকে ভেসে আসছে ঘুঘু দম্পতির একটানা দাম্পত্য কলহের সুর। কোদাল কাঁধে চাষী চলেছে সবজি খেতে। সূর্যমুখীর সোনালী হলুদে যেন সোনার বান ডেকেছে। সবজি তুলছে চাষী বউ। বাঁশ জঙ্গলে বুলবুলও শ্যামার ভিড়। দু-একটা কোকিলও পথ ভুল করে এসে জুটেছে ওখানে। ফুলে ফুলে ভরা শিরিষ গাছটা ওদের আড্ডাখানা। মিষ্টি গন্ধে বাতাস মদির। কর্মব্যস্ত নতুন দিন গড়িয়ে চলে।
কোথাও বা নদীর তীরে লোক দেবতার আটন। ছায়াসুনিবিড় বৃক্ষ বেষ্টনীতে বিশ্রামে থাকেন দেবতা। বড় অনাবিল সেই পরিবেশ। পোড়ামাটির ছলন স্তুপে রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি। নানা পাখির কলতানে আরাধনার মন্ত্র পাঠ করে প্রকৃতি। মৌমাছি ভ্রমর প্রজাপতি করে স্তব গান। বিশেষ বিশেষ পার্বণে কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে লোকদেবতার আটন। মঙ্গল অনুষ্ঠানের আনন্দ কোলাহল ধুপ ধুনা ফুলের সুবাসে ম ম করতে থাকে নদীতীর। বাতাস সেই সুবাস বয়ে নিয়ে চলে মাঠ পেরিয়ে দিগন্ত সীমায়। নদীর হাঁসুলী বাঁকের দু’পারেই বাঁশ বন। দক্ষিণা বায় বেনুবন এর মর্মর ধ্বনি শোনায় নদীকে। বেনে বউ দোয়েল শ্যামার মধুর স্বরে আমোদিত হয় তমাল তীর। বন তুলসীর উগ্র বুনো গন্ধ কেমন যেন আদিমতায় আবিল করে তোলে চরাচর কে। জলজ দামে পানকৌরি জলপিপি আড্ডা গাডে। নদী কুলের পাকুড় গাছের ডালে বসে মাছরাঙ্গা ধ্যান করে— হঠাৎ রংয়ের মিছিল তুলে ঝাঁপ দেয় জলে! চিলের তীক্ষ্ণ স্বরে দুপুরের নিস্তব্ধতা ভেংগে খান খান হয়ে যায়। ঘুঘু দম্পতির একঘেয়ে দাম্পত্য কলহেরসুরে নদীতীরের বাঁশবন হাসতে থাকে।
দূরে সবজি খেতে চাষী জলসেচ করে।
দূরে শাল জঙ্গলের বাতাসে ভেসে আসে মাদলে দ্রিম দ্রিম বোল— বাঁশিরায়জীর আটনে পুজো নিয়ে এসেছে কেউ। একদঙ্গল ছেলে নদী ঘাটেভিড় করেছে— স্নানের থেকেও বেশি জল ছোড়াছুড়িতে তাদের মন। স্নানার্থীদের কলকোলাহলে নদীঘাট মুখরিত। শিরিষ গাছ থেকে পাগলা কোকিলটা খালি ডেকে চলেছে। ধীরে ধীরে নদীঘাট জনশূন্য হয়ে ওঠে। আবার নদী মাঠের কথকতা শুরু হয়। চৈত্র দিনের দাবদাহে জ্বলতে থাকে চরাচর। দূর দিগন্ত সীমা থেকে চিলের তীক্ষ্ণ স্বর ভেসে আসে। বিবাগী দুপুর কুবোর কুব কুব ডাকে আরো উদাসী হয়। ধীরে ধীরে দিনমণি অস্তাচলগামী হন।
গোধূলির লালিমায় সারা চরাচর রেঙ্গে ওঠে। দূর শাল জঙ্গলের কচিপাতা র ঝালরে মহুয়ার গোলাপি পাতায় বেলাশেষের লালিমা ঝলমল করতে থাকে। তন্দ্রালসা সন্ধ্যার আঁচলে ঢাকা পডে নদীজল। শাল জঙ্গলে আলোড়ন তোলে দামাল মহাকালের দল। জঙ্গল লাগোয়া সবজি খেতে শুরু হয় তাদের উৎপাত। হুলা পার্টির তাডা খেয়ে আবার তারা জঙ্গলে ঢোকে। মশালের আলো ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় রাঙ্গা পথের বাঁকে। জল জঙ্গল মাঠ আবার নিস্তব্ধতার চাদরে মুখ ঢাকে।
আকাশে ফুটে ওঠে একটি দুটি তারা -=যেন তামসী তপস্বিনী জপমালার মোতি। নিশি টহলে বেরোনো পেঁচা দম্পতি এসে বসে নদীতটের অশ্বত্থের ডালে।
আকাশের চাঁদ গল্প শোনায় নদীকে——
শুরু হয় অন্য এক নিশি জাগর কাব্যের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress