খুশির বার্তা
আমি পাঁচ তলার এক কামড়ার ঘরে একাকী বন্দি।আইসোলেশনে আছি।
দশ বছরের মেয়ে বাবা , ঠাকুমা, দাদুর সাথে চার তলায় আছে।
ভাগ্যিস এই ছোট ফ্ল্যাটটি শ্বশুর মশাই কিনেছিলেন।আসলে অনেক সময় শ্বশুর
শ্বাশুড়ির সামান্য কারণে পুরানো কাসুন্দি তুলে এক চোট ঝগড়া হয়। বেশ থমথমে পরিবেশ হয় । তারপর একটা জলের বোতল নিয়ে বাবা পাঁচ তলার ফ্ল্যাটে ছোটেন। আসলে কেউ কারর মুখ দেখবেন না।
ছোটবেলার মা – বাবাকে হারিয়েছি।তাই বেশ লাগত ওনাদের এরকম খুনসুটি পানা। নাতনি উপরে গিয়ে যেই বলে ও দাদান ঠাম্মার বাতের ব্যথা বেড়েছে!! দাদান উদভ্রান্তের মতো নিচ তলায় নেমে আসত।
মাঝে মাঝে বলতাম মা বুবলি কিন্তু মিথ্যা কথা বলতে শিখছে। হাহাহা.. না মা দুজনেই শিখছেন।
আজ আমি পাঁচ তলার ফ্ল্যাটে একা।কোয়ারেনটাইনে আছি। কদিন ধরে জ্বর ,পেটখারাপ কাশি।এখন দুর্বল । অক্সিজেনের লেভেল ও ঠিক। সামান্য স্পর্শ করেছে হয়ত ভাইরাস।রক্তের রিপোর্ট আসে নি।
সারাদিন গান শোনা আর গল্প , কবিতা লেখা।মেয়ের সাথে অনলাইনে পড়ানো। এমনকি মোবাইলে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়ানো।
আজ সারাদিন মেয়ের প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত বাবা ,দাদু, ঠাকুমা সবাই।মেয়ের কান্নাকাটি মাকে করে দিতে হবে।ভিডিও করে মেয়েকে বললাম তোমার ট্রপিক কি?” সুস্থ পৃথিবী”। আমি বললাম ঠাকুমা ও দাদু পেপার
খুঁটিয়ে পড়েন। ওনারা ভালো পারবেন।তাও বলে দিলাম।
সবাইকে বৃক্ষরোপণ রোপণ করতে হবে। অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে গেলে গাছ কাটা চলবে না। বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা না বাড়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়।নেট বন্ধ। টেবিলে বসে একটা গল্পের প্লট ভাবছিলাম।দুর্বল শরীরে ফুড়ফড়ে হাওয়া খুব ভালো লাগছিল। আমার মাথাটা টেবিলে ঝুঁকে যায়।সুদীর্ঘ ইউক্যালিপ্টাসের কিছু পাতা আমার টেবিলে এসে বলে তুমি অসুস্থ!!!
আমার মা ও অসুস্থ।
আমি জিজ্ঞেস করি তোমার মার নাম কি? খিলখিল করে হেসে উত্তর দেয় ধরিত্রী।সবাই আদর করে ধরা বলে।
আমি বললাম তোমার মার কি হয়েছে!!
বিবর্ন পত্রেরা খসখস করে শব্দ করে বলে তোমার যা হয়েছে আমার মার ও তাই হয়েছে। আমি জিগ্গেস করি নিশ্চয় সুদিন আসবে। তোমার মা সুস্থ হলেই আমরা সুস্থ হবো। আবার আগের মতো হেসে খেলে কাটাব। আমাদের জানো অসুখ করলে নানান ঔষধ খেয়ে ভালো হয়। তোমাদের ও ভালো করার চেষ্টা চলছে।
তুমি সুস্থ হলে পরিবারের আনন্দ। #হঠাৎ পৃথিবী সুস্থ হলে আমরা ধেই ধেই করে নাচব।বনে বাদাড়ে সর্বত্র মহানন্দে ঘুরে বেড়াবো।কথা দিচ্ছি অনেক অনেক গাছ পুঁতব। পাখির কুজন শুনব। ওখানে এখানে ছুটে যাব। যাদের বাড়িতে দুর্ঘটনা ঘটেছে ওখানে ছুটে যাব।বিপদে সাহায্য করতে পারি নি তাই এখন গিয়ে পাশে দাঁড়াবো।
শিশুদের বাইরে খেলতে পাঠাব।ওরা মুক্ত পৃথিবীর শ্বাস নিতে শিখুক। থমকে যাওয়া পৃথিবীতে যারা দৈনন্দিন কাজ করে টাকা পায়.. তারা ক্ষিধের জ্বালায় কাঁদছে। যে অসুস্থ পৃথিবীকে সুস্থ করার জন্য লকডাউন নেবার সিদ্ধান্ত তাতে ধরিত্রী বাঁচবে। মানুষের সহযোগিতায় ধরিত্রী বাঁচবে। ধরিত্রী বাঁচলে আমরাও বাঁচব।
মানুষে মানুষেতো পৃথিবীর রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
তাইতো পৃথিবীর বুকে কাঁদছে সমগ্র দেশ। কেউ ক্ষিদের জ্বালায় আর কেউ প্রিয়জন হারানোর জন্য।
ঝড়াপাতা শুনছ আমার ও অমলের মতো জীবন ভালো লাগছে না। আমার অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে কি.!!
.হে ঈশ্বর আমার শ্বাসকষ্ট কমিয়ে দাও।
হঠাৎ মোবাইল ফোনে
মেয়ের ফোন… মা তোমার নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। তোমার কিছুই হয় নি।নেমে এসো। হঠাৎ পৃথিবী সুস্থ হলে ঠিক আমার মেয়ের মতো সারা পৃথিবীর মানুষের এরকম আনন্দ হবে। ধরিত্রীর রিপোর্ট নেগেটিভ আসুক বিশ্ববাসীর কামনা। আমি ও গান গাইতে গাইতে পাঁচ তলা থেকে চার তলায় নামলাম।