চণ্ডী মঙ্গলের গল্প
দক্ষিণ পাটনে যাবে সাধু ধনপতি। গৃহে তার দুই পত্নী ….লহনা …খূল্লনা । খূল্লনা .অন্তস্বতা…ছ মাসের।ধনপতির মন উচাটন।এই সুসংবাদ সে শুন লো সমুদ্র যাত্রার দুঃ সময়ে!তার মনে হয় সপ্তডিঙ্গা ভাসিয়ে দিয়ে সে উজানি ন গরেই থেকে যায়…..কিন্তু রাজ আদেশ যে অলঙ্ঘ।
খূল্লনা র মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে । সাধু যাবে দক্ষিণ পাটনে . ….. তার কি দশা হবে? বিগত বছরে গৌড় পাটনে যাত্রার সময় সতীন লহনা ষড় করে তাকে বনে পাঠায় ”ছেলি রাখালি”তে। সাধু ফিরে দেখেন বেনে সমাজ তাঁকে একঘরে করেছে…তারপর???
”পানি ফনী _ঘৃতশলাকা_তুলা”…..কঠিন পরীক্ষায় দোষমুক্তি! পানি ….সরোবরে ডুবে স্বাসবলের পরীক্ষা।ফনী …কলসের বিষধরের মুখ থেকে কনক অঙ্গুরি নিয়ে আসা!উত্তপ্ত ঘৃতে হাতডুবিয়ে তুলেআনা কাঞ্চন ..পানি পুটে অগ্নি শলাকা ধারণ ….তুলাযন্ত্রেদোষ পরীক্ষা সব শেষে ”জৌঘরে”অগ্নি পরীক্ষা॥ সব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে খূল্লনা র কলঙ্কমোচন হয়েছে…..কিন্তু .এখন যে ও মা হতে চলেছে….তাইস্ত্রী ও ভাবী সন্তান কে ছেড়ে যেতে মন চায় না ॥
ধনপতি”জয়পত্র” লেখে__নৃপাদেশে পরবাসে যাই আমি…তোমার গর্ভ তখন ছয়মাস।যদি কন্যাহয় নাম দিয়ো শশীকলা…উত্তম ঘরেবরে তার বিবাহ দিও!পুত্র হলে নাম দিও শ্রীপতি….বিদ্যাচর্চার মধ্যে দিয়ে তার মতিটি কোর শোভন!বারো বছর হয়ে গেলে যদি না ফিরি….তাকে পাঠিও দক্
ষিণপাটনে !
সে যেন সব বন্দী শালা খূঁজে দেখে।
যেন সব বন্দী র নাম গোত্র জিজ্ঞাসা করে!সন্ধান করে কার বাম নাসায় আঁচিল ও বক্ষে ছয় তিল আছে।যার ললাটে আছে শিবপূজার প্রণতি চিহ্ন ।
অার এই নাও তিন নিদর্শন ….কেশবন্ধ বালা…সুমন্ত অঙ্গুরি…ও গাত্রের আঁচলা ……এই না ও সন্দেহ ভঞ্জন পত্র…..॥দু চোখে শ্রাবণধারা নিয়ে ফিরে চলে….খূল্লনা ….ধনপতির সোহাগীস্ত্রী॥
লহনা ও অশ্রুভেজা চোখে ধন পতির পাশে বসে…..তার একচোখে আনন্দ …অন্য চোখে দুঃ খ,,,ভৈরবী ওকীর্তিনাশার প্রবাহ । আনন্দ …দক্ষিনপাটনে .যে সম্পদ সাধু আনবে তার সিংহ ভাগের মালকিন তো ওই!আর সংসারের কতৃত্ব তো এখন তার ই । সতীন তো সাধুর জোরেই একাধিপত্য করতো. ..যেদিন থেকে এসেছে…সাধুর মন রাজ্যের আধিপত্য তো সতীন ই নিয়ে নিয়েছিলো॥সেই জ্বালায় জ্বলতে জ্বলতে মনে কূট ষড় রচে….গৌড় পাটনে র সময় !সতা কে চরম হেন স্তা করে! দুঃখ এই সাধু যেনে ফেলেছে এই ফন্দী………! এবার তাই ”জয়পত্র” লিখে গেছে….সতা যে গর্ভবতী…..এই কষ্ট…জ্বালা যে কুলকাঠের আঙ্গরা….ধিকি ধিকি জ্বলে আর পোড়া য় অন্তর॥
ভ্রমরাকূলে আজ উৎসব….সাধু ধনপতি চলেছে দক্ষিণ পাটনে …সপ্ত ডিঙা ভাসবে এবার…..মধুকর…দুর্গাবর..শঙ্খচূড় ..চন্দ্রপাল..ছোটমুঠি..গুয়ারেখি ও নাটশালা… এক সঙ্গে পাড়ি দেবে দক্ষিণপাটনে ….যেমন দিয়েছিলো ধন পতির পিতার আমলে !
নদী কূলের পাকুড় গাছ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে….ডালে বসা উলুক প্রশ্ন করে__:শ্বাস কেনো গো?
পাকুড় উত্তর দেয়_বড় মন পোড়া য় গো….অভাগীখুল্লনা র তরে।…গর্ভবতীর কপালে কী আছে মা চণ্ডী ই জানে ….গৌড় পাটনে অগ্নি পরীক্ষা…..দক্ষিণপাটনে কী?
জ্ঞানী উলুক উদাস চোখে চায়…..
ভ্রমরার জলস্রোত বয়ে চলে উজানি নগর ছেড়ে ….সাগর উদ্দেশে…।আউল বাতাসে কাঁপে মঙ্গলদীপের শিখা…শত এয়তির উলুধ্বনি …মঙ্গলারতি তে ভ্রমরা কূল উৎসব মুখর॥
ধীরে ধীরে নদী র বাঁকে মিলিয়ে যায় সপ্তডিঙা ……
নদী তীর ধীরে ধীরে নির্জন হয়ে আসে…. বাউল বাতাসটা তীর ছুঁয়ে বয়ে চলে বেনে বউ এর পিছে…..
বাতাসের ঝাপটায় দীপশিখা কেঁপে ওঠে…..কেঁপে ওঠে খূল্লনা র অন্তর…..আঁচল আড়ালে শিখাকে ঢাকে সে…মনে মনে প্রার্থনা করে__সাধু..নাইয়া…গাবর দের মঙ্গল করো মা….দক্ষিণপাটণ যেন সফল হয়!
সে প্রার্থনা আউল বাতাস নিয়ে চলে অনন্তের উদ্দেশ্যে……নীরব নদী তট প্রতীক্ষায় থাকে.. …॥